শীতে লেখা পদ্য



শীত
শারদুল সজল

এই আদুরে শীতে
আপেলওমে জেগে উঠে আদমশরীর
কেঁপে কেঁপে- ঠোঁটের দ্রবণে
ভিজে যায় পৃথিবী
দাউ দাউ জলে দশটি আঙুল
দশ দিগন্তে- লাফায়  
চুমুরজাহাজ

ভাসে সমুদ্র- ভাসে তৃতীয় থিউরির
হংসিনী স্নান!

বুকের নিঝুমে
ভিড়ছে- টোটেম নগরীর রাত-ওম
ফিসফিস- তন্দ্রাবিমুখ মাধবী ছায়া
সন্ধ্যাতারার ওলানছুঁয়ে
শরীরে শরীরে নামছে মায়া
শর্ষেক্ষেত, কুয়াশা-রোদে
রটে গেছে সেই কথা
মাংসল ত্বকজুড়ে ঘুমিয়ে আছে
ভূগোলবিদ্যার ইবাদতনামা!

এই শীতে
শারমিন আক্তার

আমাদের লেপের তলায় এখন গল্পের মজুদ
ডায়েরিতে গুঁজে থাকা নিশাচর পাতারা নিস্তার পেয়েছে কয়েকদিন,
তুলে দিয়ে যাবতীয় রাগতাল অধ্যুষিত ঘুমের দায়ভারে।
পোকাদের ঠোঁটে কোন রেণু ?
নেই¬ তাই জমে গেছে সুঘ্রাণী আবেগ
কসমস কিবা সওরং।
এসবের ভীড়েও কোন নিস্তরঙ্গ বেদনা- উম খোঁজে সকাল সন্ধ্যা
কোন প্রেমিকের বাজেয়াপ্ত উষ্ণতায়
যদি মেলে ক’ফোঁটা গরম চোখের জল ।

জলের ভেতর এক রাত
শেখর দেব

কাল সারারাত কেটেছে জলের ভেতর
অবাধ সাঁতার দিয়েছি প্রাক্তন পুকুরে
কিছু অনবদ্য ডুব আর
অতল মুক্তার মায়াবী প্রজ্জ্বলন।

আমাদের দ্বৈত ডুবের সংসারে জলকে ভেবেছি হাওয়া
আসনের বিবিধ মুদ্রার ভেতর
প্রবেশ করেছি দেহ থেকে দেহান্তরে
টান টান প্লবতায় অরূপ মৎসক্রিড়া।

টোকা দিয়েছি অন্ধকারে
আধাঁর হতে বিচ্ছুরিত হয় আলোর প্ল¬াবন
আমি আলো আলো বলে ডুবে যাই ঘাটের কিনারে
দেখেছি ষোড়শীর উত্থিত মায়ার প্লাবন
তখন তলপেটে নড়ে উঠে অসভ্য অসুখ
তাকে কখনো সভ্য হতে বলিনি!


শীত এবং আমি
রেবেকা ইসলাম

সেই শীতার্ত হিম হিম ঘোর লাগা ভোরে,
উষ্ণ কফির বুদবুদ মাখা বাতাসের ঢেউয়ে
আমি একাই ভাসতে চেয়েছিলাম,
তোমার আলোয়ানের গন্ধে জড়িয়ে নিভৃতে,
কোন ভাগাভাগি নয়,
কবুতরের বুকের মত শাদা পেলব
কুয়াশার সঙ্গীতে অলকানন্দা হয়ে
শিশিরে পা ডুবিয়ে হেঁটে যাই বিমুগ্ধ আমি,
খুলে যায় আশাবরী মনের দুয়ার
একটু একটু করে নীরবে,
হঠাৎ পাশাপাশি চলে আসে ও
আমি থেমে যাই অতৃপ্তিতে, সেও থামে
ঠোঁটের কোণে ধনুকের সেই চিরচেনা হাসি
তারপর আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে আমার
ডানাহীন অনুষ্ণ বনেদী সুখকে,
আমার শীতের ওম ওম সকাল
দুপুরের মত উদাস হয়ে যায়।



প্রকৃতিও কাঁদে
সৈয়দ মাশহুদুল হক

তুমি কি ছুঁয়েছ কভু ঘাসের ডগায়
বিন্দু বিন্দু শিশিরজল?
শীত সকালে কাক্সিক্ষত রোদের মেলায়
করে যারা জ্বলজ্বল।
তুমি কী দেখেছ রোদের উত্তাপে
শিশিরের করুণ পরিণতি?
শুনেছ কী তাদের আহাজারি-বিলাপ;
নাড়ির স্পন্দনের অবনতি?
সাত সকালে নগ্নপদে মাড়াতে যখন
দূর্বাঘাসের শিশিরজল
দেখেছ কী কভু শিশিরের চোখ দু’টো
ছিলো ছলছল?
ভাবোনি তো? প্রকৃতিও কাঁদে
মানুষের অত্যাচারে, তবুও মানুষ কী কভু
প্রকৃতিকে ছাড়ে?


একটি শীতকালীন প্রভাত
এস এম নূরনবী সোহাগ

সূর্যকে অস্বীকার করে কুয়াশার
গভীরতা। প্রভাত বেড়ে ওঠে গড়পড়তা
মাঠের কোলে ধেয়ে আসে অভিজ্ঞ
পা। অদূরের সবকিছু আঁধার লাগা
মটরশুঁটির লতা রূপোর প্রলেপে
ঢাকা। মেঠোপথ থাকে শান্ত রঙে আঁকা
কোন গৃহস্থ ঘর এখনো ঘুমের গন্ধে
মোড়া। স্থির হয়ে থাকে চঞ্চল প্রকৃতিরা
ধানশালিকের চোখে কুয়াশা এসেছে সেই
কবে! মাথার উপর সূর্যটা তবু চাঁদের মত ধবধবে

শীতে ছ্যাঁকাবুকে
মাহমুদ নোমান

বিবর্ণ রোশনির মরাপাতার দুপুরটিতে
মুচকি হাসির বাতাসের ফড়ফড়ানি
যোনিতে ছড়ানো ছিটানো
মাছের আঁশের উৎকট দুর্গন্ধে
আইল থেকে আইলে উড়ে বসছে বগা
ঘুঘু চরছে ছায়াঘেরা স্যাঁতস্যাঁতে ভিটায়
মনে ভাসছে ছায়াছবির ঝিলমিলে
পারদরেখায় হারানো মুখোশে -
হৃদপাখির বোবা আর্তনাদ,
বেরহম বেদনায় কাতরায় বুকের পশম
পুকুরের জলে...



শীত ও বঞ্চনা
সাঈদ চৌধুরী

অর্থহীন পথের বাঁকে যে কথাগুলো লিপিবদ্ধ থাকে
সে কথাগুলোই জীবনের নিদারুণ সত্য বলে বিবেচিত
রেল লাইনে তীব্র শীতে বাঁচা কুকুরগুলো
একবার রেল চলে যাওয়ার পর লৌহ দন্ডের উষ্মতা নিয়ে বাঁচে
একজন মানুষ, সে খুব ছোট্ট শিশু
এখনও কথা বলতে গেলে ঠোঁটের বাঁকে বাঁকে
মায়ের দুধের বোটা চুষে খাওয়ার মত আলতো ভাঁজ পড়ে
শিশুটির মা অনেক দূরে কাজ করে
আর শিশুটি....?
একটা বৈদিশিক সাহায্যে চলে এমন স্কুলে পড়ে
মায়ের অনেক স্বপ্ন সে বড় হবে
ছেলে তার মায়ের বৃদ্ধাকালের লাঠি হবে,
যে বুক খালি করে মা এত স্বপ্ন দেখে
আদৌ কি তা পূরণ হবে ..?
রেললাইনের কুকুরগুলো লৌহ দন্ডের ঘর্ষনে উষ্মতা থেকে ওম নেয়
শিশুটি মানব শিশু
সে এ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নাম ধারণ করেছে
তার ভাগ্যে তীব্র শীতে উষ্ম কোন বস্তুও জোটেনা
সে হাহাকার করে মায়ের বুক খোঁজে
দুধের গরম খোঁজে
ততক্ষনে মা শিশুটির মুখে ভাত দেওয়ার জন্য
অলিতে গলিতে “অ্যাই শাড়ি নিবেন, শাড়ি...”
বলে বলে চিৎকার করে বঞ্চনার আহাজারি করে
মা কাঁদে, হাসে, অবাক হয়, স্থবির হয়
আবার নতুন ভোরের অপেক্ষা করে ।



শীতশাসন
সুজিত মান্না

এই সমস্ত দৃশ্য আমার ভিতর বছর বছরের
                                               অনুভূতি জাগিয়ে তোলে
জলতলের গতি দেখে বুঝে নিই
হাওয়া কোনদিকে বয়ে চলে

আমি যথেষ্ট লোভী নই , কিংবা দাম্ভিকও নই
তাই এই শীতপ্রবাহ আমায় ঘরমুখো বাদে কিছুই দেয় না

প্রতিটা দিনের ভূমিকা দেখলে মনে হয়
কেন এই দূরত্ব সৃষ্টি করছি

পুকুর কিংবা নদীর তলদেশের কাছে গেলে এমনই মনে হয়
মনের মধ্যে অবতীর্ণ  হচ্ছে ক্ষুদ্রতর পাপ

শরীরের ওপর চাপিয়ে নেওয়া হয়েছে শীতকালীন ভূমিকা
বাতাসের কণ্ঠে কণ্ঠে মিশে গেছে পৃথিবীর বিস্ময়রূপ

আমরা সমর্থন করি কিংবা না
এই বিচিত্র মেঘের বয়স বাড়তে বাড়তে
আমাদের নির্ভর উষ্ণতা প্রান্তর নীচে নেমে আসবে




নীল কুয়াশা
জালাল জয়

১.
কুয়াশার হিমে থাকি চেয়ে
শিশিরে স্বপ্ন মিশে ছুঁয়ে যাই ঘাসে
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে রোদের নেশায়
ছুঁয়ে হাঁটি ঝরাপাতায়। শীতলা খামে
দেই উড়িয়ে তোমার নামে...
২.
এসো হাঁড় কাঁপিয়ে হিম কুয়াশায়
নদী জলের মায়ায়, ছুটে কাজল ছায়ায়।
এসো উষ্ণতার ভিড়ে ধানশালিকের নীড়ে
এসো মন কাঁপিয়ে- ধরো প্রান ঝাপিয়ে
কুয়াশা কুয়াশায় রুপ লুকিয়ে, প্রজাপতির
রঙ ছড়িয়ে। পুষ্পকাকলী সাজিয়ে আজ
এসা এসো পালিয়ে লাজ
মনের বাঁধনে হিমেলের সাজ।
৩.
এসো খাল বিল জলে-দু’হাত ভরে স্বপ্ন সাজাই
হিমে নীল কুয়াশায়। নগরের ক্লান্ততা ভুলে
এসো ফসলের বুকে- হলুদ শস্যে নিজেকে হারাই
আকাশের নীল খুঁজে কষ্ট পোড়াই।  
৪.
চোখে নীল ঠোঁটে নীল উড়ে যায় গাঙচিল
ঝিলমিল শীতে দিল্ তুমিহীন মুসকিল
স¦প্নতারা জ¦লে নিভে বলে তুমিও কী
যাবে চলে শিরশির কম্পনে আমায় ফেলে...




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট