মহেশখালি বাঁকের জল রঙের
এক কিশোরের গল্প
খালিদ খলিল
খু বেশি লোকে চেনে না এই কিশোরকে। না চেনার কারণ- কিশোর ছেলেটির বসবাস এক নিভৃত পল্লীতে। কিন্তু প্রতিভা কখনোই সুপ্ত থাকে না। থাকে না বলেই এই কিশোর ইতোমধ্যে গুণিজনের নজর কেড়েছেন। যেমন কবি নির্মলেন্দু গুণ ছেলেটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কবি গুণ তাঁর বইয়ের একটি প্রচ্ছদে ছেলেটির আঁকা ছবি ব্যবহার করেছেন।
ছেলেটির নাম আর করিম। মানে রেজাউল করিম । কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার পুটিবিল্যা খুইশ্যামার পাড়ার বাসিন্দা। সবে তেইশ বছরের টগবগে তরুণ। নেশা ছবি আঁকা, গান করা। দু’মাধ্যমেই- বিশেষ করে ছবি আঁকায় সে এখন বিস্ময়! কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই আজ সে পুরোদস্তুর একজন চিত্রশিল্পী। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে হাশেম খানের আঁকা ছবি দেখে ছবি আঁকার নেশায় নাম লেখান করিম। সে থেকে গ্রামীণ প্রকৃতি আর গুণিজনের প্রতিকৃতি এঁকে চলেছেন। তাঁর ক্যানভাসে প্রকৃতির রূপ, রস, মাধুর্য ধরা দেয় জীবন্ত হয়ে। এখন পর্যন্ত প্রকৃতিই তাঁর ছবি আঁকার শিক্ষক । ইচ্ছে আছে চারুকলায় পড়ার ।
শুরু করেছিলাম কিশোর ছেলে করিম এর গল্প দিয়ে । এখন দেখা যাক তরুণ, মেধাবী ও পরিশ্রমী চিত্রকর করিমকে। শিল্পী করিমের সকালটা শুরু হয় প্রকৃতির বিছানো চাদরে বসে। যেখান থেকে প্রকৃতির সবটুকু রুপ রস সৌন্দর্য যেনো ছেঁকে তুলে আনতে চান তাঁর ক্যানভাসে। শিল্পী করিম এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, চারুশিল্পী না হলে কি হতেন? তাঁর সাফ জবাব- ‘আমি ছবিই আঁকতাম । আমাকে দিয়ে অন্য কিছু হবে না। ছবির মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই’।
উচ্চ মানের গুড়া রঞ্জকের সাথে এ্যারাবিক গাম ও গ্লিসারিন মিশিয়ে অর্থাৎ জল রঙে ছবি আঁকতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন করিম। চেষ্টা করেন প্রকৃতি আর মানুষের মাঝে নিজেকে সোপর্দ করতে। আকাশ, জল, কাদামাটি, অরণ্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সবুজের সমারোহ, মানুষের মুখ- এসবই তার আঁকার উপজীব্য। কাজের ক্ষেত্রে করিমের কাছে শূন্যতা খুবই অপছন্দের। তাই শিল্পীর চোখে, প্রকৃতির মাঝে যখন করিম শূন্যতা খুঁজে পান তা তিনি অপূর্ণ রাখেন না।
করিমের শিল্পকর্মের মাঝেই তাঁর স্বকীয়তা লক্ষণীয়। বিষয়বস্তুর নির্বাচন আর বৈচিত্র্যময় দর্শনের কারণে করিমের শিল্পকর্ম গুলো সহজেই মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আলো-ছায়ার খেলা, কখনো রোদ ঝলসানো দুপুর কিংবা শুভ্র রোদের প্রশান্তিময় রূপ, আবার প্রখর রোদের মধ্যেও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ফুটিয়ে তোলায় করিমের দিনরাত কেটে যায়, সারাবেলা।
চিত্রশিল্পী করিম শিল্পকলার ইতিহাসকে ঐশ্বর্যময় করে তুলবেন- এই আমাদের প্রত্যাশা।