কলঙ্কিনী
তুমি নাকি যাত্রাপালা দেইখ্যা আইছো নাগরের সাথে
এখন ক্যামনে নলা দিবা আমার ক্ষেতের ভাতে
শইলের রক্ত পানি কইরা তোমার লাগি তুলি নতুন ধান
সেই সব আমার স্বপ্ন ভাঙলারে খানখান!
তুমি নাকি পান খাইয়াছো রসিক জনের হাতে
এখন ক্যামনে আমার ক্ষেতের সালুন তুলো পাতে
রইদে পুইড়া মেঘে ভিইজ্যা সবজি ফলাই আমি
ক্যামনে তুমি করতে পারলা এরুইম্যা বদনামী?
তুমি নাকি ভিন্ নাগরের হাত ধরছো আজ
এখন ক্যামনে পাতে তুলো আমার পুইরের মাছ
মাঘ মাইস্যা শীতের রাইতে মাছ ধরিয়া আনি
তুমি ক্যামনে দিতে পাল্লা সতিত্বের কুরবানী?
তুমি নাকি লাঙের লগে ঘুরতে গেছো, হচ্ছে কানাকানি
এখন তুমি ক্যামনে পি'বা আমার কুয়ার পানি
মাতার ঘাম পায়ে ফেইল্লা কুয়া খুড়ছি নিজে
ক্যামনে তুমি পারলা এমুন, কাপলা না কি লাজে?
তোমায় নাকি আইজ সারাদিন সঙ্গ দিছে নাগর
এখন কেমনে ফিইরা আইলা আমার কুড়ে ঘরে
উত্তরেত্তে ছন আনিয়া ঘরে দিছি ছানি
সেই ঘরেতে থান পাবে না কোনো কলঙ্কিনী।
তোমার চোখে আমিও বর্ষা হয়ে যাই
বৃষ্টির ফাঁক গলে এক চিলতে কিরনের মতো চকচকে
তোমার দুটো চোখ
ঝলসে দেবার মতো তীব্র নয় অথচ তাকানোও যায় না
কেমন যেনো হীরের ফলার মতো দৃষ্টিকে কেটে কুচি কুচি করে
দু'চোখে জল ঝরে পড়ে ওই চোখে চোখ রাখলে!
তোমার মনের আকাশজুড়ে মেঘ, মেঘের জোয়ার
ঝমঝম সারাদিন
আনত চোখ তুলে যখনই তাকাও– মেঘার্ত আকাশের শুভ্রতা
কি অবলীলায় কাটে আমার দু'চোখ! আমিও বর্ষা হয়ে যাই।
খেয়া আমি বেয়ে যাবো
কিছুই পারিনি হতে, এ পথে এখনও আমি ছাত্রই নই
সুবিশাল জলমর্মরে, একবিন্দু শিশির যেনো হই।
দুপুরের টগবগে রোদে, দেশলাই কাঠি আজো হইনি
বুকেতে বারুদ ধরি, এই কথা সাহস করে কইনি।
আজও অন্ধ, মুঢ় আমি; অথচ দিগন্তভরা নান্দনিকতা
আজও আলস্য সখি, কাটলো না জ্ঞানের জড়তা।
সবুজের সমারোহে আমি ক্ষুদ্র পতঙ্গও হতে পারলাম না
ভেতরে বিষের বালি, এই কথা বলতেও যেনো মানা।
কবিতার অবারিত সপ্তাকাশে, আজও হইনিকো পাখি
এই দুঃখ কি দিয়ে নিভাই, কোনখানে এই ব্যাথা রাখি?
তবুও জানি চর্চা আমার সমুচ্চয়ী পথ, দৃঢ় করে হাল
সাহিত্যের খেয়া আমি বেয়ে যাবো, অনন্ত মহাকাল।
পাথরের মন
কতোটা পাষাণ তুমি হইয়া গেছো চিন্তা করতে পারো
আমার বিরহে চোখে একবিন্দুও জল ঝরে নাই
কতোটা নিদয়া তুমি হৃদয়ের কারবার করো
আমারে দহন দিলা পুড়াইয়া কইরা দিলা ছাই
কি করে এতোটা নিঠুর হইলা তুমি দয়া মায়াহীনা
আমারে কবর দিলা নিজ হাতে, তবু কাঁদলা না!
যখন আমি যাইতে চাইলাম খাঁচা ভাঙা পাখিটির মতো
নিজ হাতে দুয়ার খুইল্লা উড়াইয়া দিলা আমারে
আমিও আকাশ চিনি, পোড়া বুকে জন্মের ক্ষত
কি করে ফিরাই আনবা, যদি কেউ কোনোদিন না ফিরে
এই যে চইলা গেলাম তবু তোমার হইল না শোক
বুঝলাম, সারাজীবন কাটাই দিছি বাইছা ভুল লোক।
নদীর ঢেউয়ের মতো পাড় ভাঙে আমার সর্বক্ষণ
তবুও গলে না সখি তোমার ঐ পাথরের মন।