শব্দমিছিল
ইমরান মাহফুজ
লালশাকের অভিনয়
বাবার ডান পাশে খেতে বসেছে আমেনা। মাছের ঝোলে রান্না করা নতুন লাউ মরমীয় সঙ্গীতে আয়েশ করে খাচ্ছে সবাই। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বাবা নুরল আলম। পাশে থাকা এলোকেশী ছোট মেয়েটির লালশাক খুব প্রিয়।
খাওয়ার সাথে পলিয়ে বেড়ানো ভাবনাগুলো ধরা দেয় মনের খেয়ালে। শৈশবে লালশাকের ঝোল দিয়ে রক্তের অভিনয় করতো আমেনারা। আর এখন রক্ত দিয়ে লালশাকের অভিনয় করে জীবন খেলায় ভুলিয়ে দেয় মা-বাবার শোকাশ্রু।
বাবারও প্রার্থনা দুুপুর ঢেকে দিক শিশিরমমতায় ঘাসফুলের কান্না!
কথোপথোন
মায়ের বুক থেকে নগরে বীজ এনেছি যতন করে
ইটরঙা বিকেলে আয়েশি ভঙিতে রুয়েছি টবে!
দিনরাত ঘামশ্রমে বিলিন সময় কর্পোরেট রসুই ঘরে
চেনাগত সন্ধ্যায় ক্লান্ত জ্যামে বাসায় ফিরি
দশকজুড়ে দেখি বীজ থেকে গাছ বসা পাতায়
ফুরসত পেলে আদর করি!
অথচ তাকায় না- কথা কয় না- ফল তো অনেক দূর।
মা বলে পাগল ছেলে, শহরে গাছ ফলবতী হয় কী রে!
মৌনতার বর্ণমালা
(একুশের কনিষ্ঠতম শহীদ ওহিউল্লাহকে)
উপত্যকাজুড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে চক্রাকার উদ্ভিদ
হিংস্রচোখ তন্নতন্ন করে বেড়ালের মতো
খুঁজে ফিরছে ভাষাপ্রেমীদের-
রক্তাক্ত তা-ব লিলা থেকে বাদ যাচ্ছে না
কুয়াশার আড়ালে থাকা ভূমিহীন কিংবা অশ্রুহীনরা!
সহমরণে চৌচির নদী- বিষাদের গীত গেয়ে চলছে।
পাখিদের বিচিত্রবোধে দেবদূতও হতাশাগ্রস্থ!
ফুটপাতে ঘুমিয়ে পড়েছে কোলাহল-
নবাবের হাইওয়ে জীবনানন্দ বাড়ি ফিরছে।
ওহিউল্লাহ বাকরখানী হাতে বাবার অপেক্ষায়-
পলাশি থেকে দেখছে সবুজ পৃথিবী! কাছে ডাকছে স্বপ্নরা।
হঠাৎ বাঁ দিক থেকে একপলক তাকাতেই-
রোদের মানচিত্রে ভাষাহীন অবুঝপ্রাণ
আঁধারের শহরে ওহিদের শরীরজুড়ে মৌনতার বর্ণমালা।
মেঘমল্লার স্বপ্নে জেগে থাকে ফাগুনের বাংলাদেশ।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল : সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=YO9D0KK6Jps