পারিবারিক অ্যালবাম

 

    গ্রাফিক্স : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


পারিবারিক অ্যালবাম

আরিফুর রহমান 


‘এমন জোরে হাঁটছে যেন বাড়িতে কেউ মারা গেছে!’ মুখ ফসকে কথাটি বেরিয়ে গেল আমার। 

লোকটি আমার আগে আগে হনহন করে হাঁটছেন। আমি কিছুতেই তার সাথে পা মিলিয়ে চলতে পারছি না। এদিকে আমাদের সামনে কিলোমিটার খানেকের এক পাথার। তাছাড়া একটু দূরের খালের উপরে যে ব্রিজ তার গা ঘেঁষে একটি শ্মশানও আছে। তিনি আর আমি ছাড়া এই সন্ধ্যার মুখে এপথে আর কেউ নেই। তার সাথেই আজ আমাকে এই পাথার পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। অথচ আমি তার নাগালই পাচ্ছি না! ফলে মনে মনে বিরক্তি বাড়ছিল, সাথে ভয়ও, তাই কথাটি বলে ফেলেছি! 

আমি ছোটোবেলা থেকেই কিছুটা ভীতু। ওই যেদিন একজন প্রতিবেশীর কাফনে মোড়ানো শরীর দেখে চমকে উঠেছিলাম পরিচিত অবয়বের ব্যতিক্রম বলে এবং রাতে ভীষণ জ্বর হয়েছিল, সেদিন থেকে। আর সেদিনই ভয়টা আমার মনে যোগ হয়েছিল, কারণ রাতভর জ্বরের ঘোরে জানালার পাশের চিরপরিচিত জারুলগাছ জুড়ে দেখতে পেয়েছিলাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাফনের কাপড়! ‘ওই যে তরু মিস্ত্রি, ওই যে তরু মিস্ত্রি!’ সবাই আমার এমন বিড়বিড় শুনে বুঝতে পেরেছিল আমি তরু মিস্ত্রির লাশ দেখে ভয় পেয়েছি। তারপর বহুদিন আমাকে কোনো মরাবাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি! 

আমার কথা শুনে লোকটি থমকে দাঁড়ালেন এবং ঘাড় ঘুরিয়ে আগুন চোখে তাকালেন। মুখ দেখতেই তাকে চিনতে পারলাম। আমাদের পাড়ার জিন্নাহ দাদু, যার সাথে নাতিনাতনিদের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ সম্পর্ক সম্ভবত আমারই। আমি তার দিকে এগোতে এগোতে বললাম, দাদু আপনি! হাটে গিয়েছিলেন? আমি ছোটো ফুপুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফিরতে দেরি হয়ে গেল। যাক, চলুন এগোই। 

দাদু কোনো কথা বললেন না! নড়লেনও না এতটুকু! গোধূলির শেষ আলোয় তার চোখমুখ বেশ লাল দেখাচ্ছে। আমি গায়ে না মেখে আবারও বললাম, দাদু চলুন। 

সাথে সাথে জিন্নাহ দাদু আমার ডান হাতটি খপ করে ধরলেন এবং সেটা বেশ শক্ত হাতেই! হঠাৎ ভয়ের একটি শীতল ¯্রােত বয়ে গেল আমার শরীর জুড়ে! আর খুব দ্রুত দেহের শক্তি কমতে লাগল। অল্পক্ষণ পরই মনে হলো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি তলিয়ে যাচ্ছি গভীর ঘুমে। তখুনি দাদু সম্পূর্ণ অচেনা গলায় আমাকে বললেন, চল এগোই। 

জিন্নাহ দাদুর বামহাতের ভেতরে আমার ডানহাত তেমনি আটকে আছে। টের পেলাম আমরা ধীরে ধীরে হাঁটছি। আর প্রতিটি পদক্ষেপে শোঁ শোঁ শব্দ করে কিছু যেন আমাদের পাশদিয়ে পেছনে চলে যাচ্ছে! আমি কিছুতেই চোখের পাতা খুলতে পারছি না কিংবা কোনো কথা

বলতে পারছি না! সেই শক্তিই যেন আমার নেই। অথচ ধীরপায়ে হলেও আমি হাঁটছি!

কিছুক্ষণ হাঁটার পর দাদু তার হাতের ভেতর ধরে রাখা আমার হাতে একটু চাপ দিয়ে বললেন, মুন্না, চোখ খুলে দেখ। 

আমি ঘুমকাতুরে শিশুর মতো টেনে টেনে অতি কষ্টে চোখের পাতা খুলতে পারলাম। দেখলাম, খুবই সুন্দর একটি পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। দুপাশে সারি করে দাঁড়ানো গাছের ছায়াশীতল পথটির ওই বাঁকে আমাদের বাড়ি, আশেপাশে আর কোনো বাড়িঘর নেই! বিস্ময়াভিভূত আমি আনন্দ সূচক কিছু একটা বলতে চাইলাম কিন্তু নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পেলাম না! দেখলাম, আমাদের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে ঠিক আমার মতো দেখতে একজন আমারই কণ্ঠে কিছু বলছে! ‘হেই মিয়া...’ আমি কেবল এই শব্দ দুটো বুঝতে পারলাম। পরের অংশটুকু ভিসিআরে টেনে টেনে সিনেমা দেখার মতো দ্রুত ঘটতে লাগল! 

আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না; কয়েকমাস আগে হুবহু এরকম ঘটনা ঘটেছে আমাদের বাড়িতে! সেদিন একজন প্রতিবেশীর উপরে এভাবেই নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলাম আমি। যদিও তার ভুল সে-রকম কিছু ছিল না, ভুল করেছিল তার পোষা গরু। কিন্তু গরুটির ভুলের অছিলায় ওর মালিকের কিছু কথার শোধ তোলার সুযোগ সেদিন আমি আর ছাড়িনি! আজ অবশ্য মনে হচ্ছে, প্রতিবেশীর সাথে অমন ব্যবহার করা মোটেই উচিত হয়নি আমার। 

আমি সবিস্ময়ে জিন্নাহ দাদুর দিকে তাকালাম। দেখলাম, দাদু মুচকি হাসছেন। 

আমরা আরও কিছুটা এগিয়ে গেলাম। এই পথের আগের বাঁকটির মতো আরেকটি বাঁকে এসে দাঁড়ালাম আমরা। আর আমি বিস্ফারিত নয়নে আমাদের বাড়িটিকেই পুনরায় দেখতে পেলাম! গতবছর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির্র আগে বাড়ির বাইরের বারান্দায় বাবা-কাকাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত বৈঠক দেখা যাচ্ছে এবার! এতটা দূর থেকেও স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমি মিনমিন করে বলছি, ‘সাহিত্যে আমার আগ্রহ বেশি, আমি ভাষা ও সাহিত্যে ভর্তি হতে চাই।'

সাথে সাথে ছোটো কাকার ধমকে ওঠা, জ্যেঠার চোখ পাকানো, মেজো কাকার তিরস্কার, বাবার হায় হায় করে ওঠা সব দৃশ্যমান হলো! এমনকি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে মা’র ফুঁপিয়ে ওঠাটাও টের পেলাম! যেন আমি নিজেকে গোল্লায় নিয়ে যেতে চেয়েছি, সেভাবেই আমার প্রস্তাব ছুঁড়ে ফেলে বলা হলো, ‘পাস করার পর কিছু একটা করে খেতে পারবে এমন একটি বিষয় বেছে নিতে হবে।’

এখন টের পাচ্ছি, আমার মেরুদ-টা তখন খুব একটা সোজা ছিল না!

এরপর আমাকে বিস্মিত হবার সীমানার বাইরে নিয়ে একটু একটু করে এগোতে এগোতে দেখানো হলো, টুনি আপার অমতে তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া, দীর্ঘদিন অসুখে ভুগে সুস্থতার দিকে এগোনো দাদীজানের রহস্যজনক মৃত্যু, অন্য ধর্মের এক যুবকের সাথে ছোটো ফুপুর পালিয়ে যাওয়া, চিরকুমার বড়ো কাকার গলায় ফাঁস নেওয়া, বাড়িতে ডাকাত দলের হানা, পৃথিবীতে আমার আগমনের সময় মা’র মৃত্যুপুরী ঘুরে আসা-সহ অসংখ্য ঘটনা! 

প্রতিটি ঘটনায় একটি কালো ছায়ার উপস্থিতি আমার দৃষ্টি এড়ালো না। কিন্তু ছায়াটি কার তা বুঝে উঠতে পারলাম না।

আবার গভীর ঘুমে জড়িয়ে যেতে লাগল আমার দুচোখ। আমি খুব ঘুমকাতুরে গলাতেও দাদুকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম, এখন কোথায় চললেন? কিন্তু এখনো নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পেলাম না। 

আমার ডানহাত এখনো আটকে আছে দাদুর বামহাতের ভেতরে। তিনি যেন তাঁর স্বাভাবিক উচ্চতার তুলনায় কিছুটা উঁচু থেকে টানলেন আমাকে। হাঁটতে শুরু করলাম আর তক্ষুনি টের পেলাম আমি শূন্যে হাঁটছি! নিজেকে পাখির মতো হালকা লাগছে। হাওয়ার গায়ে ভর দিয়ে হেঁটে চলার সময়টা দুচোখ ভরে উপভোগ করতে পারলে নিশ্চয়ই আরও মনোমুগ্ধকর হতো, কিন্তু আপাতত আমার চোখের পাতায় ঘুমপরিদের বসতি।

ওভাবে হেঁটে হেঁটে উপরের দিকে উঠতে উঠতে হাওয়ায় জলের স্পর্শ পাওয়ার পর জিন্নাহ দাদু থামলেন। আর এই এতটা সময় পরে আমার হাতটাও ছেড়ে দিলেন। ধীরে ধীরে আমার দেহের শক্তি ফিরে এলো। আমি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পেলাম এবং চোখ খুললাম। দেখলাম, আমি খুবই অদ্ভুত এবং অচেনা একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশ কুয়াশাজড়ানো, যদিও আমি জানি এখন শীতকাল নয়! সেই কুয়াশার আড়াল থেকে সামনে এলেন আমার বড়ো কাকা ও দাদীজান! তারপর এলেন আমার দাদু এবং আরও কয়েকজন, যাঁরা সবাই আমাদের পারিবারিক অ্যালবামের সদস্য! আমাকে কাছে পেয়ে তাঁরা বেশ আনন্দিত। কিন্তু আমি প্রচ- ভয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলাম, তাহলে কি আমি মারা গেছি? নাকি জিন্নাহ দাদু কোনো মন্ত্রবলে আমাকে এখানে এনেছেন?

আমাকে ভয় পেতে দেখে তাঁদের মধ্যে সোরগোল শুরু হয়ে গেল। আমার দাদু আমাকে এভাবে এখানে আনার জন্য জিন্নাহ দাদুকে ধমকে দিলেন। ফলে বিব্রত ভঙ্গিতে জিন্নাহ দাদু হালকা কুয়াশায় আড়ালে চলে গেলেন। আর আলোর শেষে আবছা অন্ধকারে তাঁকে একটি কালো ছায়ার মতো মনে হলো এবং সাথে সাথে কিছুক্ষণ আগে দেখে আসা ঘটনাগুলোর ছায়াটিকে চিনতে পারলাম আমি; জিন্নাহ দাদু! 


জিন্নাহ দাদু না আমি, আমি তোমার ছোটো পিসেমশাই, মুন্না! 

কারোর ধাক্কাধাক্কি ও ডাকাডাকিতে সম্বিত ফিরে পেলাম আমি। দেখলাম, আমার মাথাটি ছোটো ফুপার কোলে। আর তিনি ক্রমাগত বলছেন, আমি মুন্না, আমি! তোমার ছোটো পিসেমশাই! তোমার...!

আমি ফুপার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে চারপাশটা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ফুপা, আমি এখানে? 

তোমাকে এখানে এই অবস্থায় দেখে আমিও খুব অবাক হয়েছি! তুমি ব্রিজ ছেড়ে খালের জলে....! তুমি আমাদের বাড়িতে তোমাদের পারিবারিক অ্যালবামটা ফেলে এসেছিলে। সেটা দিতেই তোমার ছোটো পিসি তাড়াহুড়ো করে আমাকে পাঠাল যাতে পথেই তোমাকে পেয়ে যাই।

আমরা খাল থেকে ব্রিজের ওপরে উঠে এসেছি। চারপাশ থেকে মাগরিবের আযান ভেসে আসছে। ফুপা ব্রিজের রেলিং থেকে তার বিখ্যাত সাইকেলটি সোজা করে নিলেন। তারপর বললেন, পেছনে বসো। তোমাকে তোমাদের বাড়ির পেছনের মোড়ে নামিয়ে দিয়ে আসি।

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, চলুন।..... কাউকে কিছু বলবেন না, প্লিজ ফুপা! 

ফুপা হাসলেন। 

মোড়ে নামতেই আমার মনে খটকা লাগল, নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। লোকজনের মধ্যে কেমন যেন খাপছাড়া ভাব। নাকি আমার মনের ভুল? হতেই পারে, যে ধকল গেল! 

বাড়িতে ঢুকব তখুনি মসজিদের মাইকে ঘোষণা শুরু হলো, একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ। গোবিন্দপুর পূর্বপাড়া নিবাসী মোঃ জিন্নাহ ম-ল আজ বিকাল সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় তাহার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন, ইন্না-লিলল্লাহি....! 

আমার পুরো শরীর কেঁপে ওঠল! বুঝলাম, এ-যাত্রায় জ্বর থেকে নিস্তার নেই। 

হলোও তাই, সারারাত প্রচন্ড জ্বর আর সীমাহীন ঘোরের ভেতর আটকে রইলাম। কখনও কুয়াশাচ্ছন্ন সেই জায়গাটির দৃশ্যগুলো ফিরে এলো তো কখনও আমিই সেই দৃশ্যের ভেতর ফিরে গেলাম। পরিচিত সেই মুখগুলোই আমার চারপাশে কিন্তু আমাকে নিয়ে তাঁরা আর উৎফুল্ল নন, বেশ চিন্তিত! অনাগত সময়ের নানাবিধ আশঙ্কা তাঁদের উচ্ছ্বাসে ভাটার টান নিয়ে এসেছে আর তাতে পড়েছে দুশ্চিন্তার অসংখ্য ভাঁজ! ফলে আমার মহান পূর্বপুরুষগণের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নতুন প্রজন্মের এই যে আমি, তার জীবনের বালিয়াড়ি জুড়ে হয়ত তাঁরা কেবল দুর্বোধ্য আঁকিবুঁকি দেখতে পাচ্ছিলেন আর আঁতকে উঠছিলেন। কিন্তু ঘোরের ভেতর থেকেও আমি ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়ে বেশ নির্লিপ্ত হয়ে উঠলাম! আর মনে মনে সেই বালিয়াড়ি জুড়ে জীবনের হিসাব কষে নিতে লাগলাম! 

ফজরের পরপরই আমার জ্বর নেমে গেল। কিন্তু শরীরে ক্লান্তি জাঁকিয়ে বসেছে বলে শুয়ে রইলাম বেশ বেলা পর্যন্ত। খোলা জানালা দিয়ে লোকজনের যাতায়াত দেখলাম। কেউ কেউ জানালার কাছে একটু থেমে ‘আমি এখন কেমন বোধ করছি’ তা জেনে গেল। তেমনই একজন আগন্তুক, আমার বন্ধু শাহিন, একসময় এসে জানতে চাইল, কেমন আছিস এখন? 

বিছানা থেকে শরীরটা অর্ধেক উঠিয়ে কনুইয়ে ভর দিয়ে বললাম, ভালো। 

তুই ভর সন্ধ্যাবেলা শ্মশানের কাছে খালের ভেতর নামতে গেছিলি কেন রে? শুনেই আমার হাতপা ঠা-া হয়ে গেছিল! অমন পাথার একা পার হয়ে আসা.....! বাপরে! 

আমি চোখ পাকিয়ে শাহিনকে থামতে বললাম। ও প্রসঙ্গ পাল্টে আমাকে জিজ্ঞেস করল, জিন্নাহ বুইড়ার জানাজায় যাবি?

হুম। একটু দাঁড়া, আসছি। 

জিন্নাহ দাদুর নামাজে জানাজা সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হবে বলে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দাদুর বাড়ি লোকে লোকারণ্য। তাঁর প্রশংসাসূচক বাক্য, টুকরো টুকরো স্মৃতি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ মিলে চাপা গুঞ্জন চলছে।

নির্দিষ্ট সময়ের আগে আগে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন। 

মাইকে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেওয়া হলো। 

জানাজার নামাজ শুরুর আগমুহূর্তে আমার কি হলো কে জানে, নিজেকে বেশ জোরে-সোরে বলতে শুনলাম, আমি কিছু বলতে চাই! 

দেখলাম, যে যেভাবে সম্ভব আমাকে দেখছেন। অনেকেই বেশ বিরক্ত। 

ওসব তোয়াক্কা না করে জিন্নাহ দাদুর খাটিয়ার সামনে গিয়ে মাইকের দখল নিলাম। তারপর দৃঢ় উচ্চারণে বলতে শুরু করলাম সেই কথাগুলো যেগুলো আমাদের বংশের অনেকেই জানেন। কিন্তু অনেক কথা বলা হলেও আজ এখানে সেই কথাগুলোর একটিও উচ্চারিত হয়নি! অথচ আমার মনে হলো, কথাগুলো বলা দরকার।

বললাম, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত লোমহর্ষক দুটো খুন এবং আকন্দদের বাড়িতে অগ্নিকা-ের ঘটনায় জিন্নাহ দাদুর সংশ্লিষ্টতার কথা! 

সাথে সাথে দাদুর চার ছেলে হৈচৈ বাঁধিয়ে ফেলল। আর জমায়েতের পেছনদিকটায় অস্বাভাবিক নড়াচড়া শুরু হলো একদল লোকের। আমি তাকিয়ে দেখলাম আমাদের বংশের মানুষের মুখগুলো ফ্যাকাসে এবং নত। 

বিশৃঙ্খলার মধ্যেই হঠাৎ দুরাউন্ড গুলি চলল! আর তক্ষুনি দেখলাম, আমি ধীরে ধীরে হেঁটে উঠে যাচ্ছি উপরের দিকে! আমার চারপাশে আমাদের মহান পূর্বপুরুষগণ, যাঁরা সকলেই আমাদের পারিবারিক অ্যালবামের সদস্য! তাঁরা বেশ আনন্দিত। আমি তাঁদের সাথে সানন্দে এগিয়ে চললাম। নিচের নশ্বর দেহটির দিকে একবার ফিরেও তাকালাম না, একবারও না! কিন্তু টের পেলাম, নিজের কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলা আমার মা পারিবারিক অ্যালবামটি বুকে জড়িয়ে হাপুসনয়নে অশ্রু ঝরাচ্ছেন। ওতে সর্বশেষ যে ছবিটি যোগ হলো সে আমারই!

আমাদের পারিবারিক অ্যালবামে কোনো জীবিত মানুষের ছবি নেই! 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট