পদাবলি : ০২

 



আমার ঠিকানা

শাহীন খান


আমার ঠিকানা পুঁইয়ের লতায়

কোলাহল আর নিরবতায়

শর্ষে ফুলে ফুলে

পাবে তুমি ঝিঙের মাচায়

বন্দি জীবন পাখির খাঁচায়

ইশকুলে ইশকুলে। 

সন্ধ্যা তারায় জোছনা রাতে

খোকা যখন খেলায় মাতে

রাখাল বাজায় বাঁশি

ঝিলিমিলি রোদের মাঝে

সকাল দুপুর কিংবা সাঁঝে

ফিরে আসি ফিরে আসি।

পাবে আমায় ছড়া গানে

বৃষ্টি খরা ঝড় তুফানে

ঝরণা  খালে ডোবায়

বাংলা ভাষায়, স্বাধীনতায়

থাকি মায়ের মিঠে কথায়

লাল সবুজের শোভায়।

থাকি আমি বন্ধু প্রেমে

বাঁধা আছি মায়ার ফ্রেমে

ঝিঁঝির পালা সুরে

আমায় পাবে হাসির ছটায়

নাহি পাবে দুর্ঘটনায়

থাকি দূরে দূরে।

গরীব দুখির হৃদয় জুড়ে

আছি স্বর্ণ কহিনূরে

টেকনাফ- তেঁতুলিয়ায়

পদ্মা মেঘনা যমুনায় আছি

আছি বুকের কাছাকাছি

আছি হিয়ায় হিয়ায়।

আমায় পাবে বাংলাদেশে

বাতাস হয়ে যাইরে ভেসে

কই যে কথা কানে

মাটি আর আকাশ নীলে

দিঘি পুকুর এবং ঝিলে

আছি প্রাণে প্রাণে। 


ভুলতে পারিনা

রফিকুল নাজিম 


গত গ্রীষ্মের তাপদাহও মুছতে পারেনি তোমাকে 

ভেবেছিলাম বর্ষার ঘোলা জলে ভেসে যাবে দূরে

অথচ তুমি আরো জেঁকে বসেছিলে আমার মনে!

ভেবেছিলাম শরতের মেঘে করে ওড়ে যাবে অন্য আকাশ

আমি বেমালুম ভুলে যাবো; অথচ হেমন্তেও তুমি সাবলীল

ঝিলের নীল পদ্মের মতো ব্যথা হয়ে লেপ্টে আছো বুকে!

তাই প্রার্থনা করেছি শীত আসুক; ঘন হয়ে আসুক কুয়াশা

আমাদের গোসলঘরের আয়নার মতো তুমিও ঝাপসা হও

অথচ এই শীতেও গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকো আমার মনে

বুকের বা’পাশে ওম হয়ে থাকো; ভাবনায় উষ্ণতা ছড়াও!


ব্যর্থ প্রার্থনার শেষে আমরা আরো ঘন হয়ে বসি মুখোমুখি,

শুনেছি- তোমাকে বরণ করার দারুণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বসন্ত!



অভিমানী তিথি রে তুই

জামান আহম্মেদ ইমন


অভিমানী তিথি রে তুই

দিলি মিছে আশা,

দুঃখ মনে ঘর বাঁধিলো

সুখ হারালো ভাষা রে

সুখ হারালো ভাষা।।


তোকে নিয়ে-ই  স্বপ্ন ছিলো রে 

কাটাবো সারাজীবন,

তুই অন্যের বুকেতে হাসছিস দেখছি

জল দিলো রে নয়ন,

সুখ হারালো ভাষা রে মন

সুখ হারালো ভাষা।।


গভীর রাতে মাঝে মাঝেই শুনি

তোর পায়ের আওয়াজ,

ভালোবাসবি বইললা তুই দিয়েছিস

জ্বালাময়ী তীরের সাজ।

সুখ হারালো ভাষা রে মন

সুখ হারালো ভাষা।।


একটিবার ও জিজ্ঞেস করিসনি তিথি

কেমন কাটছে সময়,

ঘুম পাখীটা ও পালিয়ে বেড়াচ্ছ  আজো

অনুভব ব্যাথার অময়,

সুখ হারালো ভাষা রে মন

সুখ হারালো ভাষা।


যেদিন খবর নিতে আসবি রে তুই

দেখবি পোড়া দেহ,

স্মৃতিপট বুকজুড়ে থাকবে তোর’ই

আমি’ই অন্যকেহ,

সুখ হারারো ভাষা রে মন

সুখ হারালো ভাষা।।


নীল আঙিনায় সবুজের মেলা

আশরাফ  খান 


আবার যদি ফিরে আসো একবার দেখে যেও

কতোটা যুবতি হয়ে উঠেছি আমি পূর্ণবার

লাল সবুজ ঘোমটায় কতোটা সুন্দর হয়েছে আমার অবয়ব 

তুমি যখন আমাকে দেখেছিলে তখন আমার ভীষণ দুঃসময়

তখন আমার অনুচ্চারিত ধ্বনিগুলো শব্দ হওয়ার আগেই হারিয়ে যেত 

বুকের হিমঘরে লুকিয়ে থাকত স্বাধিনতা সংগ্রাম রণাঙ্গণ

বাহিরে এলেই বুটের তলায় পিষ্ট করা হতো নীল গোলাপ

জয় বাংলা বলার সাহস ছিল না আমাদের ; তুমি সবই জানো  

তুমি যখন আমাকে দেখেছিলে

তখন আমি এক ধর্ষীতা নারী ছিন্নভিন্ন আমার শরীর

বস্ত্রহীন সোন্দর্যহীন আমাকে দেখে

তুমি লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছিলে।  

 

আবার যদি ফিরে আসো একবার দেখে যেও 

আমি এখন বীরাঙ্গনা নারী দাড়িয়ে আছি লালসালু স্টেজে

সসস্ত্র বাহিনীর সসস্ত্র স্যালুটের সামনে সারিতে  আমি এবং আমরা  

ফুলেল শুভেচ্ছায় ভরে উঠেছে আমাদের  হতচ্ছড়া আঙ্গিনা 

আমাদের নীল বাগান থেকে মরা পাতাগুলো ঝড়ে গেছে

নতুন কুড়ি গজে উঠেছে সেখানে; সবুজের  মেলা বসেছে নীল আঙিনায়

তুমিতো এইটুকুই চেয়েছিলে। 


আজ এখানে 

শ্রদ্ধা আছে....

ফুল আছে ...

ভালোবাসা  আছে....

সবই আছে 

শুধু তুমিই নেই....

 



অশ্রু

অসীম মালিক


অশ্রু তুমি কার?

শুধু মায়ের !

শুধু বাবার !

নাকি শুধু চোখের !


অশ্রু কার রঙে?

মরা নদীর গাঙে,

রক্তমাখা চাঁদ

চৈতি মেলার সঙে !


অশ্রু কার সীমা?

সে কী চেনে সুর্মা !

আঁচল আছে তার?

করতে জানে ক্ষমা !


অশ্রু চেনে চোখ,

প্রেমিক কিছু লোক।

কাজললতা যারা,

আঁচলে মোছে শোক।


আকাশ পেলে চোখ,

বৃষ্টি কিছু হোক।

পাথর বুকে শোক,

নদীজন্ম হোক !



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট