পদাবলি : ০১

 




কার্তিকের আকাশ

অলোক আচার্য


একা থাকতে শিখে গেছি

বেহুলাও একাই ছিল মৃত স্বামীর পাশে

গাঙুরের জলে।

হেমন্তে মরা কার্তিকের আকাশে যেভাবে

ঝুলে থাকে নিঃসঙ্গ চাঁদ 

কোনো রাত জাগা যুবকের বুকে।



নরাধম 

ফাহাদ আজিজ


শুদ্ধ হবার যুদ্ধে যেয়ে হারছি বারংবার,

আমি যে এক অধম পাপী জবাব নির্বিকার।

কুলোষিত আত্মা আমার, ছুটে দিগবিদিক,

কোনকিছুর ধার ধারে না, কোনটা ঠিক-বেঠিক।

পাপের জন্য জন্ম তার, পাপকে সে পূজে,

পাপ করে তাই পাপের ভিতর স্বর্গে সুখ খুঁজে।

পণ ভুলে ফের ছুঁতে চায় পাপের রাজ্য-দ্বার,

শুদ্ধ হবার যুদ্ধে যেয়ে হারছি বারংবার।



দুটি কবিতা

গুলবার 


নিঠুরা


শুষ্কতায় প্রেমের চারা মরে না! 

ভেতরে পুঁষেছিলাম প্রেমের বাবুই, 

বিষাক্ত অশ্রুর পরে হাজার তোড়ার সুখফুল—

তোমাকে উপহার ছিল! 

বিষাদ-সন্ধ্যেয় শিশির-সংসারে  

সংলাপের মতো গীত গেয়েছিলাম!  


তুমি নিঠুরা’র মতো ফিরিয়ে নিলে মুখ—

এক জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা এখন 

মরমরে শীতের পাতা! 


বিচিত্রা 


হে বিচিত্রা, এসো এসো কাছে এসো—

কীভাবে ধরিলা অমন ঢংয়ের কিরণ!

অন্তত পাঠ দাও!

আমি বিচিত্র ভবঘুরে 

হরেক রকম বাত্তি জ্বলে আমার পরাণ জুরে।



অভাব      

সোহেল রানা 


তবে এ কথাও সত্য যে

অভাবের ঘার্মাক্ত শরীর লতিয়েই 

আজ আমি চিকচিক 


অভাব নাস্তি ভাতমাছ পোশাকাশাক

ও দৈনন্দিন জীবন-সরঞ্জামাদি

নির্মিত বড় বড় প্রাসাদ

কংক্রিটের পথঘাট, উন্নয়ন রোল!

এবং নির্মিত হচ্ছে মানবসভ্যতার প্রাচীর।


একটা শূন্যতা, শূন্যতা আর হাহাকার হাঙরের ক্ষুধা হয়ে 

অনলস গোগ্রাসে:

ধীরে ধীরে গিলে নিচ্ছে সমাজ-সংস্কৃতি-কৃষ্টি কালচার-

এমনকি সকালের শিশির এবং গোধূলি-রক্ত-রংও!


আমার খুব ইচ্ছে করে ওই উদাম আকাশের তলে

অভাবের ঘার্মাক্ত শরীরে ভিজতে--


৮৮ বন্যা।



অপেক্ষায় অপেক্ষমান আমি

মুঞ্জুরুল হক বাশার 


কোন এক বসন্তের গোধূলি বেলায় 

কোকিলের ন্যায় আগন্তুক বট বৃক্ষে

প্রাকৃতিক সবুজাভ পরিবেশ কিছু আলাপ

দিগন্তের মনোমুগ্ধকর নীল আকাশের তলে

আমাদের পরিচয় ঘটে।

স্নিগ্ধ চাঁদনী আলো ঝলমল রাতে 

হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়।

নির্ঘুম রাতজাগা প্রহরীর হয়ে কতশত কথা।

গ্রীষ্মের প্রখরতায় তুমি এক টুকরো বরফ

হাড়কাঁপানো শীতে উষ্ণতার ফেরিওয়ালা। 

যেন বাগানের রঙবেরঙে ফুল

প্রাকৃতিক পরিবেশে আপনি বলে সম্বোধন 

গ্রীষ্মের ছোঁয়ায় তুই বলে পরিবর্তন 

মুগ্ধতার আলো ঝলমল পূর্ণিমার রাতে 

আদর, স্নেহ, আল্লাদে বলো তুমি।

ফাগুনে ফুল বাগানে 

নির্জন নিরিবিলিতে করা মান-অভিমান 

শরৎের কাশফুলের মাঝে দুজনের আড়ি 

হেমন্তে গাঙচিলের ন্যায় উড়ে এসে বলা

থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।

বৃষ্টিতে ভেজার একান্ত সঙ্গী 

মেঘের ভেলায় চড়া অদৃশ্য এক মেঘকন্যা

মনোমোহিনী রূপবতী কন্ঠ রাণী মেয়ে

গ্রামের এবড়োখেবড়ো সবুজ পথে মোদের

হাত ধরে হাঁটা একসঙ্গে। 

সুখ-দুঃখ আর অনুভূতিগুলোর শ্রতা

কঠিন দুঃসাধ্য পথে একসাথে চলা 

হরেকরকমের ভালো-মন্দ প্রেমালাপ বলা

শরৎ, হেমন্তে, শীত, বসন্তে সামঞ্জস্য মোদের

হয়তো এভাবেই রবে জনম জনম। 

আমি অপেক্ষায় অপেক্ষমান 

সবসময় এই খেয়ালে থাকি

কোন সময় তুমি হাজির হবে সশব্দে 

এবং অভিমানে তামাসায় মাতিয়ে

 তুলবে আমার হৃদয়ের পরিবেশ।



অযাচিত যোজন

নবী হোসেন নবীন


নারী যদি নদী হয়

নিদারুণ খরায় পুড়ে ফসলের মাঠ

নদী নারী হলে

চুকে যায় কবিতার পাঠ।

শ্রাবণে বসন্ত এলে

খরায় পুড়ে দারুচিনি দ্বীপ

ফাগুনে শ্রাবণ এলে

নিভে যায় কৃঞ্চচূড়ার দীপ।

কাক কোকিল হলে

থেমে যায় অর্ফিয়াসের বাঁশি

নিশুতির সূর্য নাশে চাঁদিমার হাসি।

পাথরে যদি ফুল ফুটে

কে আর ঠোঁট রাখে তার পাপড়ির ঠোঁটে।

মানুষ অমানুষ হলে

লোকালয়ে পশুরা করে বসবাস

মানুষ হয়ে যায় নির্জন বনবাস।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট