অদ্ভুত শূণ্য
শারমিন আক্তার
‘তুমি’ এবং ‘শূন্য’ কে গুন দিলে
‘শূণ্য’ই হয়।
কেমন এক অথর্ব সম্পর্ক ঘিরে রয়েছে আমাদের।
যোগ-বিয়োগ করে দেখি আমিহীন তুমি বেশ নির্বিকার, পরিপাটি।
শেষমেশ ছুটে যাই পেছন-পেছন
ভীষণ গাঢ় এক গুমোট বাঁধা অন্ধকারে-
হাতড়ে ফিরে কুড়িয়ে আনা বিরহে শুধু কান্নার রং,
মিলে মিশে বেদনা-নীল এক মহাশূন্য যেন।
এখন ঠিক ঠিক বুঝতে পাই-
আমি কোন স্বাভাবিক ‘শূণ্য’ নই, ‘তুমি’ পরিত্যাক্ত এক অদ্ভুত ‘শূণ্য’!!
অনুভব করি
রেজাউল রেজা
তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করি চলতে পথে।
অনুভব করি
অনুভব করি
একলা চলি কলেজ রোডে
একলা বসি মাঠে !
খুব করে অনুভব করি তোমার অনুপস্থিতি।
অনুভব করি
অনুভব করি...
তুমি বিহনে হাতরে মরি!
মুনাফা সমেত অবহেলা
মাহদী হাসান
আমরা চলেছি কালের খেয়ায় শুধুই দু’চোখ বুঁজে
সময়ের চেয়ে বড় শিক্ষক, পাবো না কোথাও খুঁজে।
নিয়তির স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছি, আমাদের পথচলা
জিকির ফিকির হারিয়ে ফেলেছি, হারাইনি ছলা কলা।
হোঁচট খেয়ে শিখেছি আমরা, শিখিনি তো কভু দেখে
ভবিষ্যতের কেতন উড়িয়ে, ছুটিতেছি রঙ মেখে।
স্রোতের মতো সময় গিয়াছে, ফিরিয়া আসেনি কভু
অতীতের স্মৃতি চির ভাস্বর, চোখ খোলে নাই তবু!
আকাশ সমান স্বপ্ন দেখেছি— চলি নাই সেই পথে
সুযোগ পেয়েও উঠা হয় নাই, যুগের সত্য রথে।
ঘুমে ঢুলুঢুলু আমাদের চোখ, হয়নি তো চেয়ে দেখা
তাইতো ফোটেনি ভোরের আকাশে আলোক দীপ্ত রেখা।
অবহেলা করে কাটিয়ে দিয়াছি কত ক্ষণ কত বেলা,
ফিরে পাবো জানি মুনাফা সমেত, প্রতিদানে অবহেলা।
কাল হয়েছে আমার
শরীফ সাথী
সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে, আর আসবেনা।
আমাকে নাকি তার, এখন আর ভালোলাগে না।
আমার হাসি আমার চাহনি আমার কণ্ঠ,
তাকে আর তৃপ্তিভেজা সুখে পরিণত করতে পারেনা।
আসলে আমি আজও বেকারই রয়ে গেলাম।
সে এখন খুব সুখী। পছন্দ মত জব পেয়েছে।
দীর্ঘদিনের সোনালী স্বপ্ন দেখা আজ কাল হয়েছে আমার।
প্রিয়জন
রামপ্রসাদ সূত্রধর
কেহ চায় কেহ হয় না আমারে
ভালেবাসি আমি কাহারে।
গেল জনম বৃথা সংসার তথা
অবহেলে বৃথা।
হৃদয়ে প্রেমের মন্দির দেবতা কই?
প্রাণে -মনে কাহারে লই
সুরে-সুরে গানে-গানে
প্রাণে-প্রাণে ছন্দে-ছন্দে
প্রেম রোমাঞ্চে জাগো মন তার উরসে
ভুবনে তুমি মরণে তুমি
বাস করো গো আমাতে
তুমি আমার প্রিয়জন।
দু’টো ফুল
খায়রুল আলম রাজু
এক খন্ড সবুজ ভূমি- এ যেনো পুষ্প কানন;
তেরো শত নদী এর প্রাণ, লালন করা মধু!
তুমি আর আমি সেই কাননের ফুল-
দু’টো গোলাপের মতো, সুবাসিত...
যদিওবা আমরা মানুষ ফুল নয়,
তবুও জীবন ফুলের মতোই নিষ্পাপ-
আমরা ফুল, পুরো পৃথিবী তার শাখা-প্রশাখা...
ঝরণা ধারা সুবাসিত ঘ্রাণ, শীতল বায়ু এর শেখড়...
তাই তো বলি, ফুলকে ভালোবেসো;
কখনো ছিঁড়ো না, কেননা ফুল ফুলের প্রেমিক!
যেমন তুমি আর, তেমনি ফুলও ফুল...
আমি
সোহেল রানা
আমি চাই না কেউ আমাকে ভালোবাসুক
ভালোবাসা পাওয়ার আশাও নাই, যোগ্যতাও নাই।
আমি চাই না কেউ আমাকে দাক্ষিণ্য করুক
কিংবা করুণার হাত প্রসারিত করুক।
আমি চাই সবাই ভালো থাকুক...
আমার চাওয়া না চাওয়ায় অবশ্য কারো কিছু এসে যায় না
কারোর চাওয়ায় কারো পাওয়া হয় না।
আমি চাই নিজের মতো থাকতে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে-
কবিতা সাজাতে, গল্প করতে, হাসতে, কাঁদতে
আমি চাই কবিতার সাথে সংসার করতে
আর পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে।
আমি চাই না কেউ আমাকে ভালোবাসুক।
আমি চাই প্রকৃতির খোলা আকাশের নিচে
অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর পূর্ণিমার আলোর মাঝে
নিজেকে বিলিয়ে দিতে।
আমি চাই না কেউ আমার প্রতীক্ষায় থাকুক
ফুল কিংবা কাঁটা বিছিয়ে রাখুক।
আমি চাই না কেউ কেন আমার জন্যে আদাজল খেয়ে নামুক
আমি তো কারো কাছে তৃষ্ণার জল চাই না।
ওপার
দিপংকর দাশ
ঘাটে নৌকো নেই
যেতে হবে ওপারে
কেউ একজন ডেকে বলছে
‘ও বাবু মশাই, এনেছো কি কড়ি?
নইলে যে আসবে না ঐ তরী।’
পকেটে হাত দেই
কিন্তু তার তলা ছেঁড়া
ভিতর পকেটেও খুঁজলাম
নেই, কোনো কড়ি নেই।
মন খারাপ,
ঘাট ছেড়ে চলে আসার চেষ্টা।
পিছন থেকে আবার বলছে,
‘ও বাবু মশাই, এ ঘাটে যে আসে
সাধ্য নেই তার ফিরতি চলে যায়।
ওপারে যেতেই হবে তোমায়
নৌকোয় কিংবা সাঁতরে।’
মাঠের কৃষক
শাহিন আলম
তোমাকে সৃষ্টির পর ঈশ্বর বললেন-
তুমি লোভনীয়
আমাতে তিনি জাগালেন তোমাকে ছুঁয়ে দেয়ার লোভ
আমি লোভাতুর হয়ে জন্মালাম।
আমাদের সৃষ্টির পর ঈশ্বর বললেন
প্রত্যেক প্রাণীকে তিনি পাঠিয়েছেন জোড়ায় জোড়ায়
আমি খঁড়কুটো এনে বাসা বাঁধলাম
সামনের ফাল্গুনে তুমি আসবে ভেবে
শীতের রাতগুলো কাটালাম একলা একা।
তোমাকে পাঠানোর পর ঈশ্বর বললেন-
তোমার ভিতরে তিনি লুকিয়ে রেখেছেন শান্তি।
আমি পৃথিবীর তাবৎ শাস্ত্র ছুঁড়ে ফেলে
সকল সাধনার মন্ত্র ভুলে গিয়ে
ফিরে এলাম তোমার কাছে।
আমাকে ডেকে ঈশ্বর জানালেন
তোমাতে আমি ইচ্ছামাফিক করতে পারি চাষ
আমি মাঠের কৃষক হয়ে
কাদা জলের পরশ মেখে কাটিয়ে দিলাম জীবন।
কলোসিয়ামের বিষ
শম্পা মনিমা
স্বচোক্ষে দেখলাম,
প্রতিহিংসা মধ্যে
মৃত্যু নিয়ে সব
গোল হয় গাঁথছে
বিষের জয়জয়কার।
খারাপ কে?
তারারা খারাপ হয়না,
শত্রুকে সবাই তাড়ায়
ওটাই আমাকে বন্ধু ডাকে।
খোঁজ নিয়ে এলাম
কোথায় রয়েছে টাটকা বিষ
জাতিস্মর নই
বিশ্বাস ভাঙার মৃত্যুদের বুঝতে পারিনি তাই,
বিষের স্বাদ কেমন?
রুটি ছুড়ে দিয়েছে তিতুস
নখ, দাঁত দিয়ে কু-লী পাকিয়ে
সন্ধ্যে হওয়া গাছটাকে
খাচ্ছে শিরা-উপশিরার সাপ
বয়সের গাছ, পাথর- থাকি এদের সঙ্গে আজ।
আগুনে পোড়ে না কলোসিয়াম
পোড়ায় প্রাণীজগৎ,
পোড়ে শান্তি,
পোড়ে জ্বালা,
শেষ দেখে এলাম হেসে বলল শেষ কথা।
আমি খুঁজছি কার হাত
নূরনবী সোহাগ
শরীরমুখো জ্বর
ভাসিয়ে নিলো আঙ্গুলের আদর
বিশ্রী উত্তাপে
ঢাকা পড়ছে বোধ
আঙ্গুল বাড়াই
আনুমানিক কপাল বরাবর
তোমার দেয়া উষ্ণতার
তলানি যদি পাই
এইভাবে দিনরাত একাকার
কেউ কি বুঝতে পারছো!
নোনা উত্তাপে ডুবে ডুবে
আমি খুঁজছি কার হাত
অনন্তের সন্ধান
মোস্তফা কামাল
নিরন্তর ছুটে চলেছি-
গোপন আঁধার পথের সুলুক সন্ধানে
প্রথা বিরোধী নবজীবনের আহ্বানে
লক্ষহীন সুলক্ষণ সময়ের পদচিহ্ন ধরে,
দুরন্ত দুর্গম বন্ধুর আঁকা বাঁকা পথে।
রণক্লান্ত পথিক আমি
উদ্দেশ্যহীন সুতাকাটা ঘুড়ির মতো
অন্ধ স্রোতের টানে অবিরাম চলছি
জীবন শুরুর তেজোদিপ্ত মনে
জমেছে ক্লান্তি, ঘুণে ধরা ইচ্ছেগুলো
জমেছে না পাবার অপূর্ণতা।
নিরন্তর ছুটে চলেছি-
সহজ স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাকুলতায়
কলঙ্কের কালিমা উপেক্ষা করে
স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া অবুজ স্পর্শে
চরম স্পর্ধার চিত্রকল্প হাতে নিয়ে
পুরানো শাস্ত্রের জমাট বাঁধা গ্রানাইট
ভেঙ্গে সংস্কার আচারের বিপরীতে
বিশুদ্ধ মানবিক গুণে ঋদ্ধ হয়ে
মুক্তবুদ্ধির তুখোড় পুনরুত্থান সন্ধানে।
তার পরেও চলছি-
হাজার বছরের ইতিহাস হয়ে
হারানোর কিছু নেই বলে।
লক্ষ নেই স্বপ্ন নেই তবুও চলা
চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে
সামনে এগিয়ে চলা
পিছনে রেখে পদচিহ্নের বক্ররেখা।