মুক্ত বিহঙ্গ
রাতিক হাসান রাজীব
ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে রাতের অন্ধকার। সূর্য কবেই হেলে পড়ছে পশ্চিম আকাশের প্রান্তসীমানায়। অপ্সরা এখনো সমুদ্র পাড়ে একা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে কেউ নেই। নেই বাড়ি ফেরার তাগাদা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অপ্সরা নিজেকে নরক থেকে স্বর্গে স্থানান্তরিত করেছে। গতকাল ঠিক বিকেলে সে তার চেয়েও বড় একটি কাজ করে ফেলেছে। যার কারণে আজ যে এখানে।
বয়স যখন তার দশ, বাবা-মা মারা যায় এক সড়ক দূর্ঘটনায়। এরপর থেকে সে চাচা-চাচির সাথে আছে। ঠিক সাথে বললে ভুল হবে। তারা তো তাকে রেখেছে স্রেফ কাজের মেয়ে হিসেবে। দিন রাত চব্বিশটা ঘন্টা তাকে খাটিয়ে মারতো। সারাদিন কাজ করেও একটু ফুরসত পেতো না সে। বিনাবাক্যে তাকে একটার পর একটা করে যেতে হতো। কাজে ফাঁকি তো দূরের কথা সামান্য ভুল হলেই রক্ষে নেই। গায়ে হাত, লাঠির আঘাত তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর সেদিন ঘটেছিল লঙ্কা কা-। ঘনিষ্ঠ কিছু মেহমান এসেছে বাড়িতে। বরাবরের মতো রান্নার দায়িত্ব বর্তায় অপ্সরার উপর।
দুই হাতে দশ হাতের কাজ শেষ করেও তার কপালে দুঃখ ঠিকই রয়ে গিয়েছিল। সবগুলো রান্নাই খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু একটি তরকারি লবণ বেশি হয়েছিল বলে অপ্সরার চাচা বেজায় রেগে যায়। মেহমান বিদায় হওয়ার পর যাচ্ছেতাই কথা বলে অপ্সরাকে। শুধু কথা নয়, ইচ্ছে মতো মারধর করেও তাকে। মারধরের এক পর্যায়ে চাচী তার হাতে আগুনের সেক দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে নি। আগুনের জ্বালায় অপ্সরার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও কেউ একটু পানিও দেয়নি।
শেষমেশ অপ্সরা প্ল্যান করে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যাওয়ার আগে আরেকটি কাজ করে যায় অপ্সরা। তার চাচা-চাচীর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়ে যায়। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং আনন্দ হচ্ছে, মুক্ত হওয়ার আনন্দ।
আজ থেকে সে আর খাঁচায় বন্দী পাখির মতো নয়, পরাধীনতার শৃঙ্খল ছেড়ে স্বাধীনতার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ সে। এখন থেকে পুরোটা আকাশই তার। ঠিক পাখির মতো। কিন্তু দিনশেষে পাখি সব ঘরে ফিরে সন্ধ্যা নামার আগে। রাতের আকাশটা যে তাদের না। অপ্সরাও তো পাখির মতো, তাহলে রাতের আকাশ কী তার জন্যও না?
ঠিকানা: মোহনা এ-১৪/১,পাঠানটুলা,সিলেট।