জোড়াসাঁকো

     অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ



জোড়াসাঁকো 

আহাদ আদনান


ভরা বর্ষায় খাল জলে টইটুম্বুর। আমি বসে আছি মল্লিকদের সাঁকোর ধারে। ক্রোশখানেক দূরে ঘোষদের সাঁকো। সাঁকো অদলবদল করলে এখানে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যায়। যদিও সাঁকো না, আমরা মন অদলবদল করেছিলাম।

মাঝরাত। ঘোষদের খাল ঘেঁষে পুরনো এক অশ্বত্থ বৃক্ষ। এখনো ওখানে আমার যাওয়া বারণ। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছের নীচে। হাতে লম্বা কাপড় কিংবা শাড়ি। তড়তড় করে ডাল বেয়ে কাপড়টার মাথা বেঁধে ফেলল শক্ত উঁচু একটা ডালে। আরেক মাথা গলায়। আমি বুঝতে পারছি কী হচ্ছে। মেয়েটাকে আমি চিনি। আমি এক্ষুনি গিয়ে ওকে আটকাতে পারি। ‘এমন করে না শিউলি। আত্মহত্যা মহা অন্যায়। এত সুন্দর জীবনটা নষ্ট করতে নেই’। কিন্তু কপালের দগদগে রক্তের জমাটে হাত পড়তেই মনে হলো, ‘যাকগে। মরলে মরুক’।


- কীরে বদ। বসে বসে আমার মরণ দেখছিলি? বাঁধা দিলি না কেন?

- ঘোষদের মেয়ে হয়ে মল্লিকদের সাঁকোতে এসেছিস যে বড়? তোর জ্যাঠারা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে আমাকে মেরে ফেলল, কই ছিলি তুই তখন? কপালে দেখ রক্ত লেগে আছে এখনো। তোকে ভালোবেসেছি। পালিয়ে বিয়ে করেছি। অন্যায়টা কী হয়েছে? তোদের আজ অনেক পয়সা। আমাদের সাথে কথা বলতেও বাঁধে। আমরা অচ্ছুৎ? বেশ করেছি ঘোষের মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছি। আবার জন্ম হলে আবার করব।

- আহারে, বাবুর রাগ কমেনি এখনো। আমার কথাটা একবার ভাব। আফিমের নেশাটা কাটতেই চিৎকার করি। পিটিয়ে আমাকেও শাস্তি দেওয়া হয়। যখন শুনলাম তোকে মেরে ফেলেছে আর কিছু চিন্তা করিনি। তোকে ছাড়া বাঁচব আমি গাধা। শোন, ভূতেদের রাগ থাকতে নেই। রাগ, ক্ষোভ, অহংকার, বংশ গৌরব, প্রতিশোধ এগুলো থাকে মানুষের। 

- আর ভালোবাসা? 

জোড়াসাঁকোর খাল পাড়ে মাঝরাতের বাতাসে উষ্ণ আন্দোলন খেলতে থাকে। 


মাতুয়াইল, ঢাকা। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট