রাগিণী


 


রাগিণী

আসআদ শাহীন 



বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামে

ধরিত্রীর এ নীলিমা খ-চিড়ে

পাখি-ঝাঁক প্রস্থান নেয় নীড়ে

মানবজীবন ব্যস্ত পৃথিবীর জ্যামে।


“আচ্ছা রাগিণী! তুমি আবার কবি হলে কবে? তুমি না বলেছিলে-“কবি মানেই পাগল”। তাহলে কী তোমার কথা আজ মিথ্যে হলো; নাকি তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছিলে? তুমি তো কখনো মিথ্যা বলো না! তবে...”


দৃষ্টিশোভিত-মনোজ্ঞ, সবুজের শামিয়ানায় ঘেরা সবুজাভ প্রাকৃতির লীলাভূমি রাজশাহী। এমন শহরে বসবাস আমার আর রাগিণীর। এই ব্যস্ত নগরীর নিস্পন্দন দুর্ভেদ্যনিশীথে আমি ও আমার প্রিয়তমেষু রাগিণী-জোনাকজ্বলা রজনীতে অনাবৃত অম্বরতলে নিজেদের দেহ প্রাণবন্তসজীব দূর্বা কাঞ্চনে বিলিয়ে শুয়ে আছি। আমি রাগিণীর উন্মুক্ত কায়ায় তার শুভ্রসফেদ-নরোম-মসৃণ-মখমল-কোমল পিঠে অঙুলি দিয়ে আনমনে এঁকে যাচ্ছি। জানি-রাগিণী এতে খুবই রোমাঞ্চিত ও সন্তোষিত হচ্ছে। আমারও ভালো লাগে রাগিণীর সফেদি পিঠে অঙুলির স্পর্শ-আঁকা প্রমোদলীলায় মেতে উঠতে। 


অদ্যকার নিশিথ হিমাংশুর দ্যুতি বেশ চমকপ্রদ। ঝকঝকে পরিষ্কার। নিশিকান্তের রশ্মিটা ঠিক যেন রাগিণীর উন্মুক্ত বস্ত্রহীন শুভ্র-সফেদ পিঠে এসে পড়েছে। এতে করে রাগিণীর শুভ্র-সফেদ পিঠ আরো প্রীতিকর-মনোহর করে তুলেছে। এমনই এক সুখময় মুহূর্তকালে সহসা রাগিণী স্ফুটস্বরে কবিতা আবৃত্তি করে ওঠে। আমি প্রথমত চমকে গেলাম। কিন্তু না,পরক্ষণই তার মুখ নিঃসৃত কবিতাপাঠ শুনে যাচ্ছি আর ভেবে যাচ্ছি-রাগিণীর মুখ নিঃসৃত পাঠ্য-কবিতা তো আমার লেখা নয়,তাহলে কার কবিতা আবৃত্তি করছে রাগিণী? রাগিণীর মুখ নিঃসৃত এই কবিতা তো রবী-নজরুল-জসীম-কায়কো-শরৎ-বঙ্কিম-সুধিন্দ্র সেকেলের কোনো কবিদেরও না। আবার-একালের হুমায়ুন-শামসুর-আল মাহমুদ-হাফিজ-সাদাত এদেরও তো না। তাহলে কার ? তৎক্ষণাৎ ভাবলাম-হয়তো আমার মত নতুন কোনো কবিদের কবিতা। কিন্তু! রাগিণী তো এমন না যে-অন্যের কবিতা সে আবৃত্তি করবে! সে তো কেবলই-শুধুই আমার কবিতা পড়ে-আবৃত্তি করে। আমার কবিতাকেই ভালোবাসে। নাহ্! রাগিণী এমন হতে পারে না আর এ কবিতাও আমার না-তবে কার? 


আমি প্রচন্ড অগ্নিশর্মা হলাম রাগিণীর উপর। ভাবলাম-তার পার্শ্ব থেকে উঠে যাব। কিন্তু, সহসাই রাগিণী বলে উঠে-কবি! ওগো কবি আমার!! তোমার কেমন লাগল আমার আবৃত্তি? এই যে কবি! তোমাকেই বলছি-কি ব্যাপার! তুমি নিশ্চুপ যে! তার এই কোমলময়ী সম্বোধনের উত্তরে কি বলব? যদি বলি-ভালো না, তাহলে রাগিণী আমার উপর রাগ করবে খুব। এমন রাগ যে-সে আমার সঙ্গে আর কথাও বলবে না। কেবলই কথা! না-একেবারে তালাক অবধি চলে যাবে। সেজন্য অনেক ভেবে-চিন্তে সৌজন্যবোধের জন্য বললাম, বেশ চমৎকার হয়েছে। খু-উ-ব সুন্দর আবৃত্তি করেছো তুমি মাশাআল্লাহ! (ভেতরে ভেতরে ক্রোধের অনলে জ্বলছি-তথাপি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলাম) আমার করা (ভুয়া) প্রশংসা শুনে রাগিণী বেহদ সন্তোষিত ও পুলকিত হল। (তবে রাগিণী সেটা জানে না এটা আমার অলীক প্রশংসা ছিল-তাকে খুশি করবার নিমিত্তে)।


তা চোখে-মুখে হর্ষের দ্যুতি প্রস্ফুটন হল। তার গোলাপ রাঙা নরোম-মসৃণ ও কোমলীয় অধরযুগলে এক চিলতে স্মিতহাস্যের আভা ফুটে উঠলো। রাগিণীর এই স্মিতহাস্য আমার ক্রোধকে আরো দ্বিগুণ বর্ধিত করল। এদিকে আমি রাগিণীকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না যে-এটা কার কবিতা? কারণ-রাগিণী আবার সন্দেহ করাটা মোটেও পছন্দ করে না। এজন্য আমি মুখ ফুটে বলতেও সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু হৃদয়ের ভেতরে ক্রোধের অনল দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে। বোধ হচ্ছে আজ এতোটা বছর পথ-পরিক্রমার পরও আমি আমার রাগিণীকে চিনতে পারি নি। তার মন বুঝতে পারি নি। আচ্ছা! আমার পরিবর্তে তার মনের মাঝে কাকে স্থান দিল? সে কথাটিও আবর্তমান আমাকে বিচলিত-উদ্বিগ্ন-বিহ্বল করে তুলেছে। আমার মন বলছে-কে সেই সৌভাগ্যবান কবি? যে আমার রাগিণীর মন করেছে চুরি! তাকে এক পলক দর্শনের ইচ্ছেটা ক্রমশই যেনো বেড়ে উঠেছে। মন যে কোনো কিছুতেই প্রবোধ মানে না। এরই মধ্যে নিজেকে স্থির করেছি যে, আর এক মুহূর্তের জন্যও রাগিণীর পাশে থাকব না। উঠে যাবো। তখনই রাগিণী এক গাল হাসি উপহার দিয়ে বলে উঠে -কবি! আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি তোমার বর্তমান মনের পরিস্থিতি। 


রাগিণী আমার মনের পরিস্থিতি কী উপলব্ধি করতে পেরেছে তা আর তাকে প্রশ্ন করি নি। তবে এমনই সময় স্মৃতির দর্পণে ভেসে ওঠে অতীতের স্মারক চিহ্ন। সেই রাগিণীকে দেখা যায়-যাকে আমি নিয়ে এসেছিলাম এক বিষাদময় আবদ্ধখানা হতে মুক্ত করে। যেখানে রাগিণী বহুকাল ধরে নিঃস্ব-অসহায়ের মতন জীবনযাপন করেছে। পুরনো সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়া মাত্রই নিজেকে আর সংযত করতে না পেরে অবশেষে রাগিণীকে বলি-রাগিণী! তোমার কি মনে পড়ে সেই দিনের কথা; সে সময়ের কথা! যেদিন আমি তোমার মত অন্য কোনো রাগিণী-মানবীর তালাশে উন্মাদের ন্যায় শহরের অলিগলি ঘুরছিলাম। কোনো একদিন, অকস্মাৎ নিজেরই অজ্ঞাতসারে আনোখা এক গলিতে প্রবেশ করেছিলাম। আর সেখানেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা অতঃপর পরিচয়-মোলাকাতের পর্ব। তুমি সেদিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে খুব করে কান্না করছিলে। তোমার কান্নার প্রতিধ্বনি আমার কর্ণকুহরে অনিবার এসে বাদিত হচ্ছিল। আমি তোমার কান্না-ধ্বনি শুনেই দিশাহারা হয়ে এতো বড় গলির এদিক-ওদিক ঘুরছিলাম আর খোঁজ করছিলাম কোত্থেকে এতো হৃদয়বিদারক কান্নার শব্দ অনুরণিত হচ্ছে? 


সেদিন তো হাজারো লোকের আনাগোনা ছিল-লোকে লোকারণ্য ছিল সে গলি। তারা কি শুনতে পেয়েছিল তোমার কান্নার আওয়াজ? তা আমার অবিদিত। অতঃপর, হন্যে হয়ে অনেক খোঁজার পরে তোমার দেখা পেলাম। তুমি পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ের এক কোণঘেঁষে বসে ছিলে। তোমার শরীর অনেক ধুলোবালিতে ভরপুর ছিল। তোমার দিকে তাকিয়েই যেনো আমার চোখে জল এসে গেল। আমি শত চেষ্টা করেও সেদিন আটকে রাখতে পারি নি চোখের জল। কেনো যেন তোমাকে সেখান হতে হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিলাম কোনোরূপ প্রশ্ন ব্যতীতই। হয়ত তুমি কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারো নি। তোমার শরীওে লেগে থাকা ধুলোবালি আমার জামার আস্তিন দ্বারা পরিষ্কার করলাম। তোমার অশ্রুসিক্ত চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণা আলতো হাতে মুছে দিলাম। তোমার চোখের জল মুছতে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে কতোই না কেঁদেছি। কিন্তু কেনো কান্না করেছি তা আমি নিজেও জানি না। তবুও...


এরপর, তোমাকে মুক্ত করে আনলাম সেই আবদ্ধখানা হতে। তোমার এহেন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়াতে সেদিন তুমি বলেছিলে-

“কারো কারো জীবনের ভালোবাসার ডায়েরির কিছু পাতা অলিখিতভাবেই থেকে যায়। নিঃস্ব পাতাগুলো অপেক্ষায় থাকে, কখন তার বুকে লেখা হবে সুখ-দুঃখের, আবেগের কিছু কথা। নিঃস্ব ডায়েরির পাতাগুলো দোষ দিয়ে যায় ভালোবাসার দু’টি মানুষকে-যারা ভালোবাসার কালি দিয়ে ডায়েরি লিখত। এখন তারা স্বার্থপরের মত ডায়েরির দিকেও তাকায় না। সেলফেই অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে। উপরে কিছু ধূলোময়লা জমা হয়। আজ তা কেউ মুছে দেয় না। বড্ড রাগ হয় তাদের উপর। হয়তো ডায়েরি জানে না তার মালিকের মনে কষ্ট কতো। তবুও ডায়েরি দোষ দেয়। কেনো ভালোবাসার কথাগুলো আজ হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো? উত্তর খুঁজে বেড়ায় নিঃস্ব ডায়েরি। আজও অপেক্ষা করে নীল ডায়েরি-কেউ বা কি তাকে হাতে তুলে নিবে? হাতে নিয়ে শুরু করবে কিছু আবেগের হৃদয়-মাখা কথামালা। মনে মনে বলে আমার মত কোনো ডায়েরি যেন এরূপ নিঃস্ব না হয়। ভালোবাসার ফুলঝুরিতে ভরে উঠুক সবার নীল ডায়েরি”।


রাগিণীর এই কথাগুলোর মর্ম যদিওবা সেদিন উপলব্ধি করতে পারি নি তবে অবশ্য পরে ঠিকই বুঝেছি। একজন কতোটা অবজ্ঞা ও ক্লিষ্টের শিকার হলে এমন বেদনার্ত কথাগুলো বলতে পারে! রাগিণীর কথাগুলো শোনার পরপরই আমার ভেতরটা যেন দুমড়েমুচড়ে যায়। অতঃপর রাগিণীকে বললাম, আমি তোমার প্রেমে পড়েছি তবে মোহময় প্রেমে না। তোমার মাথায় হাত রেখে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি কোনো পরিস্থিতিতেই তোমাকে ছেড়ে চলে যাব না। রাগিণী আমার মুখে “মোহময় প্রেম” বাক্যটা শুনে অনেকক্ষণ কি যে ভেবেছিল তারপর বললো-“মোহময়” বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো? রাগিণীর এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমি যেন আকাশ থেকে এই মুহূর্তে জমিনে পড়লাম। বোধ হচ্ছে আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। 


যাক! আমি একটু ভেবে উত্তর দিলাম যে, মোহ শব্দটির সঙ্গে একটি নেতিবাচক অনুভূতি জড়িয়ে আছে। রাগিণী পুনরায় আক্রমণাত্মক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে- “নেতিবাচক অনুভূতি”? রাগিণী যেন এই প্রথম শুনছে এমন বাক্য-আমার তাই বোধ হচ্ছে তার প্রশ্নের ভঙ্গিমা দেখে। তবে আমি এই মুহূর্তে একটু দীর্ঘ নিশ্বাস নিলাম। এরপর বললাম-হ্যাঁ! মোহ মানেই ক্ষণস্থায়ী কিছু একটা ক্ষতিকর এবং অগভীর কিছু। রাগিণী পরক্ষণেই আমাকে বলে যে-অবশ্য সবসময় ব্যাপারটা নেতিবাচক না-ও হতে পারে। মোহ থেকেও জন্ম নিতে পারে গভীর ভালোবাসা, অতুল প্রেম। রাগিণীর এই কথায় সম্মতি জানালাম আর ভাবলাম ঠিকই তো আমি অযথা সবসময় নেগেটিভ চিন্তা করি। তবে রাগিনীর কাছে একটা স্বীকারোক্তি দিলাম যে-সেদিন তুমি আমাকে একটা বিষয় শিক্ষা দিয়েছো, যা আমি তোমায় বলি নি লজ্জার খাতিরে। 


আজ বলছি- ‘তুমি আমাকে সবসময়ই সব ব্যাপারে পজিটিভ ভাবতে শিখিয়েছো’। কিন্তু আমি তো হার মেনে নেওয়ার মত ছেলেই না মোটেও। তাই রাগিণীর কথা শেষ না হতেই বলতে আরম্ভ করলাম যে- “মোহ এটা দ্রুত কেটে যায়। এটাই মোহের বৈশিষ্ট্য। অবশ্য প্রেমেরও মৃত্যু ঘটে, অহরহই ঘটে তবে এতো দ্রুত না”। কথাটা আমি খুব দ্রুতই বলেছি রাগিণীকে। কারণ, কথা বলার সময় রাগিণীর ঠোঁটের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। রাগিণীর ঠোঁট জোড়া যেনো আর্দ্রতার পরশে সিক্ত। সেই আর্দ্রতাময় লাবণ্য কম্পমান ঠোঁট যেন আমাকে পাল্টা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত যে, প্রেমেরও দ্রুত মৃত্যু ঘটে? তাই রাগিণী যেন পাল্টা প্রশ্ন না করতে পারে সেজন্য প্রশ্নের আগেই উত্তর বলে দিয়েছি। কিন্তু আমার কল্পনাতেও জানা ছিল না যে-রাগিণী আমার চাতুরী বুঝে ফেলবে আর এতোটা জটিল কথার সম্মুখীন আমাকে হতে হবে। রাগিণী বললো-“মোহের অবসান কোনো ক্ষত রেখে যায় না হৃদয়ে, বরং মোহমুক্তি যেন বন্দিদশা থেকে মুক্তির আনন্দ দেয়। যেমনটি তুমি আজকে আমাকে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করলে। কিন্তু প্রেমের মৃত্যু! সে তো দীর্ঘস্থায়ী, এমনকি কখনো কখনো চিরকালীন ক্ষত রেখে যায়”। আমি রাগিণীর এই কথার জবাব আজও দিতে সক্ষম হই নি। এতে আমি রাগিণীর কাছে পরাজিত হয়ে আছি। 


রাগিণীর কাছে তার জীবনের বিভীষিকাময় অধ্যায়গুলো পেশ করা মাত্রই দেখি তার হাস্যোজ্জ্বল, লাবণ্যময়ী চেহারা বিষণœময় ও কৃষ্ণাভে রূপান্তরিত হয়েছে। আমি অনুধ্যান করলাম, তার অতীত স্মৃতিগুলো এই মুহূর্তে বলা হয়ত আমার জন্য উচিৎ হয় নি। ভুল হয়েছে। তবে আমি তো তাকে কষ্ট দেয়ার নিমিত্তে বলি নি। আমি খুব অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়েছিলাম যে, সে কেনো আমার কবিতা ব্যতীরেকে আজকে এই মাহেন্দ্রক্ষণে অন্যের কবিতা আবৃত্তি করছে? রাগের বশিভূত হয়ে বলেছি। তবে যদি এ ব্যাপারে পূর্ব অবগত হতাম যে, সে খুব কান্না করবে। তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা মলিন হয়ে যাবে। তাহলে কখনোই বলতাম না। মূলতঃ রাগিণীর কান্না আমার বরদাস্ত হয় না। মেনে নিতে পারি না। কেনো যেনো তার কখনওবা যদি মন খারাপ দেখি আমার খুব কান্না আসে। সে যখন হাসি মুখে থাকে তখন রাগিণীকে দেখতে পরীর মতন দেখায়। যেনো একটি পিচ্চি মেয়ে। অবশ্য সে পরী-ই। তবে আমি এবার পড়লাম এক মহা বিপাকে। কী বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম? যদি এতে রাগিণী ক্রোধান্বিত হয় তাহলে তো এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার অন্ত থাকবে না। কারণ, এর আগেও ¯্রফে একবার নয় বহুবার সে আমার উপর রাগান্বিত হয়ে কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিল তার কোনো ইয়ত্তা ছিল না। আমি তো রাগিণীর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সবকিছু ছেড়েই দিয়েছিলাম। 


কি বলব! এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে-আমি একসময় নিজেকে নিজেই চিনতে পারতাম না। মানুষগুলো কীভাবে যে আমাকে চিনত আল্লাহ মা’লুম। দীর্ঘ কয়েক বছর-বহু বছর পর আবারও রাগিণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল রাজশাহীতে। তখন সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শিক্ষার্থী। ২০১২-১৩ সালের কথা। একদা এক বিকেলে রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরিতে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ছিলাম। সহসাই আমার দৃষ্টি ফিরে অন্যদিকে। এক মেয়েলি ঘ্রাণে। ঘ্রাণটা খুব চেনাজানা ও পরিচিত, যেন রাগিণীর শরীরে ঘ্রাণ। কারণ, রাগিণীর শরীরের গন্ধ আমার নাসিকায় আষ্টেপৃষ্ঠে থাকে। তাই সেই গন্ধ নাসিকাকে স্পর্শ করা মাত্রই আমি বই পড়া ছেড়ে দিয়ে রাগিণীকে খুঁজতে লাগলাম। পুরো লাইব্রেরি তন্ন-তন্ন করে খুঁজছিলাম। আমার এমন কর্মকান্ডের জন্যে সেদিন লাইব্রেরিতে থাকা অনেকেই জিজ্ঞেস করেছিল-এই যে! এভাবে উ™£ান্তের মত কি খুঁজছেন? আমি হয়ত আবেগের বশীভূত হয়ে নির্লজ্জের মত মুখ ফুটে বলেছিলাম-রাগিণীকে খুঁজি। জানি না তারা সেদিন আমাকে কীভাবে দেখেছিল কিংবা ভেবেছিল। অনেকে আবার অট্টহাসিও দিয়েছিল। কারণ, ওখানে মেয়েরাই বেশি ছিল। যাই হোক! অবশেষে খুঁজে পেলাম আমার রাগিণীকে। অশ্রুসজল চোখ নিয়ে কোনো কথা না বলেই তাকে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললাম-ভুল হয়ে গেছে আমার আর কখনও এমন হবে না। রাগিণীর এরূপ বিষণœ-মলিন চেহারা দেখে আমি তাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিলাম। কারণ, মেয়েদেরকে বশে আনার এটাই একমাত্র মহৌষধ। তবে আমার ক্রোধ-ক্ষোভ, প্রশ্ন সবকিছুই ধূলোয় ধূসরিত হলো...



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট