ওগো পাহাড়ি মিষ্টি গ্রাম
ফজলে রাব্বী দ্বীন
ঝর্ণার কোলে হেসে ওঠো ওগো পাহাড়ি মিষ্টি গ্রাম
স্নিগ্ধ ভেলায় ফিরে আনো খেলায় শামুকের শৈশব;
ছিনিয়ে নাওনি তুমি পুষ্প প্রাণের সুগন্ধি সরোবর
কাচের দেয়ালে আঁকোনি কোনো শতাব্দীর বিদ্বেষ।
স্কুল পালানো মেঠোপথে সেই দস্যু ছেলের ভোঁদৌড়।
ঘন বাঁশঝাড় থেকে নেমে আসে তাই কবিতারা মোট
বনমালীর ঐ উদ্দামে হাসে সাঁঝের পুরনো দু’ঠোঁট।
ওগো প্রথম জোয়ারের গল্প বলা দুষ্টু শিশির দল
ভোরের খেয়ায় সবুজ ধুয়াও স্বচ্ছ পায়ের তালে
কুমড়ো-লাউয়ের বৃষ্টি হলে ইস্টিরা ভিড়ে উঠোন
চায়ের চুমুকে ভাগ্যঘুড়ি শেকড় ছেড়ে পালাবে কই?
বকুলের ডালে স্বপনের খেয়াল স্মৃতিটুকু রাজমনি!
যে শোভনের প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেনি দাঁড়কাক
তোমার কন্ঠে জ্যোৎস্না নিখিল হৃদয়-মনে ভরে থাক।
জলকাদা মাটি, চা বাগান আর শেষ বিকেলের ঘুড়ি
ওগো ফুলের গালে চুমু দেওয়া বাগানের প্রজাপতি
মেঘের বারান্দায় ধুলো পায়ে কালো দিয়েছে সাঁতার।
কাঁঠাল পাতার উদোম ছায়ায় নেচেছিল ঘাসফড়িং।
সেই ফাগুনের চকচকে রোদ ও সোনাঝরা মৌসুম
ভুলিয়ে দিয়েছে ঊষার তরী উচ্ছলতায় মাটির প্রাণ
দেখেছি বনে নাচে ময়ূর আর নবান্ন তে ধানের ঘ্রাণ।
দুঃখের দ্বীপ
সবুজ আহমেদ
আমি তোমার দূর দেশের দুঃখ দ্বীপ
মায়াররাজ্য আড়ালে গলা বরফ কুচি ;
পাবোনা জেনেও অধির অপেক্ষা মিথ্যে আবেগ
বেখায়লে ছন্দে সাজানে শত কবিতা
কষ্ট উস্কে দেয় ফেলে আসা স্মৃতির সবিতা
উড়ে যাওয়ার সাধ্য আমার নাই ?
ভিষণ ভাবায় একাচ্ছন্ন মনে-
নয়তো কবেই ডানা ঝাপটে যেতাম চলে...
না বলে নিঃশব্দে তোমার নীড়ে ?
সবেত্রি মালহোত্রা ও অন্যান্য
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
সবেত্রি মালহোত্রা আমাদের পাড়ার মেয়ে।
রক্তজবা বন্দকের দিনে,
সে আমার তছনছ হতে চেয়েছিল।
সবেত্রি মালহোত্রা আমাদেরই পাড়ার মেয়ে।
যখন আমার ইচ্ছেরা ‘ইচ্ছেবিহীন’ পড়ে থাকতো
ঘরবারান্দার আলো আঁধারে। তখন
সে এসে জ্বালিয়ে দিত নিজেকে।
তার আলোয়,
তার ফর্সা শরীরের পাশে
সন্ধ্যে পর্যন্ত আমি ঝিলমিল করতাম।
আমার হাতঘড়ি ছিল না কোনও,
ছিল না নিজের জন্য আলাদা করে সময়।
৯৮’য়ে আমিও কিছুদিন,
দেবযানী স্কুলে সবেত্রির সহপাঠী ছিলাম।
জলপাই ভেবে কত কতবার খেয়েছি তার চোখ।
মাঝেমধ্যে খরগোশের মতো নরম বুকটাও;
যদিও তার ঝাঁজালো ঠোঁটে,
বড্ডো অভিমানে একদিন
এঁকে দিয়েছিলাম আমার কিছু বখাটে দুপুর।
যে পাড়াটাকে আমরা আমাদের পাড়া বলতাম,
যে পাড়ায় নিজেদের লাল-নীল শৈশব বিক্রি করে
ছুটে যেতাম সূর্যোদয়ের দিকে! আজ আর,
তোমাদের মানচিত্রে সেরকম কোনও পাড়া নেই।
সেই সবেত্রি
সেই পাড়া এখনও আছে,
বিপুল বিস্ময় হয়ে আঙ্গুলে আমার।
দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি
অনন্ত পৃথ্বীরাজ
ভালোবাসা বৃষ্টির পানির মত অঝরে ঝরে পড়ছে । রঙিন স্বপ্ন। দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি, পারলে আটকে রাখো । কেউ একজন স্বপ্নগুলো নিজের করে নিজের করে নিতে চাও ? তবে এসো নিরুদ্দেশের হাওয়ায় হাওয়ায়। ও ডাক্তার ঔষধ হবে! ঘুমের মধ্যে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখবো । আকাশের তারার দল পৃথিবীর পানে স্তব্ধতার অনুবাদ করে কিছু শুনছো, ডাহুকের ডাকে আর ঘুম ভাঙ্গে না । পরিণতি ভেবে লাভ নেই। ফুয়েল, ডিজেল, ওয়েল সব মানুষের হাড়; হাজার বছরের জীবাশ্ম সব ব্যথার পাহাড় ।
নিশুতিরাতে
শাহীন খান
বুকে বাজে গান, বাজে সেতার
বিরহ অনলে পুড়ছি অনন্তকাল।
স্বপ্ন গুলো পাড় ভেঙ্গে হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে
টানাপোড়েন জীবন যাঁতাকল।
মহুয়া বনে পাখিদের নেই আনাগোনা
দীর্ঘশ্বাস ভারী হতে হতে বুক পেট পিঠ ছেয়ে যায়
কষ্টরা গলা ধরে নিশুতিরাতে।
গহনের ক্ষতি
মাসুদ পারভেজ
আমি ঘোরের মাঝে ভোর তুলে নিতাম
সরিয়ে আঁধারের খেল,
রক্তে আমার পিনাক দ্যুতি,
বক্ষে ক্রোধের শেল।
মুষ্টি ভরা বেজায় আলো- জ্বলে শিখা অনির্বাণ,
আমার ভোর-
জ্বলজ্বলা সোনার বাসনের সূর্য একখান।
উচ্ছল-উচ্ছ্বাসে সবুজ পাতার নাচ
ধানের শীষে শিশির বিন্দু, শিশির ভেজা ঘাস,
ঘোমটা তোলা বধূ আমার কী সোনামুখ আহা!
জানলা খোলা আকাশ জুড়ে নীল গেল কাহা?
আমার চাষে নষ্ট জন্ম, ভ্রষ্ট পথের ফুল
পরের ফুলে গাঁথি মালা, পরের বাঁধি কূল,
আমার লাশ মরে হলো মরাদেহের ঢল
আমার মায়ের কলসী পানি দাদার হাতের জল।
সূর্য ওঠে-সূর্য ডুবে দিনটা শুধু নেই
কোন প্রভাতে-
রাতটাও আমার চুরি হলো তিস্তা ¯্রােতের সাথে।
সবুজ মাঠের মধ্যভাগে লালজ্বলা সেই নিশান
কে লুকালো কার কপালে, কে বাজালো বিষাণ।
গহন গহনে কাহার আসন, কাহার দোষে গহন দূষণ।