গৃহবন্দি গৃথিবী : প্রকোষ্ঠে রুদ্ধ মানবজীবন

 


গৃহবন্দি গৃথিবী : প্রকোষ্ঠে রুদ্ধ মানবজীবন 

আসআদ শাহীন


হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে থাকতে তনুমন বেশ অস্বস্তিকরের মাঝে কাটছে। তাই একটু বাহিরে আসলাম। গহীন তমিস্র রাত। নিশীথ প্রস্ফুটিত শ্বেতকাঞ্চনের আঘ্রাণে গুঞ্জিত প্রকৃতিজ। রাতের কৃষ্ণাভ অন্তরীক্ষ জোনাকিপোকার হলুদাভ রঙয়ে রঙিন হয়ে এক বিচিত্র রূপে সসজ্জিত। মনোহর-মনোজ্ঞ আমার প্রাণের গ্রামীণ পল্লি। নৈসর্গিক লালিত্য-মনোহারিতার লীলাভূমি বালিতিতা। সবুজের সামিয়ানায় ঘেরা। সৌম্য শান্তের এক বিরল রূপকার। আজকের হিমাংসুর ঔজ্জ্বল্যদীপ্ত রশ্মি বেশ চমকপ্রদ। নিশাকান্তের নিঃসৃত জ্যোৎস্না পুকুরের সলিল জলে ঝিলমিলিয়ে উঠেছে। জ্যোৎস্নাবিধৌত জলে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ভাবনার অতল সাগরে ডুবে যাই। আর এমন দৃষ্টিশোভন প্রাকৃতির ফরাশে ভাবান্তর মন শায়িত হয়ে কেবলই কাব্যের মূর্ছনায় বিমুগ্ধ হয়। এমনই জ্যোৎস্নাময় লগনে বোধোদয় হলো কবি হরিশঙ্কর রায়ের কবিতার কথা। কতই না চমৎকার করত; কাব্যিকতায় এই প্রকৃতির কথা ব্যক্ত করেছেন-

‘দিনের যবনিকা প্রান্তে

চারিদিক কোলাহল পূর্ণ।

অবশেষে রাত্রি নীরব।

প্রকৃতি এক ঘুমন্ত শিশুর মত।

পাশ ফিরে চায়; কত রাত জাগা পাখি,

ডুকরে ডুকরে, কেঁদে উঠে।


যেন অনন্ত যৌবন তরঙ্গ ¯্রােতে মত্ত।

কি যেন নাই, কে যেন নাই,

শুধু জেগে থাকে ক্ষীণালোক তারকারাজী।


ফুল পাপিয়ার মুহু মুহু গন্ধ ভাসে

বাঁশের ঝাড়ে জোনাকী জ্বলে 

প্রকৃতি অন্ধকারে যেন বিরহিনী।’

তদ্রুপ কবি জীবনানন্দ দাশ তিনিও নিশিকান্তের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবিতার ক্যানভাসে তুলি দিয়ে এঁকেছেন-

‘বেবিলোন কোথা হারায়ে গিয়েছে-মিশর-অসুর কুয়াশাকালো;

চাঁদ জেগে আছে আজও অপলক, মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!

সে যে জানে কত পাথারের কথা, কত ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি!

কত যুগ কত যুগান্তরের সে ছিল জোছনা, শুক্লা তিথি!

হয়তো সেদিনও আমাদেরই মতো পিলুবারোয়ার বাঁশিটি নিয়া

ঘাসের ফরাশে বসিত এমনি দূর পরদেশী প্রিয় ও প্রিয়া!

হয়তো তাহারা আমাদেরই মতো মধু-উৎসবে উঠিত মেতে

চাঁদের আলোয় চাঁদমারী জুড়ে, সবুজ চরায়, সবজি ক্ষেত!

হয়তো তাহারা মদঘূর্ণনে নাচিত কাঞ্চীবাধঁন খুলে

এমনি কোন এক চাঁদের আলোয়-মরু ওয়েসিসে তরুর মূলে!’


অনুরূপভাবে আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও শব্দ ও উপমার রেকাব টেনে বলেছেন-

‘কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,

হাবুডুবু খায় তারা-বুদবুদ, জোছনা সোনায় রাঙে!

তৃতীয়া চাঁদের ‘সাম্পানে’ চড়ি চলিছে আকাশ প্রিয়া,

আকাশ-দরিয়া উতলা হ’ল গো পুতলায় বুকে নিয়া।

তৃতীয়া চাঁদের বাকি ‘তের কলা’ আবছা কালোতে আঁকা

নীলিম-প্রিয়ার নীলা ‘গুল রুখ’ অব-গুণ্ঠনে ঢাকা।

সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রাণী,

সেহেলি ‘লায়লী’ দিয়ে গেছে চুপে কূহেলী-মশারী টানি!

দিক-চক্রের ছায়া-ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,

নীহার-নেটের কুয়াশা মশারি ওকি বর্ডার তারি?

সাতাশ তারার ফুল-তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে

গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে!’


প্রামীণ পল্লীর এই রাতের নৈসর্গিকতা বেশ উপভোগ্য। খোলা আকাশ। নিঝুম রাত। মৃদুমন্দ দমকা হাওয়া। গাছে গাছে পত্রপল্লবের মর্মরধ্বনি। বলাবাহুল্য শহুরে জীবন আর গ্রামীণ জীবনের মাঝে আকাশপাতাল ব্যবধান বিদ্যমান। শহরের পরিবেশ থেকে গ্রামীণ পরিবেশ অনেক আরামদায়ক। পড়ালেখার তাগিদে শহরে থাকতে হয়। তাই সারাক্ষণ গ্রামের কথা স্মরণ হয়। তবে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস ইস্যুতে এবার অনেকদিনের ছুটি কাটানোর বন্দবস্ত হয়েছে। জীবনের প্রথম দীর্ঘতম ছুটি। জানি না জীবনে এমন দিনগুলো আর ফিরে পাবো কিনা! 


সারাদিনে হয়ত বা কোরআন তেলাওয়াত কখনো, কখনো বই পাঠ আবার দিনের যবনিকায় পুরনো অভ্যাসানুযায়ী ডায়েরি ও কলম নিয়ে রোজনামচা লিখতে বসা। তবে একটা বিষয় ভালোই লেগেছে তা হলো এ কয়েকদিনে বুকশেলফে থাকা পুরাতন বইগুলো আবার পড়ার সুযোগ হয়েছে। ধুলোবালিতে ধূসরিত-মলিন বইগুলো পুনরায় পরিষ্কার করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার অনুভূতি অনুভব করে বোধ হলো আমি যেন সেই আশৈশবে পৌঁছে গিয়েছি। যার পুরো সত্ত্বা জুড়েই ছিল নতুন নতুন বইয়ের গ্রাণে উন্মাদক। শেলফের ওপর জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করার সময় সহসা করতলস্থ হলো অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’। তাঁর মহাকাব্যিক এই উপন্যাসটি আগেও পড়েছি। আজকেও পড়ছি। কিন্তু নতুন এক ভিন্নতর স্বাদ পাচ্ছি। ‘নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে’ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়-এপ্রিল, ১৯৭১। উপন্যাসটিকে যদি কয়েক লাইনে সারসংক্ষেপ করা হয় তাহলে এই দাঁড়ায়। বিপুল বাংলাদেশের ছোট্ট একটি গ্রামের কথা। আর সেই ছোট্ট গ্রামটির মধ্যে দিয়েই গোটা বঙ্গদেশকে এঁকেছেন লেখক। প্লাট স্বাধীনতার আগে থেকে শুরু। আছে রায়টের ক্ষুদ্র প্রচ্ছদ, মুসলিম লীগের তৎপরতার কথা। আর সেই সাথে ধানের শীষে আর নদীর বহমানতায় বাঙালির জীবন, বৃহৎ অর্থে বাংলাদেশের জীবন এবং তার রঙ।


এই করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব আজিকে লকডাউন পালনে ব্রত। ইতিহাসের পাতায় চির অমর হয়ে থাকল। ইতিহাস গবেষণা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে এর আগেও মহামারি এসেছে।  একেক সময় একেক মহামারি। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখি-


১. খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ: এথেন্স

পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধের সময় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে একটি রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমানের লিবিয়া, ইথিওপিয়া ও মিসর ঘুরে তা গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগে ওই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়। ওই রোগের মূল লক্ষণ ছিল জ্বর, প্রচ- তেষ্টা, গলা ও জিব রক্তাক্ত হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া ও ক্ষত সৃষ্টি। ধারণা করা হয়, এটি ছিল টাইফয়েড জ্বর। বলা হয়ে থাকে, এমন মহামারির কারণেই স্পার্টানদের কাছে যুদ্ধে হারতে হয়েছিল এথেনিয়ানদের।


২. ৫৪১ খ্রিষ্টাব্দ: জাস্টিনিয়ান প্লেগ 

মিসরে প্রথম এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ফিলিস্তিন ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। পরে পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই প্লেগ তা-ব চালায়। সম্রাট জাস্টিনিয়ান ওই সময় রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাইজেন্টাইনকে একীভূত করার পরিকল্পনা করছিলেন। মহামারিতে সব ভেস্তে যায়। শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট। এই রোগ পরবর্তী আরও দুই শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সময়ে মহামারি আকার নিয়েছিল। মারা গিয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। তখনকার হিসাবে এটি ছিল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ। এই প্লেগের মূল বাহক ছিল ইঁদুর। মূলত মানুষের চলাচলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে।


৩. একাদশ শতাব্দী: কুষ্ঠ

কুষ্ঠরোগের অস্তিত্ব ছিল আগে থেকেই। কিন্তু মধ্যযুগে ইউরোপে এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। কুষ্ঠ ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত কুষ্ঠ ছিল প্রাণঘাতী রোগ। বর্তমানেও বছরে লাখ লাখ লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার আর এই রোগে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে না।


৪. দ্য ব্ল্যাক ডেথ: ১৩৫০ সাল 

এই মহামারিতে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়েছিল। একে বলা হয় একধরনের বুবোনিক প্লেগ। একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী। দ্য ব্ল্যাক ডেথ নামে খ্যাতি পাওয়া এই মহামারি প্রথমে এশিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে তা পশ্চিমে ছড়ায়। একপর্যায়ে পুরো ইউরোপ এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত এলাকায় প্রাণহানির ঘটনা এতই বেড়ে যায় যে রাস্তাঘাটে পড়ে ছিল মানুষের লাশ। এসব লাশ পচে গলে আরেক দুঃসহ সংকট সৃষ্টি করে। শুধু এই মহামারির কারণে ওই সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ থেমে যায়। এই প্লেগে জনমিতিগত ও অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় ধসে পড়েছিল ব্রিটিশ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা।


৫. দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন: ১৬৬৫ সাল

এটিও ছিল বুবোনিক প্লেগ। এতে লন্ডনের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে রোগের উৎস হিসেবে কুকুর-বিড়ালের কথা ভাবা হয়েছিল। রোগের আতঙ্কে তখন নির্বিচারে শহরের কুকুর-বিড়াল মেরে ফেলা হয়। লন্ডনের বন্দর এলাকায় এই প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে।




৬. প্রথম কলেরা মহামারি: ১৮১৭ সাল 

কলেরা রোগের প্রথম মহামারির শুরুটা হয়েছিল রাশিয়ায়। সেখানে এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। দূষিত পানির মাধ্যমে এই রোগ পরে ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে ছড়ায়। পরে তা ভারতে ছড়ায়, যাতে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেও কলেরা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায়ও কলেরা ছড়িয়ে পড়ে মহামারি আকারে। এসব অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে সব মিলিয়ে ২২২৩ লাখ লোক মারা যায়। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী আরও দেড় শ বছর ধরে কলেরা বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল।


৭. তৃতীয় প্লেগ মহামারি: ১৮৫৫ সাল

চীন থেকে এর সূত্রপাত হয়েছিল। পরে তা ভারত ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই মহামারির শিকার হয়েছিল। ভারতে এই মহামারি সবচেয়ে প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছিল। ইতিহাসবিদেরা বলে থাকেন, এই মহামারিকে উপলক্ষ হিসেবে নিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শাসকেরা নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নেয় এবং সেসবের মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করে।


৮. রাশিয়ান ফ্লু: ১৮৮৯ সাল 

ফ্লুর মাধ্যমে সৃষ্ট প্রথম মহামারি ছিল এটি। সাইবেরিয়া ও কাজাখস্তানে এর সূত্রপাত। পরে মস্কো হয়ে ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডে তা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ইউরোপেও দেখা দেয় মহামারি। সমুদ্র পেরিয়ে উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল এই ফ্লু। ১৮৯০ সালের শেষ নাগাদ এই রোগে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।


৯. স্প্যানিশ ফ্লু: ১৯১৮ সাল

এই মহামারিতে বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তিস্থল ছিল চীনে। চীনা শ্রমিকদের মাধ্যমে তা কানাডা হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৮ সালের শুরুর দিকে এই ফ্লু উত্তর আমেরিকায় দেখা দেয় এবং পরে ইউরোপে ছড়ায়। স্পেনের মাদ্রিদে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর এর নাম হয় ‘স্প্যানিশ ফ্লু’। ১৯১৯ সালের গ্রীষ্মে এই রোগের প্রকোপ কমে আসে। সালফা ড্রাগস ও পেনিসিলিন তখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় স্প্যানিশ ফ্লু অত্যন্ত প্রাণঘাতী রূপে দেখা দিয়েছিল। স্পেনের মোট ৮০ লাখ মানুষ এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি।


১০. এশিয়ান ফ্লু: ১৯৫৭ সাল 

হংকং থেকে এই রোগ চীনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়ায়। এ কারণে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে। ১৯৫৮ সালের শুরুর দিকে এশিয়ান ফ্লু দ্বিতীয়বারের মতো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় এশিয়ান ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গিয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। পরে ভ্যাকসিন দিয়ে ওই মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল।


১১. এইচআইভি/এইডস: ১৯৮১ সাল 

১৯৮১ সালে এইডস প্রথমবারের মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১৯২০ সালের দিকে পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে। রোগ শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত এইডসে বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


শেষকথা: সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস ইস্যুতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে পৃথিবী। ইট-কঙ্করের বড় বড় প্রাসাদ,অট্টালিকা ও প্রকোষ্ঠের চার প্রাকারের মাঝে রুদ্ধ মানবজীবন। অখ- বিশ্ব এহেন পরিস্থিতিতে এক ভয়াল সময় অতিবাহিত করছে। আতংক, ভয় ও ডরের শিকলে বন্দি বিশ্বায়ন। সময় প্রবাহ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। থমকে গিয়েছে বিশ্বচক্র। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস ইস্যু বিশ্বচরাচরকে পাল্টে দিয়েছে। পাল্টে দিয়েছে তারিখ। চীন, ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। 


সমীরণের বেগে ভেসে আসছে কর্ণকুহরে মৃত্যুর বার্তা। এমন একটি ব্যাধি-যা মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে। আপনজনের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। এই করোনা নামক এক ক্ষুদ্র ভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব কুপোকাত। মৃত্যুর ভয়ে ত্রস্তবিভীষিকা সমগ্র মেদিনীর মানবকুল। মৃত্যুর এই মিছিলে ক্রমশই বাড়ছে শবের সারি। এমন এক মৃত্যু যে-মৃত্যুর সময়ও মৃতের পাশে থাকছে না কোনো আপনজন। এই শেষ বিদায়ী যাত্রায় পাচ্ছে না যথাযথ সম্মানটুকুও। 


করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে থাকছে না কেউ। মানুষ পারছে না মানুষদের সাথে মিশতে। মুসাফাহা ও মুআনাকাও করতে পারছে না লোক সকল। এই ভয়াল করোনা ভাইরাস গ্রাস করে নিয়েছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি-লাল সবুজের প্রতীকরূপ বাংলাদেশকে। ক্রমাগতভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। শবের মিছিলে যোগদান করেছে এদেশের জনতাও। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সকলেই অবিদিত যে এই শবের মিছিল কত দীর্ঘ হতে চলেছে...!


(তথ্যসূত্র: 

ডিজিজ অ্যান্ড হিস্ট্রি, ফ্রেডারিক সি.কাটরাইট, ২০১৪, ডিজিজ: দ্য স্টোরি অব ডিজিজ অ্যান্ড ম্যানকাইন্ডস কনটিনিউয়িং স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট ইট, মেরি ডবসন, ২০০৭, হিস্ট্রি ডট কম এনসাইক্লোপিডিয়া অব পেস্টিলেন্স, প্যানডেমিকস অ্যান্ড প্লেগস, এড.জোসেফ পি. বায়ার্ন, ২০০৮, ইনফ্লুয়েঞ্জা, দ্য আমেরিকান এক্সপেরিয়েন্স  সোর্স বুক অব মেডিকেল হিস্ট্রি, লোগান ক্লেনডেনিং, ১৯৬০)

আসআদ শাহীন

শিক্ষার্থী: আন্তর্জাতিক ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় "আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া" চট্টগ্রাম।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট