হরিয়াল
রওশান ঋমু
কৈশোরের কুসুম গোধূলিবেলায়
ক্লান্ত ধূলিকণা খোঁজে,
আকাশে মধুর তৃষ্ণায়
ইশারায় ডাকে নির্ঘুম মাছ;
রুপালি চোখ শিশিরের ছায়ার
আশ্চর্য সঙ্গী !
কপালের মাঝখানে করুণার কুমকুম চিহ্ন
বিষন্ন ঠোঁটে থরোথরো মুগ্ধ বর্ষা,
আমলকী ফুলের গন্ধে,
নিঃশেষে পোড়ে চুলের কুয়াশা।
কর্নফুলী ভাসিয়ে রাখে ময়ূরপঙ্খী,
দুই কূলে
সারাদিন, সারারাত দিগন্তে-
পুতুলের ডুব সাঁতার,
শিথানে সন্ধ্যামনি-
পৈথানে অন্ধ রজনীর নিষিদ্ধ হরিয়াল।
নীল কপাট
সা’দ সাইফ
আমি নাহয় একটু ব্যথাই পেলাম
তাতে কী; ওটা তো ভালবাসা।
এই যে তুমি আমাকে দিচ্ছ, রাশি রাশি
অথবা অলিন্দে গাঁথা সুখ।
এ ঠিক আঁকাবাঁকা শর।
আমি না হয় একটু দূরে’ই গেলাম।
এ ঠিক দূর নয়; ইস্পাতের রিং।
দূর নাকি পথের পানে বুক কাঁপা সুর!
আমি মূর্ছা যায়।
ওই সাদা বোর্ডের দিকে তাকিয়ে।
ওটা তো চোখ ধাঁধানো নিয়ন বাতি!
আমি আর জাগিনা
ডাকিনা আপন মহিমায়।
প্রহর কেটে যায় প্রহর নিয়তে।
কীবোর্ডে হাতড়িয়ে চার ইঞ্চির দিকে আর তাকাই না।
এ হাত বাঁধা;
আমি না হয় চলেই যাব নীল কপাটে ধাক্কা খেয়ে।
যে খেদ জমেছে
জারিফ এ আলম
অগোছালো আর ইশারার ঈর্ষাকাতর উৎসবে
ঊষর ঋণের এই ঐকান্তিক ওড়াউড়িতে;
ঔপনিবেশিক কষ্টের খেরোখাতায় গতানুগতিক
ঘুরছে চালক। ছড়ানো জন্মের ঝিনুকে
টাঙানো ঠুনকো ডামাডোল।
ঢাকনার তলদেশে থুতনিতে দরদাম ধরপাকড়;
নিবিড় পদাবলিতে ফাগুনের বৈভব।
ভারহীন মন্বন্তরে যুক্তির রিপুতে লালনগীতি;
শব্দের শাসনে সাপুড়ের সরল স্বীকারোক্তি।
যেসব সকাল আক্ষেপভারি
নিঃশব্দ আহামদ
কপাট খোলার কড়া নেড়ে নেড়ে আড়ষ্ট আমি বসে থাকি, তালাবদ্ধ সব ঘরে রেখে গেছে ঘুম-আমি শুধু আওড়ায়, আয় ঘুম, গভীর কোনো ঘুম-সাগ্রহে কোনো ঘরে খুলে গেলে কপাট, আঁকড়ে থাকি চৌকাঠ-
মানুষের চোখে অপেক্ষা খুঁজে, কেঁদেছি, অনেক অনেক কান্নার ভেতর মনে হতো যেনো মরে যাচ্ছি, তবু এতোটুকু অপেক্ষা, আমাকে ছুঁয়ে গেলে- সব ঘরে আলোর উল্লাস দ্যাখি, যেনো নেভানো হয়নি কোনো বাতি এতোটারাত,
বেঁচে আছি রোজদিন, এতোটা অপেক্ষার ভেতর।
ঠিক যদি কোনো সন্ধ্যায়, পেয়ে বসে ভয়- আমি আর নানাবিধ ভাবনার ভেতর কাঁদছিনা, না কোনো ঘর ফেরা-আকস্মিক ঝড় কবলের মতো বুকের ভেতর গোঙানি রেখে লুটে যাচ্ছে দেহ, অতলে- নিমজ্জিত অন্ধকারে আমার অনন্ত ফ্যাকাশে চোখ।
আর কোনো অপেক্ষা নেই, দীর্ঘ ঘুমের ভেতর খবরদারি রেখে স্থির এইসব রাত-সকালের কোনো মাঠে হাঁটবেনা আর নিঃশব্দের কোনো ত্রস্ত পা।