পদাবলি

 



ভালোবাসা অফুরান

মিশির হাবিব


প্রথম দেখাতেই ‘ভালোবাসি’ বলে চিৎকার করে পিছনে দৌড়াতে নেই।

ভালোবাসার আগে বুকের মধ্যে ভালোবাসা সঞ্চয় করতে হয়।

জমতে জমতে যখন এক মহাবিশ্ব ভালোবাসা হৃদয় উপচে পড়ে, তখন ভালোবাসার কথা ভাবতে হয়।


এমনভাবে ভালোবাসবে যেন- কাউকে ভালোবাসার পর জ্ঞানহীন হয়ে যাও।

তাকে অন্তত একপলক না দেখলে কথা ফুটে না মুখে,

হাঁটতে গেলে অন্ধ চোখে হুমড়ি খেয়ে পড়ো,

সে হাতটি ধরে না উঠালে উঠতে পারো না।

এমনভাবে ভালোবেসো যাতে ভালোবাসার মানুষটি শত ভুল করলে ‘টু’ শব্দটি করার শক্তি পাও না,

নিষ্ঠুররূপে চলে গেলে মুখ থেকে বের হবে না কোনো অভিশাপসূচক বাক্য।

ভালোবাসার আগে ভালোবাসার পরিমাণ পরীক্ষা করে নিও চোখে,

যেখানে তার সমলিঙ্গের মানুষ দেখলে ভালো  লাগে না,

হঠাৎ করে জেগে ওঠে না পুরনো সুপ্ত প্রেম

বারবার ভেসে ওঠে শুধু তার মায়াভরা মুখ- যা এঁকেছো হৃদয়ে।


সে মারুক, কাটুক, জ্বালাক কিংবা পোড়াক,

একবিন্দু ভাবার সুযোগ নেই ভালোবাসায়-

অসীম সহনশীল ভালোবাসা নিয়ে পা দিও ভালোবাসতে।

ভালোবাসা পারসেন্টেজ হিসাব করে হয় না,

ভালোবাসা সবসময় একশো ভাগের পরিমাপ;

এমনভাবে ভালোবেসো যেন

ভালো বাসতে বাসতে ধুঁকে ধুঁকে মরে যেতে হয়,

কাউকে ততটাই ভালোবেসো, যতটা ভালোবাসলে নিজের কাছে অবশিষ্ট থাকে না।


ভালোবাসা পৃথিবীর কঠিনতম কাজ,

ভালোবাসা এক সবহারানো নেশা,

সব হারিয়ে নিঃশেষ হওয়া ভালোবাসাই অর্থবোধক।

ভালোবাসার আগে কয়েক কোটিবার ভেবে নাও,

ভালোবাসার পর ভাবতে যেও না লোকসানের ক্যালকুলেশন;


এক মহাবিশ্ব ভালোবাসা হৃদয়ে জমিয়ে তারপর ভালোবাসতে যেও যেন ভালোবাসা ফুরাবার আগে তুমি’ই ফুরিয়ে যাও।



বিভাজন 

কামাল আহমেদ 


প্রিয়, মিথ্যে স্বপন করিনা বপন,

কারো খ্যাতি-চন্দন করিনা মোচন।


দেশ-মাতা-মাটি যত পরিপাটি,

স্বপনের হাঁটাহাটি রাখি তত খাঁটি। 

আপনারে তাই ছোট ভাবি ভাই, 

স্বপন সাজাই, ঘাস পথে যাই,

গালিচাতে হাঁটিনা ভাবি তা বারণ।


পথে পথে যার গালিচা সোনার , 

অধম কি আর পথ মাড়ে তার? 

তারই সুখ-গান করি বিরচন।


তুমি-আমি-ওরা সুখে-দুঃখে জোড়া, 

এক ভবে মোরা এক মাটি-গড়া। 

তবু কেন প্রিয়জন এতো বিভাজন? 



ফুঁ

সাইফুল ইসলাম 


পৃথিবীর সকল অবিশ্বাস পুরাতন ন্যাকড়া হয়ে পরে আছে ফ্লোরে; কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকারে মাধবীলতার বারান্দায় ঝুলে আছে বিশ্বাসের লাল জামা। আজকাল গোলাপের আত্মহত্যায় কান্না করে না কেউ। দিন ফুরিয়ে গেলে, মানুষের অনুভূতিও  ফিকে হয়ে যায়; মিলিয়ে যায় অদৃশ্যে। রাত বাড়তেই থাকে; লোনা ধরা হৃদয়ের অমীমাংসিত সন্ধির; গোপন সিন্দুকে লুকিয়ে রাখা বহুযতেœর রাত। ম্যাচ বাক্স হাতে নিয়ে বৃষ্টির রোমান্টিকতা ঘষতে থাকে কাঠি। জীবন কি তবে আগুন নিভিয়ে দেওয়ার মতোই; ঠোঁট গোল করে মুখ থেকে বের করে দেওয়া নির্গত বায়ু— ফুঁ?




বিশ্বাসের মহানদী

এনামুল হক রিয়াদ


এ যেনো বিশ্বাসের মহানদী, যেখানে

খর¯্রােতার মতো ভেসে যায় অবিশ্বাস।

দেখো, ঐ জলসরা লোকের গা

কী সফেদ, অমলিন ও স্বচ্ছসলিলা। 

পাঁচবার বিধৌত এই নির্মল তনুশ্রী।

যেন নির্মল সলিল ধোয়া তার দেহ।


বিশ্বাস যার হৃদয় সরোবরে হিল্লোল,

অবিশ্বাস সেখানে সফেন সমতুল্য-

জলের বুকে ভাসন্ত খড়কুটো, বুদবুদ। 

কাল শেষে এদের অস্তিত্ব শূণ্যতায়। 

অবাধে আস্পর্ধা থেকে নিস্কলুষ সে।

এতো পূত জীবনের সওগাত ও স্বচ্ছতা!


আযাযিল তাকে কুমন্ত্রণায় ব্যস্ত রাখে;

তাওবার সরোবরে ডুবিয়ে ডুবিয়ে-

সে আবার নিঃস্পৃহ ও নিষ্পাপ-সুবোধ!

আরাধনা মুখর জীবনে আর কী চাই,

আয়ুস্বল্পতা সেতো অলক্ষ্যেই বিধিবদ্ধ। 

মানুষ বুঝুক এটা মহামতীর পরওয়ানা। 


বার্ধক্য তার প্রথমা চিরকুট-পয়গাম!

মৃত্যুই শেষ ফয়সালা, আখের আঞ্জাম!

চলো, সিরাতে মুস্তাকিমের পথে এগোই,

যার শেষ সীমানা শাহাদাত ও জান্নাত। 

সেই তো মহাসাফল্যের মুকুট মাথায় !




হস্তশিল্প হোক আঁচলের ক্ষতস্থানে 

রুদ্র রাকিব 


তোমার পুরনো আঁচলের ক্ষত স্থানে; হস্তশিল্পের দক্ষতা লুকিয়ে নিজের মুখকে হাতে ঢেকে রাখা লাজুক রমনী। 

তোমাকে ভালোবাসি লক্ষী; তোমার হাতের বাঁকা সেলাইয়ের ফোঁড়ে তোমার জীবনের কত কাহিনি। 

তোমাকে দেখে কত নারী সেই নকশীকাঁথার মাঠে; জীবনের স্মৃতি গেঁথে রেখেছে; শখের বিলাসিতা বলে।

তুমি যা লুকিয়ে রেখেছিলে; লজ্জায় মাথা ঢেকেছিলে! সেটা নিয়ে কত সিঁদুর হারা নারী। একা জীবন সংগ্রাম করে; বাঁচতে শিখেছে।

ভালোবাসি তোমার পুরনো জামার গায়ে সুঁইয়ের সেলাই করা আলপনা। যেন হারিয়ে না যায়- এই দক্ষতার ললাট। সিঁদুর হারিয়ে যাক; কাজের মধ্যে দিয়ে হোক নতুন জীবন আবার।




সাধারণ ছেলে

জালাল উদ্দীন ইমন 


আমি যে গাঁয়ের সাধারণ এক আলাভোলা ছেলে

ময়না শালিক সোহেলি কাকেরা ডাকে বেশি ঘুম এলে।

পাহাড় চুড়ায় কমলা রঙের সূর্যটারে ধরে

হাতের মুঠোই ভরে।

সারা গায় মাখি দারুণ উৎসাহে,

যদিও পুড়িয়ে মারে সে আমারে তীব্র দাবদাহে। 

পিপুল বনের ঝাঁঝালো হাওয়ায় চোখ বুজে আসে

রাতের আকাশে জোনাকি মেয়েরা ঘুরে আশেপাশে। 

ঘুঘুরা গুবগুব ডেকে হয় সারা

হিম হিম সুরে চেয়ে থাকে দূরে লক্ষ্মীপ্যাঁচারা।

হলদে খেঁজুর থরেথরে সাজা যেন দাদিমার চুল

বাঁশঝাড়ে কাঁদে হাহাকার সুরে বুঝি বিরহে আকুল।

যদিও না বুঝি বাতাসের ভাষা, মন বুঝে ঠিক

সবাই ঘুমিয়ে গেলে তাই মন ছুটে চারিদিক।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট