গ্রাফিক্স : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
বাল্য হাসি
আসিফ আহমদ
অষ্টম শ্রেণিতে বইয়ের ভাঁজে পাওয়া সেই ছোট্ট চিরকুট স্মৃতি, এই পরিণত বয়েসে এসেও নিদারুণ দিশেহারা করে তুলে তাকে। অথচ সেই চিরকুটে তেমন কিছুই ছিলো না লেখা, গোটা গোটা অক্ষরে একটি বাক্য ছাড়া।
(তোমার হাসিটা খুব সুন্দর সাহিদা ভানু)!!
এযাবৎ কালে এহেন কথা কেউ বলেনি তাকে, এমনকি বিয়ের পর স্বামীও নয়।
চিরকুট্টি পাওয়ার পরমুহূর্তেই দম তাঁর প্রায় রুখে আসছিলো, হাত পা যুগল কেঁপে উঠছিলো কী এক অজানা অদৃশ্য ভয় আতংকে।
হৃদ মনে দৃশ্যমান কল্পনা জেঁকে বসে ছিলো তাঁর। এমন উড়– চিরকুট বুঝি রোজি আসবে,
এরপর দেখা যাবে চলতি পথ এঁটে আচমকা কোনো যুবা প্রেম-প্রস্তাব করে বসবে তাঁকে।
অকস্মাৎ বিস্মিত করে তাঁকে, তেমন কিছুই ঘটলো না। পরবর্তীতে গুঁজে দিলো না কেউ বইয়ের ভাঁজে চিরকুট। চলতি পথ এঁটে আচমকা কোনো যুবা প্রেম-প্রস্তাব করলো না। বললো না সাহিদা তোকে আমি বড্ড ভালোবাসি রে, নে এই চিঠি খানা রাখ।
অথচ কোনো এক অদ্ভুত কারণে আড়ালে আবডালে এমনটা চাইতো সে। কেউ একজন বলুক তাকে, ভালোবাসি তোমায়। কাছে চাই ভিষণ ভাবে খুব!
এর কিছুদিন পরেই, বিয়ে হয় সাহিদা ভানুর, সরকারি চাকুরে আনিসের সাথে। সেও সব ভুলে মননিবেশ করে স্বামী সংসারে।
কিন্তু সাহিদা ভানু বুঝতে অক্ষম, ইদানীং কালে সেই প্রৌঢ় স্মৃতি খানা এতো সজীব প্রাণবন্তন হয়ে উঠার কারণ!
কেনোই বা বারংবার তাড়া করে ফিরছে এই বাল্য স্মৃতি?
ধূসর স্মৃতিটা এমন প্রকট স্বচ্ছ হয়ে উঠার কারণই বা কি?
শোয়া থেকে উঠে সোজা দর্পণ সামনে দাঁড়ালো সাহিদা ভানু, দৃশ্যমান হলো তাতে তাঁর প্রৌঢ় অবয়ব। চর্ম কুঁচকে খানিক দোলানি দিচ্ছে বয়স ভারে। আঁখি দ্বয় কোটরে চলে গেছে কিঞ্চিৎ অগোচর ক্রন্দনে। তবুও সে কৃত্রিম হাসলো মুচকি হাসি, হাসি মুচকি।
নিজের হাসি দেখে সে হতবাক না হয় পারলো না, কিছুটা ঈর্ষাকারও অনুভব করলো আনমনে। তাঁর কি করে এমন চমৎকার বিস্মিত হাসি হতে পারে? আসলেই কি এটা তাঁর নিজ হাসি, নাকি দর্পন ওপারের সাহিদা ভানুটা অন্য কেউ? এনিয়ে খানিক সন্দিগ্ধ সে! তা পরখ করতে পুনরায় হাসি দিলো তার শ্রেষ্ঠতম বাল্য হাসি।
সাহিদা ভানু এতকাল বেখেয়ালি ছিলো নিজ সম্পর্কে, তাঁর বিস্মিত চমৎকার হাসি সম্পর্কেও ছিলো অজ্ঞাত।
রাখতে খেয়াল ও জ্ঞাত থাকতে, স্বামী সংসার ও ছেলে পুলের কথা।
অনেক হয়েছে আর না, এবারে নিজ সম্পর্কে খেয়াল জ্ঞাত হবে সে।
তাঁর মুচকি হাসিটি প্ররিণত হলো এবার বিস্তৃত হাসিতে, আসলেই সাহিদা ভানুকে দেখাচ্ছে এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া চৌদ্দ বছরের বালিকার ন্যয়।
শুধু একটা স্কুল ড্রেসের কমতি মাত্র, তাহলেই বনে যেতো সেই চিরচেনা সাহিদা ভানু।
সাহিদা ভানুর হৃদ গহ্বরে জেঁকে বসলো,
যদি আমি আমার এই স্বগোপনিত প্রশমিত ইচ্ছের কথা পুত্র জ্যেষ্ঠকে বলি, তাহলে ভাববে কি সে, এও যদি বলি রুঢ বা বায়না স্বরে, যে আমার একটি স্কুল ড্রেস লাগবে। তখন যদি পুনরায় প্রশ্ন তুলে,তা সেই স্কুল ড্রেস দিয়ে করবেটা কি তুমি শুনি? আবার তখন এর উত্তরে কি বলবো? বলবো যে আমি হাসলে চমৎকার বিস্মিত সুন্দর দেখায়। একেবারে সেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া বালিকার ন্যয়, আর একটা স্কুল ড্রেস গায়ে জড়ালেই পুরোদমে বনে যাবো অষ্টম শ্রেণিতে পড়া সেই ফুটফুটে বালিকা সাহিদা ভানু !
এসব শুনে, ব্যপারটা নিশ্চয়ই সে ভালোভাবে নেবেনা। আনমনে ভাববে হয়তো বয়স ভারে তন্মনের সাথে মাথাটাও বুঝি গেলো এবার। অতি শীঘ্রই পাবনা পাঠাবার বন্দবস্ত করতে হবে!
না দরকার নেই খামাখা জ্যেষ্ঠকে বলে খাল কেটে কুমির ডাকার।
সে নিজেই গিয়ে কাপড় কিনে দর্জি দিয়ে বানিয়ে নিবে। এই ভাবতেই পূনরায় হেসে উঠলো সে, ভূবণ ভুলা চির উচ্ছাসিত ভঙ্গিমায় চমৎকার বিস্মিত হাসি!
সাহিদা ভানু ঠিক করলো সে এখনি বের হবে কাপড় কিনতে এবং তা সেলাতেও দেবে দর্জিতে।
এরপর থেকে সেই ড্রেস গায়ে দর্পন পানে দাঁড়িয়ে রোজ হেসে উঠবে অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া চৌদ্দ বছরের বালিকার ন্যয়!
হা... হা... চৌদ্দ বছরের বালিকা।