প্রেমিকা সমাচার
জাহিদ আল হাসান
প্রেমিকা নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমে যে জিনিস সম্পর্কে জানতে হবে সেটি হচ্ছে প্রেম । বিশ্ব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই দেশীয় ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রকার মিথ- এ প্রেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আবেগ অনুভূতির উপস্থিতি পাওয়া যায় । যুগে যুগে অনেক কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, তাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবীগণ প্রেমের নানাবিধ সংজ্ঞায়ন করেছেন। ইংরেজি ৎড়সধহপব শব্দের বাংলা অর্থ হিসেবে প্রেম ও ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও রহস্যময় অনুভূতিকে বোঝায় । প্রেম মূলত মানবিক শক্তি, ঈশ্বর একাধিক মানুষ ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর হতে পারে । তবে তথাকথিত নারী ও পুরুষের প্রেমই আমাদের আলোচ্য বিষয়। এক প্রকার অদ্ভূত মানসিক আকর্ষণ যা বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি আনার আকাক্সক্ষা তৈরি করে তাই প্রেম । এই মানসিক আকর্ষণের ভেতর আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয় জড়িত । নদীর মোহনার মতো নিবিড় মানসিক আকর্ষণের আরেকটি সংযোগ রেখা হচ্ছে কাম । শারীরিক আকর্ষণের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুটোই প্রেম মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তবে প্রেম দীর্ঘদিন বেচেঁ থাকা বৃক্ষের মতো; মনের ভেতরে ছায়া দিয়ে যায় অনন্তকাল ধরে। কাম মরে যায়-লজ্জাবতী গাছের মতো আলতো ছোঁয়াতেই।
প্রেমিকা বলতে নারী চরিত্রকে বোঝায়৷ স্বভাবজাত একজন পুরুষের বিপরীত লিঙ্গের যেসব মানুষের প্রতি মানসিক ও উহ্য যৌন আকর্ষণ থাকে তারাই প্রেমিকা৷ এই প্রেমিকা মানুষের জীবনে সময় ও কালের আবর্তে ঘুরতে থাকে৷
প্রেমিকা - সময়ের ট্রেনে চড়ে জীবনের পথে চলতে থাকে। কখনো স্বশরীরে, কখনো স্ব অন্তরে কিংবা কখনো পুরোপুরি শিল্পীর আঁকা কাল্পনিক চিত্রকর্মের মতো; জীবনের শৈশব পেড়িয়ে কৈশোরে এসে আমার কাছে প্রেমিকা ছিল এমন । রাতের বেলায় চোখ বুজে থাকা নারীর মুখ । স্বপ্নে আঁকা ষোড়শী শরীর আর ঝাঁঝালো হৃদয়ের নারী। সেই প্রেমিকা আমার নিজের লেখা কবিতার বই। আমি যাকে রোজ রাতে পাঠ করতাম । আমার হৃদয়ে তুফান আনা সুর। যাকে গুণগুণ করে আমি গাইতাম।
তবে মানুষ প্রতিনিয়ত বদলায়। নিজেকে ভাঙে, তৈরি করে। সামাজিকতা পরিবর্তন হয়। জীবনের বেপরোয়া গাড়িকে কল্পনার জগত থেকে টেনে এনে বাস্তবে এসে নিয়ম অনুযায়ী চলতে হয়। সে সময়ের প্রেমিকা আমার বাস্তব সঙ্গী। আমার আসল প্রেম । যিনি দৃশ্যমান, যিনি স্পষ্ট । মনের মৃত্তিকায় প্রেমিকা হিসেবে রোপণ করার পর যাকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়, সেই প্রেমিকাই গাছ হয়ে নিঃস্বার্থভাবে ছায়ায় আটকে রাখবে প্রেমিক কে। প্রেমিকা যদি অতিরিক্ত নেশা হয়ে যায় তবে প্রেমের মাঝের অধিকাংশ সময়ই এক অন্য জগতের ভেতর থাকতে হয় ; যা জীবনের জন্য কোনো ধ্বংসের কারণ ও হতে পারে । তবে অবশ্যই প্রেমিকাকে নেশার মতোই গ্রহণ করতে হয়, শুধু ঘোরের সময়ে সচেতন থাকতে হয় জীবন নিয়ে। কেননা প্রেমিকা জীবনেরই অংশ, জীবন প্রেমিকার অংশ নয় । যে প্রেম নিজের স্বকীয়তাকে বাঁচিয়ে রাখে সে প্রেম সার্বজনীন। প্রেমিকার হাসি যার কাছে হিমেল বাতাসের মতো শীতল লাগে তিনিই একজন প্রকৃত প্রেমিক। প্রেমিকার মন বোঝা জগতের সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য হলেও বুঝতে পারার যে পথ সে পথে হাঁটতে পারাটাই সফলতা । আর প্রেম ও প্রেমিকা জীবনকে খুব কঠিনভাবে ধরে রাখে স্মৃতি কিংবা বিস্মৃতির পাতায়। এই শ্বাশ্বত প্রেম ও প্রেমিকা যদি প্রেমিক কে একেবারেই বুঝতে না পারে তবে তা এরুপেই থাকে । কখনো একটা প্রশান্তির দোল দিতে পারে না প্রেমিকের মনে। প্রেম প্রাকৃতিক, প্রেম ঐশ্বরিক। এই প্রেমের ভেতরেই সুখের আলো জ্বেলে দুঃখের আঁধার আনে প্রেমিকা। কেননা প্রেম, প্রেমিকা, সুখ ও দুঃখ একই নদীতে চলে। একই নদীতে সঙ্গম করে স্রোতের মোহনায় ।