একজন পাণ্ডুলিপিবলছি
নুসরাত জুবেরী
আমি একজন পাণ্ডুলিপি বলছি-
কোনো এক গ্রীষ্মের তাপদাহে, অবেলায়; কবির
কলমের বুননে জন্ম হয়েছিল আমার
সেই সময় গুলোতে আমি নিতান্তই শিশু,
আমাকে নিয়ে কবি দেখতো না কোনো ভবিষ্যৎ
নিছকই বেখেয়ালে আমি রচিত হয়ে যেতাম
একের পর এক,
স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে আমাকে রচনা করে উন্মাদ কবি
প্রশংসা কুড়াইতেন খুব।
সেই থেকে-
কখনো কখনো আমি ধারণ করেছি,
শুভ্রতার সাদা রঙ
কখনো ধূসর মলিন; কখনো
প্রকৃতির সবুজ হয়ে মিশে গেছি কবির মনে।
ভালবাসায় একাত্ম হয়ে কখনো লাল; আবার
কখনো ব্যর্থতার নীল রঙে আঁকড়ে ধরেছে আমাকে।
কখনো কবির ঘোর উন্মাদনায় আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে গেছি আমি,
ভীষণ মাতালী হাওয়ায় হয়েছি নগ্ন পোস্টার।
আবার কখনো-
কালো শহরের সহিংসতার বৃত্তান্ত শুনে জেগে উঠেছি
জড় পা-ুলিপি হয়েও কেঁপে উঠেছি কবির মনে,
বার বার।
নিঃসঙ্গ টেবিলে মহাশূণ্যের দিকে চেয়ে কখনো,
কবি জোৎস্নার আলো জমিয়ে আনকোরা হাতে সাজাতেন পোর্ট্রেইট
তার আলোকে আবার গড়তেন আমাকেও
কখনো জড়িয়ে ধরেছে আমাকে অকৃত্তিম নিষ্পাপ ভালবাসা,
আবার কখনো-
কবির নিষ্ঠুরতায় সিলিংয়ে ঝুলানো শ্বাসরুদ্ধকর এক বৃত্তের ভেতরে আটকে গেছি আমি।
আমি একজন তরুণ পাণ্ডুলিপি বলছি-
কবিতার গভীরে আমি আজ কবির এক টুকরা অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ,
তার নিজস্ব সৃষ্টি।
আমাকে আলোকিত করতে,
কবি ঘুরিয়েছেন বহু প্রকাশকের দ্বারেদ্বারে
সদ্য ফোঁটা ক্যামেলিয়ার মত আমার সুভাষে মন হারিয়েছেন অনেকেই
কিন্তু আপন করেনি তবুও।
আবার কারো অলস নিদ্রায় নিজেকে মেলে দিয়ে অসভ্য হয়েছি আমি,
আমাকে-
নির্মমভাবে মুখে হত্যা করে ছুড়ে ফেলেছেন ডাস্টবিনে।
আমি কবির ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছি বারবার,
স্বপ্ন ভেঙেছি অসংখ্যবার।
আমি একজন পাণ্ডুলিপি বলছি,
গুম হয়েছি আজ কবির ব্যথাতুর হৃদয়ে
হারিয়ে গেছি কোনো এক কথিত মহাকালের গর্ভে।
তাই-
আমি আজও এক অবহেলিত পাণ্ডুলিপি’ই রয়ে গেছি
সোনালী মলাটের বই হতে চেয়ে বঞ্চিত হয়ে আছি।
ফিসফাস ক্ষুরের শব্দ
টিপু সুলতান
সব পথ থেমে গেলে-দাঁড়াইয়া দেখি
আমার ধানমাঠ বৃষ্টিতে কাঁথামুড়ি দিচ্ছে
চিড়েভেঁজার মতো; দুগ্ধবতী আলপথ-
শর্করা মাখানো শরীর-বাহু টেনে-হাঁটে
তরুণরোদের উঠোন-থির হাওয়াদের
বাড়ি বাড়ি জ্যান্ত হরিণ চোখ, এত ভাবি-
বাদ যায় না আগত অনাগত মুখ
বয়ে নিচ্ছে পৃথিবীর সুস্থ কলোনি-
মিলিয়ে যায় আগামী সব, বিসর্জন-
এই সব খবর পৌছয় ঘাসের কাছে
জেগে আছে পালের বৃক্ষ, ছায়াসম;
মহিষের ঘাড়ে পাখির হাঁটাফাটা দাগ
ফিসফাস ভেসে যাচ্ছে ক্ষুরের শব্দ
চাবুকে ঝাঝড়া চুমু
রহমতুল্লাহ লিখন
নিরঙ্কুশ প্রশ্বাস নিয়ে আমরা বাঁচলেই,
তাদের নিঃশ্বাস যে আটাকে যায় বারবার।
তাই প্রতিবার শ্বাসহীন যন্ত্রণা দিয়েই তারা লাভবান।
তাদের বেঁচে থাকার জিয়ন কাঠির ছোয়া তো,
আমাদের হাড়ভাংগা চিৎকারে, মরণে।
প্রাণভরে উল্লাসিত আমরা হলেই,
তাদের বেদনার কালবৈশাখিতে উথাল পাথাল চারিদিক।
তাই প্রতিক্ষণে কান্নার নোনা জল গড়িয়ে তারা সবল।
তাদের পরাক্রমের উপাস্য কেদারার আরাম তো,
আমাদের রক্তাক্ত কোষের ছিন্নভিন্ন হওয়াতে, ক্ষরণে।
প্রশান্তির ছাপ গায়ে মুখে আমরা মাখলেই
তাদের চিটেচিটে চর্বির পিত্তথলিতে গুড়গুড় ডাক।
তাই প্রতিদিন বিনা প্রাপ্তিতে, হাহাকার শুনে তারা উজ্জ্বল।
তাদের পশ্চিমা দালানের উঁচু পিলারের নকশা তো
আমাদের একটু শান্তির কেড়ে নেয়া লোকমাতে, ক্রন্দনে।
আমাদের তাদের এই মাখামাখি, এই দেয়া নেয়া,
চাবুকে ঝাঝড়া চুমুতে থাকে পিচঢালা মখমলে শোয়া।