আবৃত্তি



আবৃত্তি
সাহিদা সাম্য লীনা

 এই জানিস বীথি, শিহাব আমাকে খুব ভালবাসে। ওর জীবনের চেয়েও বেশী। কথাগুলো বলছিল আবৃত্তি। ওর মুখে শিহাবের এতো প্রশংসা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ওর বলার ধরনে বোঝা যাচ্ছিল শিহাবকে আবৃত্তিও  ভালবাসে। কথায় কথায় কেবল শিহাবের কথা আবৃত্তির মুখে ইদানিং।
 দুজন দুজনকে যে বড় বেশী ভালবাসে তা নিশ্চিত।  দুজনেই কøাস শেষে চোখে চোখে কথা বলে। এরপর দূরে কোথাও পার্কে চলে যায়। হাতে হাত ধরে দুজনে হাঁটে ,কথা বলে। কত কথা। এতো কথা, কোথায় পায় কে জানে। শিহাব আবৃত্তিকে বলে অনেকের মাঝে তুমি একজনা, এতো হাজারের মাঝে আমি তোমাকে পেয়েছি। তোমার মতো কেউকে পাব আগে ভাবিনি। যেদিন তোমাকে ইউনিভার্সিটির বারান্দায় দেখেছি , আমার মধ্যে যে কী হচ্ছিল তা বোঝাতে পারবনা। তোমার হাসি, তোমার কথা,তোমার চলন, বলন দু’মাস দেখেছি। যত দেখছি ততই, তোমার প্রতি আমার ভাল লাগা তৈরি হয়েছে। ভাবিনি তোমাকে পাব! বল,কখনো ছেড়ে যাবেনা!
আবৃত্তি  শিহাবের কথা শুনে হাসে আর মুখ লুকায় শিহাবের বুকে। বলে দূর কাছে এসেছি কি ছেড়ে যাবার জন্য! আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবনা।   শিহাব আবৃত্তি কথা দেয় দুজন দুজনকে।তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবনা শিহাব। তোমাকে ভোলা,আর  ছেড়ে যাবার শক্তি আমার নেই। জানিনা, সামনে আমাদের জন্য কী প্রতিক্ষা করছে। দুজন দুজনকে পাব তো!  শিহাব আবৃত্তির মুখে হাত চেপে ধরে। দূর, কী বলছ!  আমাদের ভালবাসা সত্য, আমরাএকে ওপরকে ভালবাসি।এটাই সত্য। আর কী লাগে! সব বাধা আমরা পেরুতে পারবো। তুমি যাই বল আমি তোমাকে বিহনে থাকব না। তোমার পিছুও ছাড়বনা। আবৃত্তি শিহাবের কথা শুনে কেঁদে ফেলে বেশ আবেগে।  শিহাব আবৃত্তির চোখ মুছে বলে আবৃত্তি  আমি  আজ যেমন কালও তেমনই, তোমারই থাকবো।
আট মাস কেটে গেল শিহাব আবৃত্তির সম্পর্কের। প্রতিদিন নিয়মিত ওদের দেখা, কথা হয়। বাসায় গেলেও একে ওপরের ছবি ম্যাসেঞ্জারে আদান প্রদান করে। যেদিন দেখা হয়, আবৃত্তি মাঝে মাঝে দেরী করে এলেও শিহাব আবৃত্তির অপেক্ষায় শিউলী গাছটার কোল ঘেঁষে বসে থাকে। সিগারেট চলে তখন ক্ষনে ক্ষনে। আবৃত্তি এলে সিগারেট ফেলে দিয়ে ওর বুকে মাথা লুকায়। আবৃত্তি ভালো গান করে। শিহাবের মন খারাপ হলেই গান গেয়ে শিহাবকে ঠিক করে ফেলে। মোবাইল রিং টোনটাও আবৃত্তির গানের কন্ঠে শিহাব করে রাখছে।  
আবৃত্তি স্কুল মাষ্টারের মেয়ে। ওর পড়াশোনা চলে  অনেকটা ওর নিজের টাকায়। আবৃত্তির বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে প্রথম প্রথম টাকা পাঠালে, আবৃত্তি চিটাগাং থিতু হলে,সবকিছু চেনাজানা হলে, বন্ধুবান্ধব জুটলে ধীরে ধীরে ওদের মাধ্যমে তিনটা টিউশানি জোগাড় করে। গ্রামে বাবাকে নিষেধ করে টাকা পাঠাতে। বাবা শুনেনা ।  দুৃএকবার সামান্য হলেও পাঠায় মেয়ে পারছে কি চলতে’ এই ভেবে।
শিহাবের সাথে সম্পর্কের শুরুতে জানত না আবৃত্তি যে টিউশানি করে। একদিন ওর আসতে দেরী দেখে শিহাব জানতে চায়,আবৃত্তি তখন জানায় ,ওকে তিনটা টিউশানি করতে হয়। তখনি শিহাব জানতে পারে ওর পুরো ফ্যামিলি প্রোফাইল। শিহাব জানার পর আবৃত্তির পড়াশোনার খরচটা নিতে  চাইলে আবৃত্তি রাজি হয়না।বলে দেখ,এতে নিজেকে আমার ছোট মনে হবে। আমি একজন শিক্ষকের মেয়ে। আমার পরিবারকে আমি ছোট করবো না। দেখ আমি ঠিকই পারবো। শিহাব আর কিছু বলতে পারেনি সেদিন।
আজকে, টিউশানির পর আবৃত্তি শিহাবের সাথে পুরো সময় কাটায়। রাত ন’টার মধ্যে রেস্তোরায় ডিনার সেরে শিহাব আবৃত্তিকে ওর হোষ্টেলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসে।
শিহাবের রুমে আসে ওর মা। খেতে ডাকে। মা আমি খাবনা। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। প্রায়দিন ছেলের এমন কথা শুনে আজ একটু রাগ দেখায় শিহাবের মা। তোর কী হয়েছে বলতো?  তুই ইদানীং বাইরে খাস? কেন? তোর কী হয়েছে?
শিহাব কিছু বলেনা। ওর মা বলে,তোর বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে। আগামী পরশু ওদের বাসায় যাব আমরা। তুই ওদিন বাইরে যাবিনা।
মায়ের কথা শুনে শিহাব অবাক হয়।বাংলা ছবির কাহিনী মনে হলো শুনে। শিহাব বলে মা তুমি কি  ফান করছো। আচ্ছা চল খাব। মা বলে না আমি সিরিয়াস। আমরা তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি। এতে ফান করার কি আছে? শিহাবএবার মায়ের কথায় একটু ধাক্কা খায়। মা-বাবা কি ওর একটু পরিবর্তনে সন্দেহ করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে  না তো! মা আবারো ওয়ার্নিং দিয়ে চলে যায়।
শিহাব শিল্পপতি বাবার দু ছেলের একজন। বড়ছেলে। বাবার ব্যবসার কিছুটা ইতিমধ্যে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। পড়াশোনাটা শেষে পুরোপুরি বাবাকে  সাহায্য করা ওর ইচ্ছা। কিন্তু হুট করে বিয়ে এটাতো শিহাব মানবেনা। তাছাড়া ও এখন আবৃত্তির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আবৃত্তি যখন চাইবে ওরা বিয়ে করবে।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে শিহাবের। ফ্রেশ হয়ে  টেবিলে আয়। তোর বাবা ডাকছে। শিহাব ভাবনায় পড়ে। কী যে, মুশকিল! কী শুরু করলো ওরা না জানি।
আধ ঘন্টা পর শিহাব আসে টেবিলে। বাবার সাথে পাঁচ দিন পর দেখা নাস্তার টেবিলে। বাবা সকাল ,সকাল চলে যায় অফিসে নানা কাজে। কখনো ঘুমে থাকে, পরে যায়। শিহাব যায় আগে ,কখনো বাবা আগে যায়। শিহাবের যেদিন ক্লাসে যাবে সেদিন মা’ই উঠিয়ে দেয়। ফাঁকে ফাঁকে অফিস যায় শিহাব।
বাবার মুখোমুখি হতে শিহাবের কেমন জানি লাগছে। বিয়ে ঠিক করার কথা শুনে মনে হয়। শিহবের বাবা বলে কী বাবা কেমন চলছে দিনকাল? তোমার মার কাছে শুনলাম তুমি বদলে গেছ আজকাল, যাক এখন তোমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। তোমার বিয়ে দেব ভাবছি। মেয়েটা আমাদের এক পার্টনারের। দেখতে ভাল,সুন্দরী। তোমার ভালো লাগবে।
বাবা আমি বিয়ে এখন করবো না। আগে পড়াশোনা।তারপর  আমি আরো স্টাবলিশড হবো। তারপর হবে এসব। ছেলের কথা শুনে বাবা মা বিস্মিত! বলে আরে একবার মেয়ে দেখবি, তারপর না হয়। শিহাব বলে না বাবা।এটা হয়না।শিহাবের  বাবা একটু কঠোর হয়েই বলে,দেখো আমি কথা দিয়েছি কাল তাদের বাসায় যাবো। মেয়ের সাথেও আমার কথা হয়েছে। আমরা না গেলে তারা আমাদের ভালো বলবেনা। বলবে মিথ্যুক, প্রতারক। বাবা চলে যায়। শিহাব মাকে বলে। কাজ হয়না।
শিহাব কিছু ভেবে পায়না। আবৃত্তিকে ও কথা দিয়েছে। যেখানে মেয়েদের বিয়ে আগে হয় সেখানে ও ছেলে হয়ে , ওর বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগছে ওর বাবা-মা। আর একটা বছর পরেই ওর পড়া শেষ ,মোটামুটি মাষ্টার্সটা শেষ করে ব্যবসাতে লেগে যাবে পুরোপুরি এই ভাবনাই ছিল শিহাবের।  তারপর আবৃত্তিকে নিয়ে সংসার পাতা। কত স্বপ্ন! কেমন ওলট-পালট লাগছে শিহাবের।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। শিহাবের দেখা নেই। আবৃত্তি অস্থির হয়ে উঠে। এমন তো কখনো হয়নি। শিহাব কাজ থাকলে বলে দেয়। আজ দেখা হবেনা বা কখন হবে। একটা কিছু তো জানায়।  আবৃত্তি টিউশানি শেষ করে ফোন দেয় বাস স্টপেজে এক পাশে গিয়ে। শিহাব ফোন ধরেনা। কয়েকবার ট্রাই করে আবৃত্তি। ধরেনা। আবৃত্তি মন খারাপ করে হোষ্টেলে ফিরে। রুমে ঢুকতেই রুমমেট  বীথি বলে কী রে আবৃত্তি আজ জলদি ফিরলি? আর মন খারাপ কেন? আবৃত্তি বলে, বড় লোকের ছেলেরা সব খারাপ হয় তাই না রে বীথি? বীথি বলে কেন রে শিহাবের সাথে কিছু হয়েছে তোর? আবৃত্তি বলে না, এখনো কিছু হয়নি।  হবে মনে হয়। বীথি বলে কি বলিস! আরে ধূর! কিচ্ছু হবেনা। তোদের ভালবাসা তো গভীর বলেছিলি না? আবৃত্তি নিরুত্তর। আজ বোধহয় শিহাবের কোন সমস্যা থাকতে পারে। দেখবি ও তোকে ফোন দিবে। তুই শান্ত থাক।
  রাত বাড়ে, আবৃত্তির ঘুম আসেনা। শিহাবের ছবিটা হাতে নিয়ে চেয়ে থাকে। গরীবের মেয়ে হয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে সে! শিহাব ওকে পরিবর্তন করেছে ভালবাসার জগতে ঢুকিয়ে। এখন সেখান থেকে শিহাব ছাড়া বের হওয়া সম্ভব না। আবৃত্তির মন প্রাণ সবই এখন শিহাবের। 
মাথার কাছে ফোনটা সুরে সুরে বাজে। শিহাবের পছন্দের টোন।আবৃত্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে শিহাব। রিসিভ করেই পর পর প্রশ্ন। শিহাব বলে সরি, আবৃত্তি, আজ আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি। মা একটু অসুস্থ ছিল। মায়ের হার্টের  সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তাছাড়া... বলে থেমে যায় শিহাব।
আবৃত্তি এতক্ষন শুনলো মনোযোগে সব।ওর মায়ের সুস্থতাও কামনা করলো। আবৃত্তি বলে, কি যেন বলতে চাইলে,, .? শিহাব  বলে না থাক কাল এসে জানাবো সব। তোমার সাথে অনেক কথা।
আবৃত্তির ঘুম আসেনা  সারা রাত। কেমন যেন ভয় হলো শিহাবের কথা শুনে। রাতটা কোন মতে কাটে আবৃত্তির। মুখটাও ধুতে মন চাচ্ছেনা ওর।একরাতেই চোখ ফুলে কি অবস্থা!
 বীথি দেখে বলে হায়, আবৃত্তি এমন হলে চলে? জীবনে কত সময়, এর চেয়েও খারাপ যাবে। এমন তো হবে, হতেই পারে। কোন সমস্যা গুরুত্ব দিতে নেই। দেখ, আমি কত প্রেম করি। ওরা আসে আর যায়,যাবে। আমরাও মেয়েরা আসবো,যাবো। তুই শিহাবকে বুজতে দিস না তোর মন খারাপ অবস্থা। ওর কাছে ছোট হবিনা। দেখিয়ে দে আর একটা প্রেম করে। আবৃত্তি কি মনে করে হাসলো। বলে, বীথি দেখ তোর মতো সবাই না রে।সবাই যদি এমন হতো! ভালই তো ছিলাম আমি! কেন যে শিহাব এলো জীবনে। জীবনটা নষ্ট করতে একটা ছেলেই বুঝি যথেষ্ট! আমি শিক্ষক বাবার সন্তান। মফস্বলে ছিলাম। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিলাম। কেন যে এসব করতে গেলাম! বলে কাঁদলো।
ভার্সিটির ৩য় তলার বারান্দা থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখে শিহাব দাঁড়িয়ে ঝাউ গাছটার কাছে। আবৃত্তি অস্থির হয়ে উঠে শিহাবের কাছে যেতে। এ সময় শিহাবই ফোন দেয়। আবৃত্তি ফোন রিসিভ করেই হাঁটা দেয়। শিহাব বলে ক্লাস শেষ হলে আস। ফোন রাখতেই এক মিনিটে হাজির আবৃত্তি।  শিহাব দেখে আবৃত্তির চেহারার হাল! বুজতে পারে ও কি টনেশনে আছে। আবৃত্তিও দেখে শিহাব  অন্যদিনের মতো নয়। মুখটা ফ্রেশ না। কেমন যেন চোর, চোর লাগছে।
একটু দূরে গিয়ে নিরিবিলিতে বসে ওরা দুজন। যেখানে প্রায়ই ওরা বসে। পাহাড় দেখা যায় এখান হতে। আবার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে রাস্তা উঁচা নিচা। শিহাব শুরু করে, বলে আবৃত্তি আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। এই বলেই সে আবৃত্তির হাত দুটো ধরে বলে প্লিজ আবৃত্তি আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার যোগ্য না,আমি তোমার জন্য ছিলাম না। আল্লাহ তোমাকে আমার জন্য রাখেনি। আমি এমন হবে জানলে কখনো তোমার ছায়ার কাছেও আসতাম না। আবৃত্তি শিহাবের প্রতিটা লাইন শুনে কেঁপে উঠলো । যা বুঝার বুঝে ফেললো। বললো, তুমি কি বিয়ে করে ফেলেছ? শিহাব মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে থাকে। আবৃত্তি আবারো প্রশ্ন করে।
শিহাব গত পরশুর সব ঘটনা বলে। মা সেদিন আমাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছিলনা বাসা হতে। নানা গ্যাঞ্জাম আর ঘর ভর্তি মেহমানে ভরে রেখেছিল। আমার ছোট ভাই আহাদকে লাগিয়ে রেখেছিলে  যাতে সে ফলো করে । যখনি  দরজার কাছে যাই; মা বলে চিৎকার করে  আহাদ । মেহমানের লজ্জায় কিছু বলতেও পারছিলাম না। এভাবেই বেলা তিনটা পর্যন্ত। বাবা আসে । এরপর সবাই মেয়েদের বাসায় যায়। আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। কথাবার্তা হয়। মেয়েরা সিদ্ধান্ত নেয় সেদিনই বিয়ে পড়াবে। বাবা-মাও রাজি হয়। আমি বাধা দেই। কিছু বলতে যাই। এসময় মা আমাকে বাধা দেয়। বাবার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিলনা। আমি উঠে চলে আসতেই মেয়ের বাবা বলে, আপনার ছেলে মনে হয় বিয়েতে রাজি না। এটাতো ঠিক হলোনা। মেয়ে তখন ওখানে ছিলো। বললো বাবা এমন ছেলেকে আনলে যে আমাকে বিয়ে করবেনা, আমি দুদিন পর আমেরিকা যাচ্ছি। উনি রাজি না হলে থাক। হাজবেন্ড নিয়ে যাবার কথা ছিলো। আমি না হয় একাই যাব এই বলে মেয়ে চলে যাচ্ছে দেখে শিহাবের মা বলে না মা ও রাজি, আসলে হঠাৎ করে তো সব, তাই। তারপরও মেয়েটা বলে না আন্টি আমার মনে হয় ঠিক হবেনা। মেয়েটা ভাল ছিলো ,দেখলাম। কিন্তু বাবা-মা এর বাড়াবাড়ি ভাল লাগছিল না।
আমি মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলে মা কি বুঝে না করে, হঠাৎ মা এর হার্টের ব্যথা শুরু হয়। মা শিহাব বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে জ্ঞান হারায়। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই আমরা। মা এর জ্ঞান ফিরে আসলে মা আমাকে প্রমিজ করায়, ’আজ এক্ষুনি এই মেয়েকে বিয়ে কর। নইলে আমার মরা মুখ দেখবি। আমি আর ফিরবনা।’ মা এর কথায় দু-ভাই কেঁদে উঠি।  বাবা বলেন তোরা যা খুশি কর। আমাকে অপমান করার আর টাইম পেলিনা।এসব কথা শুনে, পরিবেশ অনুকূলে দেখে আমি সেদিনই বিয়ে করি ওই মেয়েকে। আক্ত হয়ে যায় আমাদের। সেদিন তাদের বাসায়ই থাকি দু’পক্ষের সিদ্ধান্তে। কথা হয় আমেরিকা থেকে চারমাস পর এলে দেশে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। মেয়েটা আমেরিকা ছোট থেকেই থাকে।তার চাচা মামারাও। পড়াশোনা সব সেখানে। সেখানে তাদের একটা ব্যবসা দেখাশোনা করে।তবে বাঙ্গালি কালচারে মেয়েটা বেড়ে উঠে। বাবা মাকে, বলেছে দেশে আমি থাকতে পারবো আসা যাওয়ার মধ্যে। তার আপত্তি নেই। এই বলে শেষ করে শিহাব আবৃত্তির মুখের দিকে তাকায়।
 আবৃত্তির পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সব শুনলো । চোখের পানি পড়ছে অনবরত..। শিহাবের কষ্ট হয়। হাতটা দিয়ে মুছতে চায়, যেই হাতটা বাড়ায় অমনি আবৃত্তি ওর হাতটা জোরসে সরিয়ে দেয়। উঠে দাঁড়ায়। যাবার পথটার দিকে পা বাড়ায়। শিহাব বলে, আবৃত্তি আমাকে ক্ষমা করো, আবৃত্তি কিছু বলেনা। শিহাব বলে এভাবে যেওনা। কিছু একটা বলো প্লিজ! আবৃত্তি বলে  ছি! এতো সব হবার পর আর কি কথা? যাও বউ নিয়ে সুখে থাকো। শিহাব বলে আমি তো ওকে আমার ভেতর থেকে মেনে নিইনি। পারবনা। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কারো কাছে নিজেকে দিতে পারবনা। তুমি চাইলে আমি তোমাকে যখন বল বিয়ে করবো। দেখবে এ মেয়ে তখন আমাকে ডির্ভোস দিবে।আবৃত্তি এ কথা শুনে শিহাবকে থাপ্পড় মারে। বলে, ছি ! শিহাব , এভাবে মেয়েদের জীবন নষ্ট  করার মানে হয়না। কাঁদতে কাঁদতে আবৃত্তি চলে যায়। শিহাবও কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আর পেছন থেকে ডাকে আবৃত্তি সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি...আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো, ওই মেয়েকে একদিন আমি তোমার কথা বলবো। আমার যা হবার হবে।
আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালবাসি। আবৃত্তি আর পিছু ফিরেনা। চলে যায় ওর গন্তব্যের দিকে। বুজতে পারে শিহাব তাকে জ্বালাবে। ও স্থির করে আর নয় এমন, শিহাব যেন আর চান্স না পায়,ওকে যে ভুলতেই হবে  ।
পাহাড়ের নীরবতায় আঁকা বাঁকা পথে যেতে ওর এতক্ষণের কষ্টের মুহুর্তটা কেন যেন কেটে যায়। সকালে বীথির কথাগুলো মনে পড়ে।  আবৃত্তির বাবার স্বপ্ন ওকে  এ মুহুর্তে  সুখ দেয় কিছুটা।
আবৃত্তি সে সুখে পা বাড়ায়। কি যে এক ভবিষ্যত সুখ ভাবনা ওর  হৃদয়ে দোল খাচ্ছে।


সাহিত্যিক ,সাংবাদিক
ট্রাংক রোড, ফেনী





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট