আলতার রং লাল
মুনিম রাব্বী
অমাবশ্যার বুনো অন্ধকার । মাঝ রাতের এই গভীর আঁধারে যেন গ্রামটা অনন্তকাল ধরে ঘুমিয়ে আছে । আঁধার ডিঙ্গিয়ে কতকাল সূর্যও ওঠে না মনে হচ্ছে । এমন ঘুমন্ত রাতই আদর্শ আলতা চোরার জন্য । বছর দুয়েক আগে এই গাঁয়ে এসেছিল আলতা। সেবার ধরা খেয়ে বেদম পিটুনি খেতে হয়েছিল । ধরা অবশ্য খেতনা । সামান্য ভুলটুকু না করলে আলতাকে কেউ আর হাতের নাগালে পেতনা । এখনও সে রাতের কথা মনে পড়লে খুব আফসোস হয় । এই দুবছরে আলতার হাত আরও পেকেছে । স্বয়ং অধীশ্বরও যেন ওর হাতের গতিবিধী বুঝতে পারেন না ।
আলতা এখন অন্ধকারে আরও ভাল দেখতে পায় । আলতা গ্রামে ঢুকল । বৈশাখের ছিন্ন বাতাসও তার অস্তিত্ব টের পেলনা । গোলাম ভাই গতকালই বিদেশ থেকে এসেছে । অন্য চোরদের কাছে এই খবর পৌছানোর আগেই আলতাকে কাজ শেষ করতে হবে । গোলাম ভাই খুব ভাল মানুষ । বছর পাঁচেক আগে গোলাম ভাই যখন বিদেশ যাচ্ছিল তখন রাস্তায় আলতার সাথে দেখা হয়েছিল । আশেপাশের দশগ্রামে আলতার হাতটানের নাম-ডাক তখনও ছিল । তা জানা স্বত্বেও গোলাম ভাই আলতাকে ডেকে একশ টাকার নোট ধরিয়ে বলেছিল , আলতা আর এসব কাম কাইজ করিস নে । এই নে ধর টাকাটা । আমার জইন্যে দোয়া করিস । আলতা কচকচে একশ টাকার নোট হাতের মধ্যে গুজে গোলাম ভাইকে একটা ছালাম দিল । আর বলল , ভাই আমি ওসব কাম কবে বাদ দিয়ে দিছি । আপনি কি বিদ্যাশ যাচ্ছেন ? হরে ভাই । ওটাই ছিল গোলাম ভাইয়ের সাথে আলতার শেষ কথা ।
গোলাম ভাইয়ের দরজার সামনে এসে আলতা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল । গ্রামের গরীব আর অভাবী মানুষের জন্য গোলাম ভাই কম করেন না । সামনের চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়াবে শোনা যাচ্ছে । তাঁর ঘরে চুরি করায় আলতার মন সায় দিচ্ছেনা পুরোপুড়ি । ঘরের দক্ষিণে আমগাছের গোড়ায় বসে একমনে ভাবছে আলতা । হাতে টাকা-পয়সার বড্ড অভাব । চুরি না করলে না খেয়ে মরতে হবে । আচ্ছা , গোলাম ভাইয়ের কাছে কিছু সাহায্যও তো চাইতে পারে সে । এমন কিছু ভাবতে ভাবতেই সব নিস্তব্ধতা যেন ভেঙে গেল । আলতা দৌড়ে পালাবে , এমন সময় অদ্ভুত গোঙানীর আওয়াজ শোনা গেল । শরীরের সব শক্তি দিয়ে কেউ একজন চিৎকার করতে চাইছে কিন্তু সেই আওয়াজ তার গলার ভিতরেই আটকে আছে । আলতা দাঁড়াবে না পালাবে বুঝতে পারছে না । জানালার এক পাশের পাল¬া হালকা হা হয়ে আছে । আলতা সাবধানে উঁকি দিতে গেল । ঠিক তখনই কেউ একজন তার পিঠে খোঁচা দিল । আলতা হচকিত হয়ে পিছন ফিরে তাকাল । গামছা দিয়ে মুখ জড়ানো । তার উপরে তাজা রক্তে লাল হয়ে আছে পুরো মুখ , শরীর । লোকটি একটি বড় ছোরা আলতাকে দিয়ে বলল, একদম খালের মইধ্যে ফেলবি, কেউ যেন টের না পায় । যাহ , তাড়াতাড়ি । আর সপ্তাহ খানেক আমার সাথে দেখা করনের কাম নাই । যাহ ।
আলতার চোখ পাকা মরিচের মত লাল হয়ে গেছে । আলতা কিছুই জানে না এসবের , কিন্তু কিছু না জেনেও সব কিছু জানার ভান করা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই । আলতা ছোরা নিয়ে বিলেতি ঘোড়ার মত গলা লম্বা করে দৌড় দিল । আলতা দৌড়াতে পারে । এক্ষেত্রে দশ গ্রামে তার সমকক্ষ কেউ নাই । এক দৌড়ে দুই তিন গ্রাম পেছনে ফেলতে পারে । কিন্তু আজ কি হলো আলতার ? আলতা হাঁপিয়ে যাচ্ছে । পালনোর জন্য মানুষ নির্জন অথবা গোপন জায়গা খোঁজে, আর ভয় পেলে খোঁজে আশ্রয় , লোকালয় । অন্যদিন হলে আলতা লোকালয় এড়িয়ে যেত । কিন্তু আজতো সে পালাতে চাইছে না । তার চাই আশ্রয় । লোকালয় । এবারও আলতা অজান্তেই আরও একটি ভুল করে বসল । ভয়ার্ত আলতা কখন যেন লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে । একদম আমজাদের চায়ের দোকানের সামনে এসে মুখ থুবড়ে পড়ল আলতা । আমজাদের দোকান মাঝ রাত অব্দি খোলা থাকে । কোন কোন দিন সারারাতই খোলা থাকে । সেরাতেও ঝাঁপ বন্ধ করে তাসের আড্ডা জমেছিল আমজাদের দোকানে । আলতার পায়ের শব্দে সবাই বের হয়ে আসল । আলতা উন্মাদের মত পড়ে আছে । ওর বুকের ছাতি নদীর ঢেউ এর মত উঁচু হচ্ছে আবার নিচু হচ্ছে । সবাই এসে আলতাকে ধরল, কিন্তু একি ? আলতার হাতে তাজা রক্ত । পাশেই পড়ে আছে রক্তাত্ব একহাত ছোরা । কেউ একজন আলতার হাত পা শক্তকরে বেঁধে ফেলল । আলতা চোরা খুন কোরছে । ওরে শক্ত কইরা বাঁধ ! শুকনো মেহগনির ডাল হাতে কালো চেহারার একটা লোক, আলতার পশ্চাতে একটা কসিয়ে বারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কারে খুন করছস তুই ? আলতা লোকটির চোখের দিকে তাকাল ।
পিঠ ঠেকিয়ে গাছের সাথে বাঁধা আলতার পুরো শরীর । অপরাহ্নের সূর্যমূখী ফুলের মত মাথা নিচু হয়ে আছে । এমন মার খাওয়ার জন্যেই জন্ম হয়েছে তার । এখনও দুই কিস্তি কিল ঘুশি হজম করতে পারবে সে । কিন্তু কই, কেউ’ই আর আলতার গায়ে আর হাত তুলছেনা । লাল চোখা সেই ছিমছাম শরীরের লম্বা লোকটি, সেও হাঁপিয়ে গেছে বোধয় ।
বেলা অর্ধেক গড়ানোর আগেই একটি জিপ গাড়ি নিয়ে পুলিশ আসল । প্রথমে জনা দশেক এবং এই মাত্র আরো দশ জন পুলিশ আসল । সাথে আরও দুই তিন গ্রামের মানুষ । পাই পাই করে খুজেও কোথাও কোন লাশ পাওয়া গেল না । সকাল থেকে শুধু গোলাম ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না । গোলাম ভাইয়ের’ই যে কিছু হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নাই ।
পুলিশ এসে আলতাকে দুই এক ঘা দিতেই আলতা কেকিয়ে উঠল । ওর শরীর কাপছে এখন । এই লাশ কোথায় হাওয়া হয়ে গেল । লাশ না পওয়া পর্যন্ত যে তাকে বেদুম পিটুনি খেতে হবে এতে কোনো ভুল নেই । অনাগত দুই এক দিনের জন্য বড্ড ভয় হচ্ছে আলতার । আলতার বউ এল কাঁদতে কাঁদতে । একের পর এক যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে । এই কাজ করতে গেলা ক্যান মুনতার বাপ ? মানুষ মারবার গেলা ক্যান ? আমি যদি আগে জানতাম তোমারে ঘরে আটকায়ে রাইখতাম । আলতা কোন ক্রমে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, বউ এইসব কথা কইস নে ! আমি চোর , খুন করা আমার কাম না । আমি খুন করি নাই ।
আলতার চারপাশে এখন গ্রামের অর্ধেক মানুষ । সাধারনত চেয়ারম্যানের বড়সর জনসভাতেও এর চেয়ে কম মানুষ হয় । এর আগে অন্য সময় গুলোতে আলতা টানা মার খেয়েছে । এইবার সেই তুলনায় অনেক কম । উচ্চতর অপরাধে অভিযুক্ত আলতা বুঝেছে মাইরও ক্লাসভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় । তবে এ যাত্রায় গোলাম ভাইএর লাশ না পাওয়া গেলে রক্ষে নেই । এলাকার গন্যমান্য সবাই উপস্থিত । মেম্বার সকাল থেকেই এখানে হাজির । চ্যেয়ারম্যান সাহেবও চলে আসবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই । সবাই এসে আলতাকে কড়া করে জিজ্ঞেস করল, এরে আলতা, ভালয় ভালয় কইয়া দে, গোলামের লাশ কই রাখছিস ?
আলতা শুকনো মুখে ভয়ে ভয়ে মাথা তোলে । আমি গোলাম ভাইরে মারি নাই । বলতেই কয়েকজন অতি উতসাহি, পোক্ত লাঠি দিয়ে আলতাকে মারতে তেড়ে গেল । পুলিশের কন্সটেবল কোন রকমে তাদেরকে সামলে নিয়ে আলতার দিকে এগিয়ে গেলেন । আলতাকে কান ধরে টেনে উপড়ের দিকে তুলে ফেললেন । আলতা যন্ত্রণায় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল । স্যার স্যার, মাফ করেন, আমি যা জানি তাই কবো । স্যার !
আলতার কোন কথাতেই কারো মন ভরে না । সময় গড়িয়ে যাচ্ছে । আলতা যেন পুরো গ্রাম আর এক কুড়ি পুলিশদের নিয়ে খেলছে । সারাদিন কয়েক কিস্তি মার খেয়ে আলতা সত্যি সত্যি বেশ ঝিমিয়ে পরয়েছে । তার মধ্যে সারাদিনই এক প্রকার না খাওয়া । কয়েকগ-াস পানি আর একটা বনরুটি ছাড়া কিছুই পরেনি পেটে । আলতা ও মনে মনে চাইছে গোলাম ভাইয়ের লাশটা যেন পাওয়া যায় । ওটা পাওয়া গেলে পুলিশ তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যাবে । কিন্তু না, এতক্ষণেও গোলাম এর কোন হদিস পাওয়া গেলনা ।
শেষ বিকেলে একটা ঘটনা ঘটল । গ্রাম জুড়ে সবাই হা হবার জোগাড় । নিস্তব্ধ গ্রাম থেকে যেন হঠাৎ হৈহৈ রৈরৈ আওয়াজ শোনা গেল । ক্লান্ত, শ্রান্ত পাখি গুলো বিছলিত হয়ে উড়তে লাগল । গোলাম ভাই ফিরা আইচে । গোলাম ভাই মরে নাই । আগে আগে চার পাঁচ জন অল্প বয়সী এই বলে বলে ছুটে আসতে লাগল । পিছনে ছোট খাটো একটা বহর নিয়ে ধাই ধাই করে এগিয়ে আসছেন গোলাম ভাই ।
সত্যি, গোলাম ভাইএর স্পষ্ট মুখ দেখা যাচ্ছে । হালকা লাল রঙের পাঞ্জাবী পরা । তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ । ও চোখে ভয়ের লেশমাত্র নেই । গ্রামের সবাই অবাক । গোলামের পরিবারের কেউ কেউ তো গোলামকে দেখে জ্ঞানই হারিয়ে ফেলেছে । আলতা বউ এর দিকে তাকায় । শত যন্ত্রণা পাশকাটিয়ে আলতার মুখে হাসির মৃদু একটা রেখা ফুটে উঠল । বউ, আমি তরে কইছিনা, আমি গোলাম ভাইরে মারি নাই । আলতার বউ আচল গোজা মুখে আলতার কাছে এগিয়ে এলো । নাক মুখের রক্ত আলতো করে মুছতে মুছতে বলল, এ কতা জোর গলায় আগে থেকেই কতি পাইরলেনা ?
কইতি তো চাইরে বউ, যত জোরে কইতি যাই মাইনশে তত জোড়ে পিডায় । তুই বাড়ি যা । মাইয়াডা তরে খুঁজব । এহন আর ভয় নাই । গোলাম ভাই ফিরা আইচে । শুকনো চোখে টনটনে জলে আলতার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে । তবুও গোলাম ভাইয়ের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায় সে। যুদ্ধ ফেরত বিজেতার ভঙ্গীতে বীর দর্পে এগিয়ে আসছে গোলাম ভাই । একটা লোক গোলাম ভাই এর পিছনে পিছনে তাল মিলিয়ে একবার হাটছে আবার ছোট ছোট পায়ে দৌড়াচ্ছে কিন্তু গোলাম ভাইকে অতিক্রম করছে না । নিশ্চিত ভাবেই গোলাম ভাইয়ের এই নতুন সাগরেতকে গ্রামের কেউ আগে কখনও দেখেনি । আলতার কিন্তু তেমন মনে হচ্ছে না । চোখটা বড্ড চেনা চেনা । ওই টক টকে পাষ- চোখ দেখেই যে প্রাণভয়ে গত রাতেই পালিয়েছিল আলতা ।
আলতার মুখ লাল হয়ে আসে । চোখ মুছতে মুছতে ফিরে যেতে থাকে আলতার বউ । যেতে যেতে অজানা আশঙ্কায় বারবার পিছন ফিরে তাকায় আলতার বউ । ভাবে কেউ যদি গাঁয়ে হাত দেয় তো দৌড়ে গিয়ে পিঠ পেতে দেবে । আপাতত আর তেমন লক্ষণ পায় না আলতার বউ । ধীরে ধীরে আলতার বউ আলতার চোখের আড়ালে চলে যায় । লম্বা লাল চোখা লোকটির চোখে চোখ পড়ে আলতার । আলতার চোরা মশ্তিষ্ক কি ঘটছে বা কি ঘটবে কিছুই বুঝতে পারে না । এখন ধরে আলতার গায়ে কেউই হাত তুলছে না । কেউ কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেসও করছেনা ।
গোলাম দ্রুত পায়ে পুলিশের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় । পুলিশ কনসট্যাবল গোলাম ভাইকে দেখে হা হয়ে গেছেন । গোলাম ভাইয়ের দিকে করমর্দনের হাত বাড়িয়ে দিলেন । গোলাম ভাই তা উপেক্ষা করে পুলিশকে জড়িয়ে ধরলেন । পুলিশের নাম ধরে বলতে লাগলেন , বড় বাচা বাইচে গেছি ভাই ! আমি লাশ হয়ে যেতাম ভাই ! আল¬ায় আমারে বাঁচাইছে ।
পুলিশ গোলাম ভাইকে স্বান্তনা দিয়ে বসতে বলল । পুলিশ সব কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই গোলাম ভাই আলতার দিকে আঙ্গুল তুলে তাকিয়ে থাকে । গোলামের সাগরেতও আলতার দিকে তাকিয়ে থেকে মেকি কম্পনে কাপতে থাকে। আলতার বুক আতকে উঠল । কি হচ্ছে কোন কিছুই বুঝে উঠতে পাড়ল না সে । খুন কি কেউ হয়ই নি ? তাহলে রক্ত মাখা ছোড়া, গোঙানির আওয়াজ , লাল চোখা লোকটা সবই কি মিথ্যে । এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আলতার চারপাশে ছায়া আরও ঘন হয়ে বৃত্তাকার আঁধার সংকুচিত হয়ে আসতে লাগল ।
ক চোরের পো চোর, তুই কারে খুন করছস ? লাশ কোই ? তোরে এইবার শেষ কোইরে ফেলাবো ।
নানান জনের নানান কথা আর মাইরের শব্দে অনেক ক্ষণ আলতার চিৎকার শোনা গেল । আর মাইরেন না । এদের মধ্যে আলতা দুই একজনকে চেনে । তাদের নাম ধরে আলতা বলতে লাগল । মাজেদ ভাই, ও মকবুল ভাই, আপনেরা আমারে পুলিশে দেন । আমারে আর মাইরেন না ।
দূর থেকে দুই একজন মানুষ ছুটে আসছে । বড় বড় দম নিতে নিতে তারা এসে বলল, লাশ পাইছি । উত্তরের খালে একখান লাশ ভাইসা উঠছে । পেটে বুকে ছড়ির দেড় ইঞ্চির ও বেশী ক্ষত। দাড়িতে সারা মুখ ঢেকে আছে। তবুও কারই তাকে চিনতে কষ্ট হয় নাই । চেয়ারম্যান চাচারেই মারছে শালা । বুড়া মানুষটারে পাষাণের মত কোপাইছে ।
এই কথা শোনার পর সমস্ত মানুষ তীব্র ক্রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ল আবারও। এবার আর আলতার কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না । মাফ চাইবার, করুনা পাওয়ার মত আর কোন অবস্থা নেই তার । পুলিশ বাসি ফুকতে ফুকতে এগিয়ে আসল । আর মাইরেন না । হইছে , ছাড়েন । ওর শাস্তি ও পাইব । কয়েক জন পুলিশ কোন মতে জায়গাটা ফাঁকা করে । পুলিশ আলতার হাতে হাতকরা পড়িয়ে টানতে লাগল । আলতার শরিরে বল নেই । চোখের মৃদু দ্যুতিতে দূর গ্রহ নক্ষত্রের ঘোলাটে আলো পুঞ্জীভূত হতে লাগল । আলতা সেই লাল চোখা লোকটিকে দেখতে পেল । লোকটি আলতাকে মারতে মারতে হাঁপিয়ে গেছে। গা থেকে ঘাম ঝড়ছে । লোকটি গোলামের কানে কানে কি যেন বলছে । মাথা ঝুঁকে পরে আছে আলতা। ছোপ ছোপ রক্তে পথের ধুলো পিঙ্গল বর্ণের হয়ে গেছে । আলতা আবার একটু চোখ তুলে তাকাল । গোলাম ভাই আলতার দিকে চেয়ে আছে । তার মুখে, চোখে অদৃশ্য বিভৎস্যতার ভয়ার্ত হাসি ।