প্রেম বুঝিনি বলে...

 

    অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


প্রেম বুঝিনি বলে...

যাকারিয়া মুহাম্মদ


রোকসানার সাথে আমার একটা সম্পর্ক ছিল ঠিক। তবে সেটা আদৌ প্রেমের সম্পর্ক কি-না, ঢের আলাপ আছে। অবশ্য ঝকঝকে একটা প্রেমের গল্প আমাদের হতে পারত। সে সুযোগ ছিল। যেখানে রোদ থাকত, মেঘ থাকত, আলো-আধারের খেলা থাকত।


আমাকে সে-ই প্রথমে প্রেমের প্ররোচনা দিয়েছিল। আমি তখন নতুন কিশোর। প্রেম নিয়ে ভয়-কৌতুলহ দুই-ই কাজ করত একসাথে বুকের ভেতর। সে সুযোগ পেলেই আমার আশপাশ ঘুরঘুর করত, অকারণ। চুপেচুপে আমাকে দেখত। এবং জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকত আমার আসা-যাওয়া পথের দিকে। আসলে সে কী চাইত, তখন ঠিকঠাক বুঝে ওঠতে পারত না অপরিণত বয়স আমার।


একদিন জানালা দিয়ে আমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল সে, সে জানালা কাঠের বানানো ছিল, কোনো শিক ছিল না তাতে, তাই মাথা বের করা যেত কী এক কারণে পেছন ফিরে তাকাতেই তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফেলি। তখন থেকে আমি অন্যরকম কিছু অনুভব করতে থাকি। এক তুমুল ঝড় যেন আমাকে এলোমেলো করে দিতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রেম বুঝতে শুরু করি। নিজের চেহারা, স্বাস্থ্য, জামাকাপড় ইত্যাদির ব্যাপারে সতর্ক হয়ে ওঠি।


একদিন তার আশকারা পেয়ে দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে চাচির কাছে ‘ধরা খাই’। এটা আমাদের সম্পর্কের প্রথম বাধা। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, যেন একটা ফুল ফুটবার আগেই ঝরে যেতে থাকে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। যে-কারণে দীর্ঘ দিন দূরে থাকি, তার থেকে।


এর অনেকদিন পর দ্বিতীয়বার একইভাবে ‘ধরা খাই’ আম্মার কাছে। ফলত এপথে আর একটুও এগোনো হয়নি আমার। বরফে ধাক্কা খাওয়া টাইটানিকের মতো আমার জমানো প্রেম, খুচরো স্বপ্ন সবকিছু ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। এবার এতবেশি ভয় পাই যে, আমার মনে কোনোদিন আর প্রেমের দখল চলেনি। তখন থেকে প্রেম জড়সড় হয়ে বুকের কোনো এক কোনায় বসে থাকে, এখনো যা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।


এরপর আমি পাল্টে যেতে থাকি। যে-প্রেম শুরুর আগে এত প্রতিবন্ধকতা সামনে তার কী হবে, ভেবে শঙ্কিত হই। আর কোনোদিন প্রেমের চিন্তা মাথায় না-আনবার শপথ করি। অবশ্য পরে আরো বছর খানেক সময় রোকসানা ‘চেষ্টা’ করেছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমার কিশোর মনের শপথকে একটুও টলাতে পারেনি তার কিশোরী মনের আহ্বান।


এখন যখন রোকসানার বিয়ে হয়ে গেছে। ভাবি, তখন যদি আরেকটু সাহসী হতাম! গল্পটা অন্যরকম হতো হয়তো।


ছাতক, সুনামগঞ্জ



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট