বৃষ্টির শব্দে
রুদ্র সাহাদাৎ
বৃষ্টির শব্দে মাঝরাতে ভাঙে ঘুম নভোম-লজুড়ে কান্নার ধ্বনি
টুপটাপ টুপটাপ টুপটাপ রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম
গতকাল সারারাত আমিও কেঁদেছি আকাশের কান্না শুনে।
চোখের কোণায় আজও নোনাজল টলমল দক্ষিণা হাওয়ায় উড়ে যায় যৌবন
প্রাক্তন কে কেনো যে আচমকায় বারবার মনে পড়ে জানে না ভাঙামন।
বৃষ্টির শব্দে মাঝরাতে ভাঙে ঘুম ঘুমন্ত শহরজুড়ে বোবাকান্না ।
বেলা-অবেলার মহাকাব্য
সৈয়দ ইনজামুল হক
শুকনো পাতার মত মরমর করে বাজে
বুকের কোটর
হিমাদ্রীর চূড়া ছোঁয়া বেদনার বধীর তরঙ্গ
আছড়ে পরে শরীর জুড়ে
তোলে বিষাক্ত ফণা।
ধূলো মাখা বিবর্ণ বিকেল
মেলে ধরে স্মৃতির সাদাকালো দু’চোখ।
বর্তমানের শিকড় ছিড়ে
মন খুঁজে ফিরে হারিয়ে যাওয়া অতীত
জোয়ার-ভাটার বয়ে চলা জীবন
লিখে যায় বেলা-অবেলার মহাকাব্য।
অসুস্থ ব্রিজ
সাজ্জাদুর রহমান
পাথরের মতো ভার মাথায়
দাঁড়িয়ে আছে সময়ের অসুস্থ ব্রিজ
বোবা অক্ষর গুলো দ্যুতিহীন আসমানে
খুঁজেই চলে শুকতারার সৌহার্দ্য প্রতিফলন।
জিরাফ দুঃখ বেয়ে উঠে যায়
শিরার বেদনা আকাশমুখে
চলমান নাচ পুতুলেরা
নির্ভরতা এগিয়ে দিয়ে খেলে কানামাছি, বৌচিঁ।
আশু বিকেলের অন্ধকার
শুয়ে পড়ে ব্রিজের হাতল ঘেঁষে
সেই পিরামিড ব্রিজ সুখশৃঙ্গার ভুলে
পাথুরে লজ্জায় আবৃত করে সজ্জিত কুঠার।
মুখস্থ
রাফাতুল আরাফাত
তোমাকে ছাড়া পা রাস্তার সাথে আঠার মতো লেগে থাকে, হাঁফসা
টিউশন থেকে ফেরার পথে
আজ দুইটা নতুন পাখির ডাক মুখস্থ করেছি
অনেক পাখির ভীড়ে তাদেরকে আলাদা করা যায়
স্কুলে ভালো ছাত্র ছিলাম
ভালো ছাত্র হবার এ যে যন্ত্রণা হাঁফসা
তোমাকে ভুলতে গিয়ে মগজে মার্বেল গড়িয়ে যায়
আর রাস্তায় পড়ে থাকে অসার পা।
দুঃখ
সজল কুমার টিকাদার
দুঃখ-ও এক পবিত্র মন্দির।
মাথা নীচু করে এখানে
প্রবেশ করতে হয়।
তারপর শুদ্ধ আরাধনা...
আর, নৈবেদ্য বলতে,
না-মিষ্টি না-ফল
শুধু কয়েক ফোঁটা চোখের জল!
নির্জনে তোমার ছবি
ইউনুছ ইবনে জয়নাল
নির্জনে তোমার ছবি দেখি স্বপ্নে-
চারিদিকে বৈশাখী ঝড়,
হাড়ের কঙ্কালে রক্তিম ফিতায় বাঁধা
আত্মার ভিতর।
যতদুর চোখ যায়-
চৈত্রের তপ্ত মরিচিকার নদী অস্থির,
তরঙ্গে তুমি অরণ্যের মতো
মনে জাগে নিঃশ্বাস অস্বস্তির।
রাত আর দিন; দিন আর রাত; যেন-
নক্ষত্রের উৎসবে অপরাজিতার গন্ধে মশগুল,
শান্ত তবু বিব্রত সব প্রতিবিম্ব
নিতান্ত’ই বেদনা সংকুল।
জন্মক্ষণ
নীলোৎপল গুপ্ত
এইমাত্র ধুলোর মধ্যে জন্ম হল আমার
ওপরে মেঘের দৃশ্য, ওপরে পাখির পালক।
এই দ্যাখো আঙুলে জলস্পর্শ নিয়ে আমি ভাসমান
চৌদিকে উল্কার রাজ্য, চৌদিকে নক্ষত্র-আগুন
আমি আগুনের পরিমিতি পেরিয়ে পেরিয়ে
মৃত্যুর ভেতরে ঢুকে পড়ি।
এইখানে দিনরাত্রি থেমে আছে
এইখানে জল-আগুনের সঙ্গম।
মৃত্যুর এইপারে এক্ষুনি জন্ম হল আমার
দশচক্রে বাতাসের ঘূর্ণি, চক্রমূলে শব্দহীনতা।
জ্যোতির্ময় দিন
আশ্রাাফ বাবু
নিঃস্ব হয়ে আমার স্মৃতি এখনো পোড়ায়!
বোধের ছদ্মবেশ বৃত্ত আরো বাড়িয়ে দেয়
কোন একটা লালরঙা ঠোঁট।
আমাকে হতাশ করে নীরবতার প্রতি
রুপালি মুখোশ থেকে নির্দয় রাতকে
সন্ধ্যার আলো মগ্ন সম্মিলিত শব্দ।
শব্দে পাগল বিদীর্ণ হয়েছে জীবন্ত চোখ,
শান্ত মানবতা উদ্ধার হওয়া ছাঁচের বাইরে
বয়স একটি ধূমায়িত আড়াল নিজের।
আমি নীরব দাঁড়িয়ে প্রায় নিভে যাওয়া
সোনালি ভালোবাসার রূপকথার মতো,
নীরবতা ছড়িয়ে দেয় আবছা আয়নায়।
হাতছানি জ্বলজ্বলে এবং জ্যোতির্ময় দিনে
কীভাবে তোমার স্মৃতি এখনো পোড়ায়!
অনেক দূরে একটা গান, আমি সেই গান শুনি
ব্যবধান
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র
কোনো এক বৃহস্পতিবারের পায়ের তলায় হারিয়ে গেছে আমাদের গল্পসমগ্র;
গল্প নিয়ে এগিয়ে চলতে ধপাস করে পড়ে যাওয়ার আগে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের স্বপ্ন..
ফিরে দেখা কীটনাশক মিশ্রিত সময় বড়ই ব্যথাহীন
স্মৃতি রোমন্থন- সেইসব দিন; আহা কী রঙিন!
আমার বুক তোমার পাপোশ, সন্তপ্ত পা বুকের উপর মুছে অন্য এক জগতে সজোরে ধাক্কা দিযে ঢুকে যাও...
আমি বেদনায় কুঁকড়ে কুকুর হয়ে বসে থাকি তোমার পায়ের তলায়
তখন আমার বুকের উপর লাথি মেরে এগিয়ে যাও ভিন্ন এক সংসারের চৌকাঠে। এভাবেই যুগপৎভাবে রাষ্ট্র ও জনগণের ব্যবধানের ন্যায় ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে - আমাদের ব্যবধান!
বসন্ত বিরহ
মুস্তফা হাবীব
সুপ্রভা, ‘তুমি বললে একটি পুকুর কাটো
যে পুকুরের সুপেয় জলে দুজনে বিবসনা হবো,
এমন কোনো অশ্বারোহী নেই আমাকে কেড়ে নেয়’।
তুমি আয়তকার পুকুরের পরিসীমা দিয়েছো
দৈর্ঘ্য প্রস্থ দাওনি, দাওনি পাড়ের বিস্তার
আমাকে স্বপ্নের ধাঁধায় ফেলে
মাধবী সেজে তুমি দু’চোখে মেখেছো পূর্ণিমা।
মেধার ঘাম ঝরিয়ে পুকুর কেটে চলছি,
গাণিতিক জট খুলে যখন পুকুর কাটা শেষ
খই মুড়ি সন্দেশ বাতাসায় যখন উদ্বোধন হবে...
পুকুরের মাঝে যখন উড়াবো রঙিন রুমাল
তুমি বললে, ‘আমার পায়ে অদৃশ্য বেড়ি’।
আজ পুকুরে মাধবী ফুটেছে সনাতন সৌরভে
অন্যজন রোজ সাঁতার কাটে ফুলতোলা ভঙ্গিমায়;
সুপ্রভা, তোমার স্বপ্নের পুকুরে আমি এখনও একা!