রাহুর দশা
মাজরুল ইসলাম
ভুল বুঝিয়ে এখন আবার
সে নতুন চাল চালায় মত্ত
অথচ
এই চালের ক্ষুদ্র পরিসরে
চাঁদের পাহাড় অনাবৃত শুয়ে আছে
প্রলয়ের কোল ঘেঁষে।
উথাল পাথাল যাপিত জীবন।
এসো,
আগে-পিছে যে রাহু অক্টোপাসের মতো লেগে আছে
তার গতিটা মেপে দেখি...
পঙ্গুত্ব হৃদয়
সাগর আহমেদ
ক্রমশ ভুলে যাই বেদনার রং কি?
কষ্টগুলো মনের গভীর হতে উত্তির্ন হয়ে
চোখজোড়া ভাসিয়ে বুকে এসে মরে,
মেরুদ-হীন স্বপ্নগুলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে
হুইলচেয়ারে বসে কত আর বেঁচে রবে
চাঁদের প্রভায় আলোকিত সমগ্র পৃথিবী
অথচ স্মৃতির বারান্দা জুড়ে গাঢ় অন্ধকার।
নিস্তব্ধ রজনীতে জোনাকিরাই সঙ্গী ছিলো,
আজ দূরের পথটার মতোই নিঃসঙ্গ আমি
বেদনার মিছিলে পথ খুঁজে পঙ্গুত্ব হৃদয়।
খেলাঘর
জাহিদ আজিম
খেয়াল বশেই তুমি বানাও খেলাঘর
খড়কুটো-স্বপ্নেতে ছাউনি গাঁথো,
প্রণয়ের সুরে ডাকো যে হেতায়
সুখ-গল্প আমাকে শোনাবে যতো!
নিরব নিশিতে নিঝুম পৃথিবীটা
মোহনীয় মুগ্ধতায় জড়িয়ে রাখো,
জোছনা ঢেলে মায়াবি জালে
এ হৃদয়ে গভীর আবেশ মাখো।
আপন আঙ্গিনায় এক্কাদোক্কা খেলো
আমাকেও দোলাও হেয়ালী মনে,
উচ্ছাসে ভাসি, বেখেয়ালে কি যে বকি!
কতো কথা উড়ে আসে গল্পের টানে।
হঠাৎ দেখি ঐ চাঁদ-মুখে গ্রহণ
আধারেই ঢেকে যায় সব আয়োজন,
হাত বাড়িয়ে খুঁজি, কেউ যে নেই!
একা ফেলে তুমি দূরে! একি প্রহসন?
ক্রিড়া-হেতু যে বায়ু বহে বাতায়নে
তাকেই তো তুমি ভাবো ভীষণ ঝড়!
যদি বাঁধন ছিড়ে এতো সহজেই
কেনো তবে বাঁধো এমন খেলাঘর?
ভাবনা বৃত্তান্ত
আকিব শিকদার
কী ভাবছো ফজলুল, কী ভাবছো বলো?
তোমার তিনটি সন্তান।
একজন ভিনদেশে, একজন সুদূর রাজধানীতে স্বস্ত্রীক, অন্যটা
সাথে থেকেও খবর নেয় না তোমার। এই তো...?
বন্ধু জাহিদ, তার মৃত্যুতে জানাজা পড়িয়েছিল
তার বড় ছেলেটা।
তোমার কী দুর্ভাগ্য, তোমার বেলা
মোল্লা আনতে হবে কর্জে। কেননা একটি ছেলেও
যোগ্য হয়ে উঠেনি।
চেয়েছো তুমি সন্তানেরা হোক বড় বিদ্বান, করুক
বংশের মুখ উজ্জ্বল, যোগাক অর্থ অঢেল।
বিনিময়ে স্ত্রী-সন্তান একত্রে বসবাসে কী যে স্বর্গসুখ
তা পাওনি কখনো।
আজকাল প্রতিবেশিদের কেউ
যখন নাতি-নাতনি নিয়ে ঘোরে, করে খেলা এটা ওটাÑ
অথবা গল্পগুজব। বড়ো লোভ হয়Ñ তাই না...?
তোমার শহুরে দৌহিত্র, গ্রামকে করে ঘৃণা, তোমাকে ভাবে
সেকেলে মানুষ...!
মানুষের ছেলেরা বৃদ্ধ বাবাকে হাত ধরে বসায় রোদে, সযতনে
করায় গোসল, যায় মসজিদে, ঈদের নামাজ পড়ে
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে; অসুস্থ হলে ছুটে হাসপাতালে।
তোমার বেলা একটা দাসী আর একজন নধর মরদ, যারা
টাকার বদৌলতে দেখায় কৃত্রিম শুশ্রুষার ভান।
কত লোকের ঔরস গোরস্তানে
হাত তুলে কাঁদে, করে কোরান পাঠ। তোমার ভাগ্যে জুটবে
এক আঁটি ফুলÑ বছরে-দু’বছরে একবার।
তোমার উত্তরাধিকার শিক্ষিত, সুতরাং ফকির খাওয়ানোতে
বিশ্বাসী নয়। মৃত্যুদিবসে তারা
করবে বাদ্য-বাজনার আয়োজন...! যা চাওনি তুমি।
কী ভাবছো ফজলুল, জীবন সায়াহ্ণে কী ভাবছো বলো...?