চিরস্মরণীয়, বিস্ময়কর সাহিত্য প্রতিভা
হেলেন কেলার
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
‘আমার দৃষ্টিদ্বয় তারা সরিয়ে নিল
যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল
কিন্তু আমি স্মরণ করি মিল্টনের স্বর্গখনি,
আমার শ্রবণদ্বয় তারা সরিয়ে নিল
যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল
বিটোফেন এসে মুছালো আমার চোখের পানি।
-হেলেন কেলার
(জন্ম: ২৭ জুন ১৮৮০ ইং- মৃত্যু: ১ জুলাই ১৯৬৮ ইং)
শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনেকেই প্রতিনিয়ত হতাশায় ভোগে। কেউ কেউ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে জীবনের অবসান ঘটাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর প্রতিবন্ধী হলে তো কোন কথাই নেই। সমাজের মানুষের করুণা নিয়েই প্রতিবন্ধীদের সারাটি জীবন বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিবন্ধীদের বিধাতার চরম অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। তবে এই ধারণাটি মিথ্যা প্রমাণ করতে কিছু ব্যতিক্রম নজির থাকে, যা আমাদের কাছে হয়ে উঠে অবাক বিস্ময়। পৃথিবীর বুকে এমন কিছু বিস্ময়কর প্রতিভার আবির্ভাব ঘটে, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অনেকেই নিজ প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর বুকে এমন কিছু অনন্য কীর্তি রেখে রাখেন, যা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরও চিন্তার বাইরে। এমনি এক অবাক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম হেলেন কেলার। তিনি ছিলেন একজন দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণশক্তিহীন প্রতিবন্ধী। তবে নিজের শারীরিক অক্ষমতার জন্য তিনি দমে যাননি। বরং নিজের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই মহীয়সী নারী একাধারে ছিলেন একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক, মানবতাবাদী সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রিয় বক্তা। শারীরিক সব অক্ষমতাকে প্রচন্ড মানসিক শক্তি দিয়ে কিভাবে জয় করতে হয়, তিনি সেটা শিখিয়ে গেছেন। পৃথিবীর সকল প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসের নাম হেলেন কেলার। সারা বিশ্ব জুড়ে আছে তার বিরল প্রতিভার খ্যাতি। অনন্য সাহিত্য প্রতিভা দিয়ে সাহিত্যিক হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন। সাহিত্যিক হেলেন কেলারের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২ টি। এর মধ্যে প্রধান গ্রন্থ গুলো হচ্ছে ‘দি স্টোরি অফ মাই লাইফ, লেট আস হ্যাভ ফেইথ, দি ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, ওপেন ডোর ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিশপ্ত বিড়ম্বনা জীবনের বিষাদের ওপর একটি চলচ্চিত্র (ডেলিভারেন্ট-১৯১৯) নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রে তার নিজের ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন। অসম্ভবকে সম্ভব করা হেলেন কেলার বলতেন, ‘অন্ধত্ব নয়, অজ্ঞতা ও অনুভূতিহীনতাই দুনিয়ার একমাত্র দুর্ভেদ্য অন্ধকার।
১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা তাসকাম্বিয়া গ্রামে হেলেন কেলার জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট অ্যাডামস। পিতা আর্থার কেলার ছিলেন সামরিক বিভাগের একজন অফিসার। পিতামাতার খুব আদরের সন্তান ছিলেন হেলেন। শৈশবে তিনি ছিলেন ভীষণ চঞ্চল প্রকৃতির কিন্তু তার এই চঞ্চলতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র ১৯ মাস বয়সেই হেলেনের জীবনে একটি মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে। গোসল করানোর সময় মায়ের কোল থেকে হঠাৎ পড়ে যান শিশু হেলেন। সেই আঘাতে সাময়িক জ্ঞান হারানোর পর তা ফিরে এলেও তার মা লক্ষ্য করলেন তার আদরের সন্তানের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি একেবারেই লোপ পেয়েছে। নিরুপায় পিতামাতা তখন শরণাপন্ন হলেন ডাক্তারের নিকট। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানালেন তার এই শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ হলো মস্তিষ্ক ও পাকস্থলীর আঘাত। মা-বাবা প্রাণপ্রিয় কন্যার জীবনের আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও একেবারে ভেঙে পড়েননি। হেলেনের চিকিৎসা করা শুরু করেন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ছয় বছর বয়সে হেলেনকে নিয়ে পিতা আর্থার যান ওয়াশিংটনের আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে। ইনিই হলেন যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রদূত টেলিফোন আবিষ্কারক বেল। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেল জানালেন হেলেন আর কোনোদিন চোখে দেখতে এবং কানে শুনতে পারবে না। তবে গ্রাহাম বেল হেলেনের তীক্ষè বুদ্ধিমত্তা দেখে আর্থারকে হেলেনের জন্য যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিলেন। যাতে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি একটি সুন্দর জীবন ফিরে পেতে পারে হেলেন।
বেলের পরামর্শ অনুযায়ী বোস্টনের পার্কিনস ইন্সটিটিউশনে হেলেনকে ভর্তি করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ ছিল অন্ধদের শিক্ষাদান করা। এর প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার হো হেলেনের শিক্ষা গ্রহণের ভার নিজ হাতে তুলে নেন। তিনি হেলেনকে স্নেহ দিয়ে লেখাপড়া শেখাতে শুরু করেন। কিন্তু অকস্মাৎ ডাক্তার হো মারা গেলে হেলেনের পিতামাতা পুনরায় তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন। তখন পার্কিনস ইন্সটিটিউশনের নতুন ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব নেন মাইকেল এ্যাগানোস। তিনি হেলেনের সমস্ত কথা শুনলেন এবং অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড নামের এক গৃহশিক্ষিকার হাতে হেলেনের জীবনকে আলোকিত করার দায়িত্ব দেন। অ্যানির কাছে শিশু হেলেন হাতে স্পর্শের মাধ্যমে জগত চিনতে লাগলেন। আস্তে আস্তে হেলেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সব শিখে নিতে থাকেন। লুই ব্রেইল আবিষ্কৃত ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে হেলেন লেখাপড়া শিখতে শুরু করেন। কয়েক বছরেই হেলেন ইংরেজি, ল্যাটিন, গ্রীক, ফরাসি এবং জার্মান ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সে ব্রেইল টাইপ রাইটারে লিখতে শেখে। হেলেন এগারো বছর বয়সে এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কথা বলার চর্চা করতে থাকে। ধীরে ধীরে চিকিৎসার মাধ্যমে তার বাকশক্তি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ১৯০০ সালে হেলেন রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে বিশ্বখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিশ বছর বয়সে হেলেন সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাসে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। কলেজে পড়াকালীন তিনি লিখেন তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘ঙঢ়ঃরসরংস’। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি লিখেন তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'ঞযব ংঃড়ৎু ড়ভ সু ষরভব'ষরভব'। যেখানে তিনি তার জীবনের বিপর্যয়, লড়াই, অ্যানির কাছ থেকে শিক্ষালাভ, তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসার জীবনচিত্র তুলে ধরেন তার অপূর্ব লেখনীতে। আর এই রচনার মধ্য দিয়ে তিনি ব্যাপক খ্যাতিও অর্জন করেন। লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে হেলেনের নাম। বলতে গেলে, এই গ্রন্থ রচনার পরেই তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখিকা হয়ে উঠেন। তারপর হেলেনকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন ছিল শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাবার। হেলেন একের পর এক গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার প্রতিটি গ্রন্থ পাঠকের মাঝে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে হেলেন সাংবাদিক পেশায় তার কর্মজীবন শুরু করেন। ভালোই চলছিল সবকিছু কিন্তু রাজনৈতিক প্ররোচনায় হেলেনের লেখার নামে বিভিন্ন সমালোচনা ও কুৎসা রটতে থাকে। তারপর হেলেন ঠিক করলেন সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দেবেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবনধারণ করবেন। তার বক্তৃতায় সূক্ষ্মতা ও চিন্তার গভীরতা দেখে মুগ্ধ হন শ্রোতারা। কিছুদিনের মধ্যেই হেলেনের অসংখ্য অনুরাগী ভক্ত তৈরি হয়। সেই সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তা মার্ক টোয়েনের সহযোগিতা পান। একই মঞ্চে টোয়েনের পাশাপাশি হেলেনও বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান। ক্রমেই হেলেন একজন জনপ্রিয় বক্তা হয়ে উঠেন। বিভিন্ন দেশ হতে বক্তব্য প্রদানের জন্য হেলেনের আমন্ত্রণ আসতে থাকে। তিনি যখন যে দেশ গিয়েছেন, সে দেশের মানুষই তাকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত করেছে। এভাবেই দেশ-বিদেশে বাড়তে থাকে তার অনেক অনুরাগী ভক্তের সংখ্যা। এই বিস্ময়কর নারীর প্রতিভা দেখে রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই মুগ্ধ হতেন। তিনি প্রচন্ড রাজনীতি সচেতন ছিলেন। নারীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। সবাইকে লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাতেন। সর্বোপরি, নিজের কঠিন জীবন সংগ্রামের গল্প বলে সাধারণ মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রাণিত জোগাতেন।
হেলেন দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সঙ্গীত উপভোগ করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বেশি সঙ্গীত উপভোগ করতেন। বাদ্যযন্ত্রের ওপর হাত রেখেই বলতে পারতেন কী ধরনের সুর বাজছে। গায়ক-গায়িকার কণ্ঠে হাত দিয়ে অনায়াসে বলতে পারতেন কী সঙ্গীত গাইছে। তার এমনই আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, বহুদিনের পরিচিত মানুষের সঙ্গে করমর্দন করে বলে দিতে পারতেন তার পরিচয়। দৃষ্টিহীন হয়েও তিনি নৌকা চালাতে, নদীতে সাঁতার কাটতে পারতেন, খেলতে পারতেন দাবা ও তাস। এমনকি তিনি সেলাই পর্যন্ত করতে পারতেন। হেলেন সমাজসেবার ব্রত নিয়ে তার মতো আরও যারা বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন, তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে গেছেন। ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনও বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হেলেন এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিয়ে যা অর্থ পাওয়া যেত, তা দিয়ে বিভিন্ন দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি অন্ধদের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন হেলেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য পেয়ে হাজার হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ শিক্ষালাভ করেছে। নিজেকে সফলভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হেলেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও লেখালেখি করেছেন। তিনি ছিলেন আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থক। ১৯০৯ সালে তিনি এই পার্টিতে যোগ দেন। তিনি আয়ের সুষম বণ্টন দেখতে চাইতেন। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অসমতার শেষ দেখাই ছিল তার ইচ্ছা। তার বই ‘আউট অব দ্য ডার্ক’-এ এই ইচ্ছার কথা লিখে গেছেন তিনি। প্রতিটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ইউজিন ভি ডেবসের সমর্থন পেয়েছিলেন। ১৯১২ সালে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ডে যোগ দেন। তিনি ছিলেন একজন প্যাসিফিস্ট এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জড়িত থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তবে ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন।
হেলেন কেলারের সাথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুসম্পর্ক ছিল। রবীন্দ্রনাথ হেলেনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। নোবেল প্রাপ্তির পর আমেরিকার এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হেলান কেলারের সাথে সেখানেই তার পরিচয়। হেলেন রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার আমন্ত্রণ পান। তবে রবীন্ত্রনাথ ঠাকুরের জীবিত থাকা অবস্থায় হেলেন শান্তিনিকেতনে আসতে পারেননি। ১৯৫৫ সালে ভারতে আসেন হেলেন। সেই সময়েই দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় হেলেনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৫০ সালে হেলেনের পঞ্চাশ বছরের কর্মময় জীবনকে সম্মান জানাতে প্যারিসে এক বিরাট সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। তখন তার বয়স সত্তর বছর। ১৯৫৯ সালে হেলেন জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই হেলেন কেলার চলে যান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। তবে তিনি পৃথিবীর মানুষের কাছে আজও বিস্ময়কর প্রতিভা। হেলেন কেলার এমনই এক নাম যা অন্ধ, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে এক আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যুগে যুগে এই মহীয়সী নারীর রেখে যাওয়া দৃষ্টান্তই হোক সকলের পথচলার মন্ত্র। প্রচ- ইচ্ছেশক্তি মানুষকে যে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তার এক জ্বলন্ত উদারহণ হেলেন কেলার। তিনি কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ভরে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক, ত্রৈমাসিক আমাদের গল্পকথা।
চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা।