যে গল্পটা লেখা হয়নি....
হাসান মাহাদি
আচ্ছা কোলাহল ছাড়া গল্প হয়? যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব নেই সেখানে গল্প নেই। যেখানে প্রাণ আছে সেখানে কোলাহল আছে। প্রাণের অস্তিত্বের নিরবতাও কোলাহল। নিরব কোলাহল। হয়তো লেখক নেই নয়তো পাঠক নেই। শব্দের পদচারণা আছে সবখানেই, হয়তো নেই শব্দের সাথে নিঃশব্দের আরাধনা। হয়তো কখনো কখনো লেখকের অভাব নেই। অভাব শুধু গল্প আর জীবনের মেলবন্ধনের। হয়তো সেই মেলবন্ধনে সুর থাকে, থাকেনা স্বরাগমের সঠিক ব্যাকরণ।
আমি সন্যাসী নই, আমি কোলাহল খুঁজি। আমি লোকালয় খুঁজি। শত শত মানুষের রেখে যাওয়া ভীড় নিস্তব্ধ নয়। মিছিল শেষে রাজপথগুলো স্লোগানহীন নয়। গুলিস্তানের ‘একশো, একশো’ বলে দর হাকানো হকারের চিৎকার, পুরান ঢাকার অলিগলিতে লোহার দোকানগুলোর টুংটাং বিচ্ছিরি আওয়াজসহ এই শহরের যন্ত্র কিংবা মানবের অসংখ্য শব্দদূষণ রাতের আঁধারেও মিলিয়ে যায় না। দিনের বেলাতে মোটরের ধোঁয়ার কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো সেই শব্দদূষণ থেকে যায় এই শহরের বায়ুমন্ডলে। আমি শূণ্য মাস্কে সেই কার্বন ডাউ অক্সাইডে আক্রান্ত হতে মাঝ রাতে বেরিয়ে পড়ি। নিঃশব্দে শব্দের খোঁজ করতে। এ শহর আমাকে শুনায় সফলতা আর ব্যর্থতার গল্প, স্বপ্ন পূরণের গল্প, স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প। সে আমাকে শুনায় সংগ্রামের গল্প। ব্যস্ততা আর বাস্তবতায় ঘিরে থাকা জীবনে যে গল্পগুলো শুনার সময় হয় না, সেগুলো এ শহর আমাকে বলে। জীবিকার তাড়নায় কত মানুষের কত রাত বিনিদ্রা আর হাহাকারে মিশে একাকার হয়ে গেছে তার হদিস শুধু লিপিবদ্ধ আছে এই শহরের খামোশ শুনানিতে।
আচ্ছা অন্যের গল্প খুঁজে কি লাভ? আমারো অনেক গল্প এই শহরের বোবা আর্কাইভে জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গল্প লিখেই কি লাভ? কিছুদিন পর ব্যর্থ হলে অন্যের সমবেদনাও আমাকে স্পর্শ করবে না। স্বপ্নের পেছনে ছুটছি আমিও। সফলতার সন্ধানে আমিও আছি। এই শহরের ছুটন্ত প্রত্যেকটা জীবনই জানে ব্যর্থতার গল্প কেউ শুনতে চায় না। ব্যর্থতার সবগল্পই দূষিত শহরের ধূলোর আর্কাইভে ঢাকা পরে যায়। শুধু সফলতার গল্পগুলোই কোলাহলের বিলবোর্ডে বিউগল হয়ে বাজতে থাকে।
দিন শেষে গল্প সেগুলোই যেগুলো মানুষ শুনতে চায়। আমি গল্পকার নই। কাউকে শুনানোর মতো নিজের সেই গল্পটা এখনো লিখতে পারিনি।
ভিক্টোরিয়া পার্ক, পুরান ঢাকা।