প্রিয়তমা মিষ্টি...
আহমদ মেহেদী
প্রিয়তমা মিষ্টি,
শুরুতেই বসন্তের হলুদ ছোয়া ভালবাসা নিও। তোমার মিষ্টি ডাকনামটা শুধু আমিই জানতাম।এই নামে চিঠি লিখলে তুমি খুব খুশি হতে একদিন। তুমি কেমন আছ ? তোমার শরীর ও মন কেমন আছে তা আজ জানতে খুব ইচ্ছে করছে তের বছর পর তোমাকে চিঠি লিখছি ।শুনেছি তোমার দুজন ফুটফুটে মেয়ে আছে তারা কেমন আছে? তাদেরকে আমার আদর দিও কেমন। তুমিই একদিন চেয়েছিলে যেন ভালভাবে লেখাপড়া করে দেশ ও জনগনের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করি । বাবার দোকান পুড়ে যাবার কারনে এস.এস.সি পর ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। সংসারের হাল ধরতে একটি এনজিওতে কাজে যোগ দেই। এরপর কোনরকম ডিগ্রি পাশ করি। এইতো চলে যাচ্ছে আর কি । তুমি ত জানো বাবার সময়কার ব্যাবসায়ীরা আজ অনেকেই এই বাজারের বড়লোক। বাবার আদর্শ আর সুদহীন জীবন-যাপন বাবাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। বাবার সে আদর্শ নিজের মধ্যে লালন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বেতন যা পাই তা দিয়েই কোনরকম চলছি। বর্তমান পৃথিবীতে সৎভাবে বেঁচে থাকাটা একটু বেশিই কঠিন হয়ে গেছে। চারদিকে ক্ষমতা আর টাকার কম্বিনেশনে সমাজ ও দেশ দুলছে। বাবা যেটুকু করে গেছেন তার ছিটেফোটাও আমি করতে পারব কিনা জানিনা। আল্লাহ না করুক আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে কারো বড় ধরনের কোন রোগ হলে কারো কাছ থেকে ধার নেওয়া কিংবা বাবার জমি বেচা ছাড়া কোন উপায় নেই। যাইহোক শুধু নিজের কথাই বলছি । তোমার আম্মার কি অবস্থা এখন ? কলেজ জীবনে শুনেছি তিনি অসুস্থ্য । তার সাথে একদিন দেখা করিয়ে দেবে বলেছিলে একদিন । আর দেখা হলো না। রিফাতের কাছে শুনেছি তুমি নাকি ঢাকাই থাক। তার সাথে নাকি তোমার মাঝেমধ্যে কথা হয় ? যাইহোক জানতে তো পেরেছি অন্তত তোমার কথা ! আচ্ছা তোমার বাগানে কি এখনো শিউলী ফুটে ? তোমার ফ্ল্যাটের ছাদে কি বসন্তের জোসনারা আমার কথা একটিবারও মনে করিয়ে দেয় না? তোমার বিয়ের কথা মীমের কাছে শুনেছিলাম। জানো মীম আমাকে তোমার বিয়েতে মেহেদি পড়া হাতটাকে উচিয়ে দেখিয়ে বলেছিল- ‘মিষ্টির বিয়ে খেয়ে এলাম দাওয়াত পাসনি ?,
এখনো সে দৃশ্য আমার মনে হলে আমি খুব কষ্ট পাই ।প্রায় অন্ধকার এক সমাজে আমার জন্ম হলেও তোমার ,স্কুল-জীবনের সান্নিধ্য নিজেকে আলোময় স্বপ্নে বিভোর রাখতাম। অবশ্য ব্যাপারটা এতো সহজও ছিলোনা। আমার একজন বড়লোক আত্মীয়ের কারনে জীবনে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয় আমার । তাদের জীবনে অর্থ ছাড়া বাকি সবই মিছা। কিন্তু তখন আমার প্রেমের যৌবন চলছে । তোমাকে কাছে পাওয়ার স্বপ্নে আমি পরীক্ষায় একের পর এক ভাল রেজাল্ট করতে থাকি। বইয়ের ভাঁজে,নোটখাতার ভাঁজে তোমার চিঠি পেয়ে পড়ার টেবিলে নিজেকে নিজের সাথে হাসতে দেখিছিলাম একদিন ।চারদিকে মাদকের ছোবল,মারামারি –হানাহানি । এই পরিবেশে থেকেই আমি লেখাপড়া করেছি । তোমার ভালবাসা ছিলো বলেই তা থেকে দূরে থাকতে পেরেছি। তুমি পারতে কিন্তু একজন নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবনটাকে বদলে দিতে ! তুমি জানো এখনো তোমার দেখানো স্বপ্নের লালন করি । যে সমাজে কোন হানাহানি থাকবে না, মারামারি থাকবে না সে সমাজের মাস্টারপ্ল্যান এখনো আমার হৃদয়ে যত্নে তুলে রেখেছি। সেটা বাস্তবায়নের জন্যেও অর্থটা খুব দরকার। শিমুল বনে জোসনার হাট বসবে আমি সে হাটের ইজারাদার নিতে চাই কিন্তু চারদিক থেকে বাধা আসে। তুমি ভালবেসে যা দিয়ে গেছ আমাকে এজন্য তোমার কাছে আমি আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকব। এই ফাগুনের কোন রাতে একদিন চলে আসতে পারো না তোমার প্রটোকল ভেঙে ? হলুদ রঙের বোরকা পড়ে একদিন চলে আসো আমাকে একটু দেখতে একদিন তোমার মেহেদীকে না দেখলে যে অভিমান করতে সে অভিমানী অধিকার বলে। মরার আগে তোমাকে সাথে নিয়ে শিমুল বনে তোমার হাতটি ধরে কিছুক্ষন শুধু হাটতে চাই। পরপারেও আমি তোমাকেই শুধু চাইব আল্লাহর কাছে। ভালো থাক সবসময় । এই কামনা। নিজের যতœ নিও কেমন ।
ইতি,
তোমার রাগী রাজা ।