পদাবলি : ০১

 



মিস ইউ

জহির খান


খুব কী জরুরী এখন এমন প্রস্থানে প্রিয়তু

পাঠে অপাঠে কিছু সময় থাকতেই পারতে


আজ আহ্ কী মায়ায় কায়ায়

কিছু মেঘ বুকের বাম পাশটায়

খুব করে কাতরাচ্ছে কাঁদছে

এই শাদা শূন্য রাত বিরাতে

যুগল ¯্রােতের পাল তাড়িয়ে


এই বেশ ভালো নেই- এখন

মুখের ব্রুন ও চোখের নিচে কালো দাগ

সেই সাথে ভালো নেই হাত ও পায়ের নখ

ভালো নেই মন খারাপ করতে নেই


ভালো নেই পাশে আছি এইসব কথালিপি

ভালো নেই ভালো নেই ভালো নেই

মনে পড়ে মনে করে যাপনের সুখ...




বসন্তনামা

রফিকুল নাজিম


আমার ফাগুন গুম করেছে দস্যু সেই জনে

পলাশ শিমুল রঙ ধরেছে অন্য কারো মনে,

অন্য ডালে গান ধরেছে চেনা কোকিল পাখি

অন্য চোখে ফুল ফুটেছে আমার ভেজা আঁখি।


তোমার গলায় মিষ্টি শুনি বসন্তের ঐ গান

শীতের ঝরা পাতার বুকে উড়াল পিছুটান,

আমার ফাগুন তোমার হলো আমি শূন্য হই

ফের বসন্তের আশায় আমি কান পেতে রই।


একদিন যদি আসে ফাগুন তুমি ফিরো ঘরে

সেইদিন মনে ফুল ফুটিবে পাখির মিষ্টি স্বরে,

আমরা দু’জন হবো সুজন বাসর সাজাবে ফুল

মুছে যাবে বিষাদ প্রহর অতীত দিনের ভুল।



প্রভেদ

রেহমান আনিস


তোমরা যখন মনের সুখে জোছনা দেখ, আকাশ দেখ বিষন্নতার ভার কমাতে সাগর দেখ, ঊর্মি দেখ

আমরা তখন কাঁদার মাঝে হাঁটু গাড়ি, হাত গুজে দিই, দুচোখ ভরে সবুজ দেখি।


তোমরা হলে অনেক বড়, ইচ্ছা হলেই যা খুশি তাই করতে পারো 

আমরা হলাম বিশ্বায়নের নব্য গোলাম, দেই তোমাদের হাজার সালাম।


তোমরা যখন ইচ্ছে মতো উড়তে পারো, ঘুরতে পারো আমরা তখন পথের ধুলো, খড়কুটো আর আবর্জনা।


তোমরা হলে উপর ওয়ালা, হুকুম দাতা 

আমরা হলাম দাসদাসী আর মানলে ওয়ালা। 


তোমরা সাহেব, তোমরা কুলীন তোমরা হলে

ইচ্ছা স্বাধীন 

আমরা তো সেই গ্রাম্য চাষা, রিক্সাওয়ালা, লোহার শ্রমিক।


তোমরা যখন অস্ত্র চালাও, কলম চালাও, দম্ভ করে বুকটা ফুলাও

আমরা তখন ভুইফুড়ি আর সুঁই ফুড়ে খাই, ঘাম ঝরে যায় 

চোখের কোণায় অশ্রু গড়ায় সকাল-বিকাল সন্ধ্যাবেলায়, রাতের বেলায় তারায় তারায়।


তোমরা কেবল হুমকি দিলে ধামকি দিলে চোখ রাঙালে, একটি বারো ভাবলেনা যে

আমাদেরও ইচ্ছে করে নীল আকাশের পাখি হতে জোছনা রাতের চাঁদটি হতে 

বলছি আবার ইচ্ছে করে 

সকালবেলার সূর্য হতে, কাজল বিলের শাপলা হতে এমন আরও অনেক কিছু আমাদেরও ইচ্ছে করে।


ভাগ্য যখন হয়না ভালো, অন্ধকারে দেয়না আলো, ওসব ভেবে লাভ কী বল?

তারচে বরং সামনে চলো, পথের মাঝে যা কিছু পাও শোকর করো।


ছন্দ: স্বরবৃত্ত



ভেসে যায় বসন্তদিন

সাদিক আল আমিন


বাতাসের মৈথুনের মতো উড়ে উড়ে ছড়িয়ে পড়ে রেণু

অথচ আমার সলাজ বিকেল কথা ছড়ায় না

যেমন কথা ছড়ায় দেবদারু, তোমাকে ছায়া দেয়া কৃষ্ণচূড়া

আমার শুকনো খড়ের মতো হলুদ দুপুর কথা ছড়ায় না

গোলপাতায় বসত গড়ে তোমাকে ছুঁয়ে আসা গল্পেরা

তোমার বাড়ির উঠোনে কবুতরকে খেতে দেয়া রূপকথার দানাগুলো

সহজেই একেকটা গল্প হয়ে ওঠে

তোমার বাড়ির স্যাঁতসেঁতে গলির শুরুতে স্বপ্নেরা ঘুমিয়ে পড়ে

শরীরে দিয়ে প্রণয়ের আস্তরণ, আমি জেগে উঠি ভুল ঘুম-জগতে

বিভ্রান্ত কিছু মোহের মতো কোথা থেকে যেন বাতাস আসে

কাঙ্ক্ষিত লজ্জার দানাগুলো সব উড়ে উড়ে যায়; আর আমি

আশ্চর্য খয়েরি-রঙা এক কবুতর হয়ে পিছু নেই চির মিথ্যে সেসব গল্পের




তুমি রইদ পোহাইলে

মাসুদ পারভেজ


তুমি রইদ পোহাইলে

আমার বোধের আঁতুরঘরে আগুন লাইগা যায়,

আইচ্ছা, তুমি যে রইদ পারা দিয়া পুকুরে যাও- সূর্যে খারাপ লাগে না?

আমি হইলে তামাম দুনিয়া জ¦ালাইয়া ছারখার কইরা দিতাম।

তুমি পুকুরে ডুব দিলে পানি যে তোমারে কেমনে কেমনে জড়াইয়া ধরে....!

বিশ্বাস কর, আমার ইচ্ছা করে পুকুরটারে পুরা শ্মশান বানাই ফেলাই!

এই উতলা বাতাস তোমার চুল নিয়া আঁচল নিয়া কেমনে খেলে....

আমার বুকের ভিতর তুফান শুরু হইয়া যায়, কাউরে কিচ্ছু কইতে পারি না ।

রাইতে তুমি উঠানে দাঁড়াইলে চাঁদটাও তোমার দিকে এমন কইরা তাকায়

আমার ইচ্ছা করে একটা বঁটি লইয়া চাঁদটা ফালা ফালা কইরা ফেলাই।

বাত্তি জ্বালাইলে আলো তোমারে চুমাইয়া ধরে নিভাইলেই আঁধার, আমি কই যাইতাম তোমারে লইয়া!!

আয়নার সামনে যাইতেই তোমারে তার ভিত্রে ঢুকাইয়া ফেলায়, আমার নিঃশ্বাস ভারি হইয়া ওঠে।

দামি বেদামি কসমেটিক্স লিপস্টিক ঠোঁটে লাগাও, মুখে লাগাও, গায়ে মাখো- তারা কি তোমারে ছাইড়া দেয়?

খালি আমারে ছাইড়া তুমি দূরে থাক

আমার চোখ তোমারে ছুঁইতে পারলেও আমার হাত তোমারে ছুঁইতে পারে না,

মনে রাইখো-

আমার পরান তোমারে যেইভাবে ছোঁয় দুনিয়ার কোনো কিচ্ছুই আর তোমারে তেমন কইরা ছুঁইতে পারে না, পারবো না।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট