পদাবলি

 



মহাকালের কাছে

শরীফ এমদাদ হোসেন 



বৃষ্টির সাথে পূর্ণিমার চাঁদ দোল খায় পদ্মবিলে

নয়ন মাঝি কৈয়া জাল পাতে লক্ষীদিঘার নাড়ায় 

দিঘা চালের পান্তাভাত আর কৈ পুঁটির ঝোল কিংবা ভাজা, 

আহা! টাক্কুস করে জিহ্বায় জল আসে


বাড়ির দক্ষিনে কুটোর পালা, ছাতিম গাছ ভোকসা পুকুর পাড়, 

থই থই জলের কিনার, মনের ডিঙ্গা বেয়ে চলে হুটহাট,

 অজান্তে চালিতার ফুলে নামে ঘুম

ভোরে ঝরা শিউলি কুড়ায় বালকবালিকা।


শাপলা তোলা ভোর চলে গেছে অতীত ঘরে,

দূরে এখনো রাত্রির দ্বিপ্রহরে বাজে ঢোল করতল

কোনদিন লাটিখেলার থালায় বাড়ি হেইয়ো হেইয়ো-

হোসেনের পুঁথি পাঠ, আদু মিয়ার হুক্কার কুড় কুড় আওয়াজ, 

মথলুর গল্প বলা। আহারে!  হারিয়ে যাওয়া দিন!


মানুষ সাগর পাড়ি দিতে দিতে কোথায় চলেছে মহাকাল?




বাঁধো তোমার আউলা কেশ

মজনু মিয়া 


উদাস দুপুর উতলা বাও চটপটে খুব মন;

ছুটছ কোথায় অসময়ে এমন কালো ক্ষণ?

পাগলা কুকুর শেয়াল আছে খামচে ধরবে, 

কাঁদবে শেষে চিৎকার করে আঁখি ঝরবে!


আটঁকে রাখ সোনার যৌবন বেঁধে রাখ চুল,

মনের ভুলেও আগলা রেখে করবে না ভুল।

ইহকাল আর পরকালের সব পথ হবে বন্ধ ;

বিচার দিনের বিচারক সেদিন থাকবেন অন্ধ!


আগে বাঁধো মনকে সেই লোভ লালসা থেকে, 

ভুল পথ থেকে ঠিক হলে থাকবে আলো মেখে।

জীবন হবে সুন্দর সফল সবাই বলবে ভালো,

এসো এবার জ্বালি জীবনে শুদ্ধতার আলো।




শরতের আকাশ

পান্থ মুসাফির


ছেঁড়া ছেঁড়া শুভ্র মেঘে 

দিগন্ত জোড়া শরতের সুনীল আকাশ

মেঘের ভেলায় ভেসে মন্থর বেগে

টেনে নেয় সামিয়ানা ধূসর ফ্যাকাস।

মাছের পোনার মত ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি

ঝরে গিয়ে ওই দূর গাঁয়,

নদী তীরে কাশফুল কেড়ে নেয় দৃষ্টি

সোনা রং রোদ ঝলকায়।

আমনের কাঁচা শীষে দুধগালা

শস্য সুধা,

শিশির ফোটা গাঁথে শস্য দানার মালা

মিটাতে ক্ষুধা।

পানি কমা নদী খালে বড়শি ও জালে

রূপালী পুঁটি পড়ে ধরা,

লাঙ্গল জোয়ালে গরু জুড়ে দেয় হালে

ফসলে জমি হবে ভরা।

শরতের আকাশটা উঁচু হয় খুব

মাটির সাথে তবু করে মিতালি,

এ ঋতুতে আকাশ নেয় বহু রং রূপ

ভোরের পাখিরা গায় গীতালি।




নাবিক

মাঈনুদ্দিন মাহমুদ


তরঙ্গে তরঙ্গে জীবনের গতি

বার বার ভূপতিত হয়

বিকৃত করে তুলে স্নায়ুবিক প্রশান্তির দেশ।

কূল কিনারাহীন নাবিক

ব্যকুল হয়ে ওঠে বিরহী সুরের মূর্ছনায়।

আচমকাই গেয়ে ওঠে

“মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না”

অবেলায় হৃদয় বিদরিয়া উঠা বেদনার সঙ্গীত

উপহাসের খোরাক জোগায়

কূলহারা নাবিকের অন্তঃপুরে।

“পরের জমি চষতে চষতে নিজের জমি হয় বেহাল”

ও দয়াল গেলনা”



পুকুর পাড়ের শিউলি গাছটা রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী 

মিসির হাছনাইন 


মেয়েটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি, 

যদি, পাশে গিয়ে ইচ্ছা করে জড়িয়ে ধরি?

স্বপ্ন না, তারে নিয়া লেখা একটা কবিতা পড়ি?

কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পরি আবার, গেছি মরি!


হেমন্তের গানে সে হয় ঋতুবতী এক কুমারী,

ফুলে ফুলে পুকুরের জল শাড়ি পড়া হৈমন্তী,

শিউলিগাছ বইয়ের ভাঁজে রেখে যাওয়া ফুল,

আমার খালি মনে পড়ে গল্পের ঝরে পড়া চুল।


শুকনো পাতার মর্মরেথ শীতের পায়ে নূপুর নাচে,

ময়ূর তখন উচ্চস্বরে ডাকে.. মাঝরাতে বন পাশে, 

চাঁদ ছাড়া আকাশে হিজল গাছ পাখির ভাষায় হাসে,

পুকুর পাড়ের শিউলি গাছটা যে রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী, 

সেই মেয়েটা তো গাছ হবে না, আমাকে ভালোবেসে..।


সেতু

রঞ্জন ভাওয়াল  


ওপর দিয়ে হাজার টনের রেলগাড়ি 

যান্ত্রিক আওয়াজে ছুটে চলে যায়,  

নীচ দিয়ে বহে খর¯্রােতা নদী  

সারাদিন কলকল জল কল্লোল ধায়। 


কত নাটবোল্ট হয়েছে ঢিলে  

বুকে ওজন নিয়ে যায় নীচে হেলে,  

অসুস্থ সেতু পড়ে থাকে চিৎপাত  

আর কতকাল এই ভাবে যাবে চলে। 


বুকের ভেতর আগুন যন্ত্রণা  

দেহের অস্থিকোটরে চিড় ধরে,  

ভেঙে পড়ার জন্য আর কতদিন? 

বুকে রেলগাড়ি, সেতু পড়ে থাকে নিঃসাড়ে।



মনের বৃত্তে কালো ছায়া 

অরুণ বর্মন


আমার তুমি কেন আমার থেকে দুরে সরে যাচ্ছে?

কেন তোমার মনের বৃত্তে তৈরি হচ্ছে একটা মিথ্যা মোহের নীলাভ ছায়াপথ?

যে ছায়াপথে ক্রমশ স্পষ্ট হতে হতে একটা কালো প্রতিবিম্ব তৈরি হতে চলেছে।

তোমার হৃদয়ে প্রিয়র উজ্জ্বল উপস্থিতি হয়ে যাচ্ছে বিবর্ণ।

অতিতের সেই সোনালী সময় 

ঘারিয়ে যাচ্ছে মনের অজান্তে।


তোমার হৃদয় ব্যলকনিতে আমার ব্যকুল হৃদয়ের আককুতি দিন দিন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে।

নিরবধি পাওয়ার যন্ত্রনায় উপেক্ষিত হচ্ছে

নিত্য দিনের আবেগঘন আবেদন।

আরামের ফুসকড়ি রূপ নিচ্ছে বিষফোঁড়ায়। 

আপন সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে ঠুনকো অভিমানের মোহে

হাজারো রঙের ভীড়ে সবুজ হয়ে

যাচ্ছে গাঢ় নীল।


এই নীলই যেদিন মিলিয়ে যাবে 

আকাশের নীলের নীলিমায় 

সেদিনই অনুভুত হবে কি পেয়েছিলাম

কি হারালাম।

সেদিন সময় কথা বলবে অনুশোচনায়।

স্মৃতি বলবে মিথ্যা অভিমানের ভানে যা হারিয়েছো অবহেলে

তা আর ফিরে আসবে না শত চোখের জলেও।





অতৃপ্ত বাসনা

অনার্য আমিন


সেদিন বিকেলবেলা,

শত ইচ্ছেরা পুড়ে মরছিলো

ভালোবাসার বাইপাসে আগুনলাগা যানে

স্থির দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার সামনে

নিজেকে সংযত রেখে।

তোমার ঘন কালো চিকচিকে চুলে কালবৈশাখী বইছিলো আকাশে

হিজলবন পেরিয়ে শতফুলের গন্ধমাখা মাধবী লতায়

দুলছিল তোমার লম্বা কানের দুল

ট্রান্সপারেন্ট নেলপলিশে সাজানো

কয়েকটা নখ অকারণেই ছুঁয়েছিল আমায়

কিন্তু, আমি পারিনি।


ফুলঝুরি কথায় সুবিন্যস্ত দাতের সাথে

নাকমনিও দ্যুতি ছড়ায়

কথায় কথায় ভালোবাসার সেল বিদ্ধ হয় বুকে

ইচ্ছার বিপরীতে তোমায় ছুঁতে পারিনি।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট