শেষ থেকে শুরু

 


শেষ থেকে শুরু 

আহাদ আদনান


-ফাঁসির আগে আমার শেষ ইচ্ছে জানতে চেয়েছিলো। তোমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম। 

-পঞ্চান্ন মিনিট চলে গেছে। আর পাঁচ মিনিট আছে। 

-আমার মরণের পর সব ভুলে যেও। আরেকটা বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করো।

-হুম, করবো। 

-করবো মানে?  সব ঠিক করে ফেলেছ? 

-ঠিক।

-কার সাথে? 

-শোভন।

-কোন শোভন?  টাওয়ার পারের সেই ছেলেটা? 

-হুম।

-যার সাথে পরকীয়া করতি, তার বন্ধুকেও ছাড়লি না। তোকে ভালোবাসি বলে কোর্টে তোর কোনো কেচ্ছা ছড়াতে দিইনি। আর তুই একটার পর একটা নাগর জুটিয়ে যাচ্ছিস?

-একটার পর একটা না। একটাই। শোভনকেই আমি ভালোবাসি। সুজন বন্ধুকে সাহায্য করতে যেয়ে তোমার কাছে ফেঁসে গিয়েছিল।

-কী বোকা আমি? সবাই বিশ্বাস না করলেও মরার আগে বলে যাই। খুনটা কিন্তু আমি করিনি। গলা চেপে ধরেছিলাম, কিন্তু সুজন ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল। 

-জানি।

-জানিস মানে?

-শোভন বলেছে। গ্লাভস পরে সুজনের শ্বাসনালীটা ওই ভেঙেছে। তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নষ্ট হতে দেয়নি।

-সেদিন সন্ধ্যায় পার্কে তুই তাহলে শোভনের সাথে ছিলি?

-হুম। সুজন বলতে এসেছিল তুমি পরকীয়ার ব্যাপারটা জেনে গেছ। ফোন বন্ধ পেয়ে বন্ধুকে সতর্ক করতে এসেছিল। শোভন বলেছিল আমাকে  বাসায় পৌঁছে দিতে। হঠাৎ তুমি আসায়  সব ওলটপালট হয়ে গেল। ওর গলা চেপে ধরলে আর আমি ভয়ে চিৎকার দিলাম। লোক জড়ো হওয়ার আগেই সুজন ফস্কে দৌড়। আমার গালে চড় মারতেই লোকজন এসে দেখল একজন রাগে হল্লা করছে, মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে, দুইশ মিটারের মধ্যে ঝোপের পিছনে লাশ পড়ে আছে। চতুর্থ ব্যক্তির অস্তিত্ব কেউ জানতেও পারল না। পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ সুজনের গলায় তোমার  ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়ে গেলো। ফুড আইটেমের ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার বলে শোভনের পকেটে গ্লাভস থাকে। ভিক্টিম আছে, সাসপেক্ট হাজির, মোটিভ পরিস্কার, প্রমাণ মিলে গেল, কোথায় পালাবে তুমি? 

-তুমি ইচ্ছে করলে কোর্টে আমাকে বাঁচাতে পারতে।

-ফরেনসিক যেখানে প্রমাণ পেয়ে গেছে আমি সেখানে মিথ্যা সাক্ষীর কেস খাব নাকি?

-এখন ইচ্ছে করছে তোকে খুন করি। ফাঁসিটা জায়েজ করি।

-সেটা তুমি পারবে না।

-কেন?

-তোমার চোখ বলছে, এখনো ভালোবাসো আমাকে। প্রকৃত প্রস্তাবে চোখ একটি জলজ প্রাণী। স্বাধীন মনপ্রজাতন্ত্রী স্বত্বা। ওর আদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। 

হঠাৎ খুলে যায় দরজা।

-ওয়েলডান। গোপন টেপে সব রেকর্ড হয়ে গেছে। ম্যাডাম, ইউ আর আন্ডার এরেস্ট। অফিসার, মিস্টার শোভনকে গ্রেফতার করতে স্টেপ নিন। কেসটা রি-অপেন করতে হবে। দোস্ত আমি যখন কেসটার চার্জ নিয়েছি তোকে বের করে আনবোই।


ঢাকা। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট