পদাবলি : ০২

 



বিলবোর্ড 

শচীন ভট্টাচার্য্য


রাজধানীর এই পরিপক্ক ভাসমান জনস্রোতে,

কালচে পিচের বুক চিরে যাওয়া আইল্যান্ডে কিংবা ওভারব্রীজের সুনিপুণ মাতৃছায়ায় ;

রংচটা একটা মন নিয়ে দৌড়ে বেড়াই

বিলবোর্ড হবো বলে।

এই যাত্রায় বেশ কিছুক্ষন পর পর যে ঠুনকো  আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে,  

বিনিময়ের বাতাস তাকে রূপ দেয় সসীম নিরাশায়। 

ভীষণ তেতো এ বাতাস উপেক্ষা করার সাধ্য নেই আমার

মফস্বলের নিষ্পাপ আঞ্চলিকতায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েও 

বারবার ছিটকে পড়ে যাই  বিনিময়ের ধাক্কায় এবং ধিক্কারে।


এই সব কিছুর মূলে প্রধান যে সমস্যাটি,

তার ¯্রষ্টাও যে আমরাই!

সুযোগ আছে দায় এড়ানোর?


তবে একদিন -

এই  অপ্রতিরোধ্য বাতাসের প্রবল ভাংচুর হবে, মধ্যবিত্ততার কাছে মাথা নত করবে সহস্র বছরের প্রাচীন বিনিময় প্রথা।

ডাস্টবিনের অপরিচ্ছন্নতায় মিশে যাবে 

সমস্ত জঞ্জাল, ধিক্কার, ধাক্কা ইত্যাদি ইত্যাদি। 

এ শহরের আকাশে দেখা যাবে

কিছু মধ্যবিত্ত রঙিন বেলুন, স্বপ্নসুতোয় বাঁধা।

মিছিলে মিছিলে গমগম করবে রাজপথ-

একদল স্বপ্নচারী যুবকের ভিড়ে

চিৎকার করে কেউ বলে উঠবে,


‘আমি মধ্যবিত্ত,  এসেছি এই শহরের বিলবোর্ড হবো বলে....’



কোলাহল

হাবিবাতুল উম্মে


হাতভর্তি রোদ,

চোখে সমুদের বসবাস-

এই সব জীবন;

ঘুম মিছিল চারপাশ।



একদিন তোমরাও কন্যার জনক হবে

রেহমান আনিস


যখন চোখের সামনে...

আমার বোনের ওড়না কেড়ে নেয়, চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে তুলে নিয়ে যায় অমানুষের দল। 


আমার বৃদ্ধা মায়ের বুক ফাটা কান্নায় জায়নামাজ ভিজে যায়

আমার জন্মদাতা পিতা অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত ধরে,

হে আল্লাহ! ইজ্জত রক্ষা করো!

সে ফরিয়াদও খোদার আরশে পৌঁছায় না।


অসহায় মেয়েটিকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখে একের পর এক নগ্ন পৌরুষ দহন নিবারণ করে চলে। 


আমি অসহায়, বাবাও অসহায়; তবে কোথায় আশ্রয়?

কার কাছে আশ্রয় চাইবে রক্তাক্ত বোন আমার!

ওর শরীর আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সমান্তরাল আজ 

আমার বোন বুঝি আমাকে ঘৃণা করে কাপুরুষ ভেবে

অসহায় মায়েরা বুঝি এদেশের তরুণদের প্রচন্ড ঘৃণা করে !


ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা করে আজ

অযোগ্য মনে হয় নিজেকে

ভাবতেই আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই, 

এ যেন আমার পিতৃভূমি নয়

এ যেন স্বাধীন বাংলা নয়

এ যেন বর্বর পশুদের অশ্লীল অন্দরমহল

আমার প্রচন্ড ঘৃণা হয় নিজেকে পুরুষ পরিচয় দিতে।


এই স্বাধীন দেশে নারীরা কী কখনো মর্যাদা পাবে?

অন্ধকার দেখি দু’চোখে কোনদিন কী মানুষ হবো!


যদি ভাই হয়ে বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি

যদি সন্তান হয়ে মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি

যদি স্বামী হয়ে স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারি

তবে এমন পুরুষ পরিচয় দিতেও আমার ঘৃণা হয়।

লজ্জা করে নিজেকে তরুণ পরিচয় দিতে।


যে তারুণ্য ‘৫২’ তে রক্ত দিয়েছিল

যে তারুণ্য  ‘৬৯’ এ রক্ত দিয়েছিল

যে তারুণ্য ‘৭১’ এ রক্ত দিয়েছিল

যে তারুণ্য সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে 

রাজপথে নেমে বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়তেও মাথানত করে নি

যে তারুণ্য অপশক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে বারবার রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে

সেই তারুণ্য আজ নিরব দর্শক অথবা ধর্ষক!

তারুণ্যের উত্তাপ কী আজ বিলীন হয়ে গেছে

নাকি ওদের রক্তেও পচন ধরেছে

প্রতিবাদের ভাষা কী ভুলে গেছে এদেশের তরুণেরা?

মনে রেখো, একদিন তোমরাও কন্যার জনক হবে!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট