যদি সত্যটা বলতে না পারি
মুহাম্মদ ইমদাদ হোসেন
সত্য-ন্যায় নীতি আর আদর্শের কথা স্পষ্ট যদি বলতে না পারি, তবে কি
হবে এই জবানের মিষ্টি মধুর বচনে?
ইচ্ছে করে তাই আমার ঠোঁট দু’টি সেলাই করে নিতে সুঁই সুতোয়।
সত্যটাকে সাহস করে লিখতে যদি না পারি, তবে কি হবে কলমের
আঁচড়ে শব্দের গাঁথুনিতে ছন্দেও ঝংকারে কাগজের পাতা ভরিয়ে?
ইচ্ছে করে তাই আমার কলমটা তোলে রাখি বাক্সে আর ডাইরিটা সেল্ফে।
সত্যের সুচিন্তা আর ভালোর ভাবনাটা
যদি না থাকে মগজে, তবে কি হবে বিকশিত বুদ্ধির মহাচিন্তক, পাহাড় বা
সাগর সম জ্ঞানের মহাপ-িত হয়ে?
তাই আমার চিন্তাশক্তিটা বিলুপ্ত কিংবা মগজটা বিকৃত হলেও কোনো দুঃখ নেই।
ভালো আর আলোর প্রতি ভালোবাসা মন্দ আর আঁধারের প্রতি চরম ঘৃণা
যদি না থাকে হৃদয়ে, তবে কি হবে হৃদয়ের কোমলতা আর বিশালতায়?
তাই আমার হৃদয়টা যদি পাথর কিংবা সংকীর্ণ হয়ে যায় তবে কোনো কষ্ট নেই।
সত্যের পথে অন্যায়ের প্রতিবাদে লড়তে
যদি না পারি, তবে কি হবে বাহুবল বুদ্ধিবল কিংবা অর্থ শক্তির পাহাড় গড়ে?
তাই অর্থহীন পেশিশক্তি বিহীন নির্বোধ
থাকাটাই সবচে শ্রেয় মনে হয় আমার।
সত্য-ন্যায় নীতির পথে বুক ফুলিয়ে বীরদর্পে যদি চলতে না পারি,
তবে কী হবে পায়ের জোড় বা সচলতায়?
তাই পা দু’টি যদি খোঁড়া কিংবা অচল হয়ে যায় তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।
সত্য আর ভালোর আলোয় জীবনটা যদি রাঙাতে না পারি
তবে সাহসহীন ভীতু হয়ে অন্যায় অবিচার নীরবে সহ্য করে
বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু কামনাই উত্তম নয় কি?
ফিরতে দেরি হলে
জীবন রাজবংশী
আমার ফিরতে দেরি হলে-
তুমি আর অপেক্ষা করবে না
তুমি ভেঙে পড়বে না, কারণ-
সেই সময়টুকুও তোমাকে দেওয়া হয় নি।
বরং আবার হাটতে শুরু করবে সময়ের সাথে, সময়ের পথে।
মানুষ এক লক্ষ্যে হাটতে শুরু করলে,
সব ব্যথা বেদনা ভুলে যায়।
জীবনের হিসেব মিলাতে গিয়ে।
জীবন ভাঙা গড়ার খেলা মাত্র, থেমে থাকার জন্য নয়।
আমি না আসলেও আবার সূর্য উঠবে
আবার ফুল ফুটবে
আবার পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় ঝলমল করবে আধার রাত।
আমি যেমন ঘুম ভেঙে দেখি নতুন আলো,
তুমিও দেখবে নতুন প্রভাত।
আমার ফিরতে যদি দেরি হয়....
প্রথম মৃত্যুর আগে
রহিম উদ্দিন
তালাবদ্ধ স্মৃতির আলমারি জুড়ে- থরে থরে সাজানো জীবন
প্রথম মৃত্যুর আগের, আরো অগণিত মৃত্যুর দৃশ্য
দেহ ছেড়ে পালানো অসংখ্য আত্মার আর্তনাদ
বিরহ, বিচ্ছেদ! বিরহ বিচ্ছেদ!
অথচ প্রিয় কোনো বিচ্ছেদ নেই
আচ্ছা, প্রেমিকের মৃত্যু বিরহ না বিচ্ছেদ?
অথবা প্রেমিকার ছেড়ে যাওয়া?
জহুরি, তুমি সাগর সেচে মুক্তো খুঁজো,
কেবল জানো না,
কয়লার অনলে সোনা খাঁটি হয় না,
গলে যায়- বরফের মতন
গলতে গলতে আমিও এখন বরফ-গলা নদী।
আয়নার ঝালর
অক্ষয় কুমার বৈদ্য
সুতো জুড়ে গেঁথে আয়নার ঝালর
দোল দেয় হাওয়া, সৌখিন সাজে ঘর
খেয়াল করিনি চোখে তুমি লেগে আছ
আলগোছে ঝুলছে ঝুলন্ত রঙিন ঝালর
রঙটুকু মনের গহীনে শীত ফিরে গেলে
সুতো খুলে খুলে পড়ে পাতা ফুল
সাজ ঘর একা, একা একা দোল দেয় হাওয়া..