কামশীতলরাষ্ট্র
ইমরান মাহফুজ
রোদের অন্ধকার থেকে ছায়া কথা বলে। কেউ শুনে না। চুপচাপ শুয়ে থাকে ক্লান্তবিকেল। আনন্দভ্রমনে পাখিদের যাত্রা। উড়ে যাচ্ছে মেঘ। মানুষরা হারায় সমুদ্রবেলায়। তলদেশে উদ্ভিদের অদ্ভুত সা¤্রাজ্য!
জ্যোতিময় ঘুঘু ছুটির দরখাস্ত রেখে হাসপাতালে গত সাতদিন। আমি সমুদ্র পাড়ে চোখের হলকা পোয়াচ্ছি। কারো কারো ম্লানের দৃশ্যে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ছে। পুকুরের পাড়ে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকতাম। কখনো কখনো ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে রোয়াখেত মাড়িয়ে নিজেই নিজেই পালাতাম। ইচ্ছারা করতো নিঃসঙ্গ রাত্রিযাপন!
এখন আলোতে কিংবা স্বপ্নঘোরে দৃশ্যরা হরহামেশে জ্বালায়। ঘুমন্ত শষের মতো কামশীতলে পড়ে থাকি। যেমন হাজারো বুদবুদ নিয়ে গোয়ালঘরে মুখোশপরারাষ্ট্র।
সূর্যবন্ধনা
জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
(স্নেহপ্রিয় আলিফ আল ইমরান স্বরণে)
সংসারের হাড়ে চিতি পড়ে গেলে বেড়ে যায় ঘরের ময়লা; আল বেয়ে বেয়ে হেটে যাওয়া মানুষগুলোও হয়ে ওঠে পিনিকপাখি ! শস্যকণার নিবিড় নিদ্রা শেষ হলে পঙ্গু হয়ে পড়ে শিশিরের সন্তান । আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি মর্গের বিলবোর্ড; কোলাহলে ডুবে ডুবে খাই নিষিদ্ধ চা! কেউ বলেনি; সময় এখন শুয়োরের বাচ্চা !
মানুষগুলো ল্যাংটা চাঁদের দেহ খুলে বসিয়ে রাখে রক্তের প্রদীপ; কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি বলে আমাদেরও হয়না কোনো রকম আক্ষেপ- ঘরে ঝুলিয়ে রাখি পয়সার ছবি; আদর আদর বলে কোথাও বেড়িয়ে পড়ি সংসারের কোলে; মা সেলাই করে চলে গল্পের কাঁথা, সন্ধ্যের খরগোশ ঢুকে পড়লে ঘরে মায়ের হাতে ঢুকে পড়ে সুঁই, চুলোর দুধ পুড়ে উড়ে ধোঁয়া। মা; মানুষগুলোর কথা ভেবে ভেবে রচনা করে মুখর শিলালিপি ।
বাজারের থলে ভরে কেউ কেউ নিয়ে আসে মেঘের মাছ; মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যায় সূর্য ! নিছক কলঙ্ক মেখে দোয়েল কি বলবে ভেবে উড়াল দিল আকাশে, করিডরে নিষ্ঠুর প্রজাপতিরা হেসেই কুটিকুটি। বৈকালিক অভিমানে চুরি যায় মানুষের মন; দৌড়াতে দৌড়াতে মানুষগুলো হারিয়ে ফেলে মন, সূর্য তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষ দেখে; বেরঙের পথগুলো সূর্যের অবাকটুকু গিলে ফেলে কাছে ডাকে, সূর্যও হয় মানুষ। ঘটা করে একদিন মাছিদের উৎপাতে মানুষের ভীড়ে সূর্যও ঘুমিয়ে পড়ে স্ট্রেশনে !
অতিক্রমন
আমিনুল ইসলাম সেলিম
পথ থেকে উড়ে যাচ্ছে ধুলোর মেকাপ
বেরিয়ে পড়ছে তার ঠনঠনে কঙ্কাল,
লজ্জাহীন কশেরুকাগুলো
অপরাহ্নরোদে-
মেলছে সজারু-কাঁটা বিষাক্ত দুপুর
নৃত্যমাতাল যেনো মিথ্যুক ভয়ের প্রতাপ
অথচ আকাক্সিক্ষত প্রান্তসীমা ছুঁতে
মানুষকে হাঁটতে হবে সুদীর্ঘ জীবন।
কলকাতার সেলফি ৩৩
সৈকত ঘোষ
প্রচণ্ড ভাবে বেঁচে থাকার মধ্যেও
আমরা মৃত্যুকে দেখতে পাই
আমাদের জড়িয়ে থাকে আমাদের ছায়া
সুযোগ বুঝে আমরা সবাই
কোনো না কোনো চরিত্রে অভিনয় করছি
সমস্ত অসহায়তা ডিঙিয়ে
অন্ধ হয়ে যায় সম্পর্ক নামক রেলিং
একটা সময় পর আমরা মেনে নিতে শিখি
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আছে একটা সহনশীল দরজা ।
জীবন
হিমাদ্রী মুখোপাধ্যায়
অতলান্ত ডুবের নিচে, অন্ধকারে
ডুবে আছি-
ডুবে আছে ভাগ্যদেবীর হস্তরেখা...
হাত ধরো হে করুনাময়ী, জল পেরিয়ে
আঙুল ছুঁয়ো-
তোমার হাতেই হাত রাখে এই বাঁচতে শেখা।
খড়ি
হুসাইন আল হাফিজ
তুমি চাইলে নদী হতে পারি
বুক খুঁড়ে প্রত্যহ পান করতে পারো অমীয় সুধা
মনে করো; আমি চাঁদ তুমি জ্যোৎস্না
তুমি আলপিন হলে; আমি বারবার দর্শন দেব
বেলুনরূপে। গালের উপরে উপচে পড়া একগোছা
চুলের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আমায় দেখো না তুমি
হতে পারি বৃক্ষ; যে গুনে প্রতীক্ষার প্রহর
তোমার বিশ্বাস হয় না?
স্মোকার হয়ে যখন সিগারেটে টান দাও তুমি
আমি আগুনের গোলা হয়ে তোমায় প্রদর্শন করি।
তুমি চাও আমি জ্বলি; অথচ আমি প্রজ্বলিত খড়ি
অবিরাম তোমাতে জ্বলছি আর জ্বলছি!
বছর বিশেক পরে
লাবন্য শাহিদা
ঘুমোচ্ছো?
বললি বা দিক ফিরে
আমি ফিরলাম তোর দিকে চেয়ে
আজ থেকে বছর বিশেক পরে
আমি আর তুই একি ছাঁদের নিচে
একি গন্ধ একি বডি স্প্রে নিয়ে
আমার তোর সময় যাচ্ছে বয়ে
আচ্ছা, বলছি শোন, তখনো কি
এমনি ভাবেই কবিতা শুনতে চেয়ে
দিব্যি রেগে বলবি ভীষন ক্ষেপে
‘তুই একটা বাসন মাজা মেয়ে’
বলব আমি আদর মাখা গলায়
পাচ্ছি কি সময়?
তোর সংসারে যাচ্ছে আমার জীবন
এমনি তুই সটাং করে গিয়ে
আনবি খুজে কাগজ কলম খানি
বলবি রেগে এই নে, তুই ঝাঁসি কি রানী
ওমনি আমি গলগলিয়ে হেসে
বলব এমন দস্যু ছিলি বলে
বশ মেনেছি তোর আকন্ট দেশে
তখনো কি এমন নিয়ম করে
রোজ ঝগড়া আর দস্যিপনা হবে?
এ কথাতেই আবার বা দিক ফিরে,
ঘুমাচ্ছিস তুই কালকে অফিস বলে
সেই বছর বিশেক আগের কথা
যখন অফিস বলে রাখতি ফোন
ঘুমাচ্ছিস এ শুনেই উঠত টোন
ঝগড়া নাকি মেঘের গর্জন
আমার তোর নেশা ছিল মুভির
আজো ঠিক তেমন আছে সবি
শুধু টিনটিন এক হয়েছে
তোর আমার একি ড্রয়ার বেডে
ঠিক আজ এত বছর বাদে
আমি তুই আজো আছি
তেমনি জুড়ে দুয়ে
যাচ্ছে সময় বাড়ছে আয়ু
দীর্ঘ হচ্ছে পথ
এই পৃথিবীর এক বায়ুতে
তুই আর আমি এক রথ
দেখিস,
আজ থেকে বছর বিশেক পরে
আমি আর তুই একি ছাঁদের নিচে।
উঠোনে রাতের ঘাসফুল
খোরশেদ আলম খোকন
উঠোন জুড়ে আলতা রাঙা ঘাসফুলগুলো সকাল সন্ধ্যায় গোধূলির গন্ধে,
প্রত্যহ অন্ধকারে তারার আঙিনায় স্পর্শের শব্দ শোনায়।
তারপর, ক্লান্তির বিশ্রাম এসে হামাগুরি খায় ভোরের ক’ফোটা শান্ত শিশিরে...
নৈশব্দের দো-হাতে কাঁচের চুড়িগুলো গড়াগড়ি করে মরে রাতভর!
কান পাতলে শোনা যায় কালো ঘুটঘুটে অমাবস্যায় চুড়ির কঙ্কণ,
রাত্রির দ্বিপ্রহরে থেমে থাকা চুম্বন; নূপুরের ঝনঝন আওয়াজ বেজে উঠে পরপর...
প্রভাতীর উঠোন জুরে নুয়েপড়া লজ্জার লাল দাগগুলো-
দুপুরের ঘাসফুলের মত জ্বলজ্বল করছে;
রাত শেষে কুয়াশার ঘুঙুরে প্রভাতী ঢেকে নেয় তার সমস্ত উঠোন।