গল্পের শুরু এখানেই...
ইয়াকুব শাহরিয়ার
আজকে টিউশনিতে যাবো না। ভালো লাগছে না। ভাবি ফোন দিলেন। ভাবি মানে- স্টুডেন্টের মা। যে ছাত্রকে পড়াই তার মাকে ভাবি ডাকি। তিন বছর ধরে পড়াই। কেজি টু’তে পড়ে। ফোন পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরক্তির ছাপ মুখে নিয়ে উঠে যাই। বাসা থেকে বেড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছি। অফিস থেকে ফোন এলো। সন্ধ্যায় বসের ফোন পেয়ে পিলেচমকে উঠার মতো অবস্থা। আরেকটা অফিসে চাকরি করি। আমার মূল পেশা চাকরি। টিউশনি না। ভাল লাগে তাই করি। দরকারি কাজে অফিসে যেতে হবে। অফিস আমার বাসা থেকে বেশ দূর না হওয়ায় হেঁটেই চলে গেলাম। একটা হিসাব বসকে বুঝিয়ে দিয়ে টিউশনিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
অফিস থেকে বের হতেই রিকশার ড্রাইভার একজন বলল- মামা কই যাবেন? রিকশা পেয়ে যাই। রিকশাতে চড়ে বসে টিউশনিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বাসায় ঢুকতেই দেখি আবির বসে পড়ছে। আবির আমার ছাত্রের নাম। তিন বছরে একদিনও দেখিনি আমি আসার আগে এভাবে পড়তে বসেছে। কিছুটা অবাক হলাম। আমি ঢুকতেই আবির বলল- গুড ইভেনিং স্যার। রিপ্লাই দিয়ে কিছু বলতে না বলতেই মনোযোগ অন্যরুমে গেলো। চিকন গলায় কে একজন বলছে- এমন টিচার বাবার জন্মেও দেখিনি। নিজের ইচ্ছা মতো আসেন। দায় দায়িত্ব বলতে কিছু নাই। কি দরকার উনাকে রাখার। দেশে আর টিচার নাই, নাকি? বলতে বলতে এদিকেই আসছে। কাছে এসে বলছে- আবির, আজ তোর বাবাকে বলবি টিচারকে...... বলতেই আমার সামনে এসে হাজির। হাতে হরলিক্সের গ্লাস। তবে তাতে হরলিক্স আছে বলে মনে হয় নি। কারণ আবির হরলিক্স খায় না। সে চা খায়।
আমাকে দেখে থমকে গেলো মেয়েটি। কোনো কথা নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হরলিক্সও দিচ্ছে না। আবির বললো- সোনামনি, দিবে? গ্লাসটা দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো। আমার চোখ ছানাভরা! চিপচিপা গড়নের আরো মেয়ে দেখেছি, এতো সুন্দরি দেখিনি। চমৎকার চোখ, মুখ, চুল আর কণ্ঠ। আমিও কিছু বলিনি। শুধু মুচকি হাসছিলাম। এতোক্ষণে বুঝে গেলাম যে, সে ভাবির বোন। মানে আবিরের খালা হয় সম্পর্কে। সোনামনি ডাকে আবির। অনেক প্রশংসা শুনেছি সোনামনির।
কিছুক্ষণ পড়িয়ে নিলাম আবিরকে। তার মা চা নিয়ে আসলেন। সাথে সোনামনি। আবিরের আম্মু হাসছেন। ভদ্র মহিলা খুব ফ্রিয়ার। ভাল। তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন- ও হচ্ছে কুসুম। আমার ছোট বোন। এমসি কলেজে গনিতে অনার্স করছে। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। তার কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। ও এরকমই। তিনি চলে গেলেন। কুসুম সরি বললো। বললাম- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আমু। কিসে পড়ছেন, সিলেটে কোথায় থাকা হয় এরকম কথায় কথায় অনেক কথা হলো। আবির আমার আর কুসুমের মুখের দিকে বার বার তাকাচ্ছিল আর হাসছিল।