দু’টি কবিতা
মাহমুদুল ইসলাম রায়হান
অ-মানুষ
এ শহরের মানুষগুলো দেখতে অবিকল আমার মত
আনন্দ পেলে আমি যেমন হাসি, তারাও তেমন।
কষ্ট পেলে কাঁদে
খিদে পেলে খেতে বসে
হাত দিয়ে খাবার তুলে, মুখে গুঁছে দিলে পেট ভরে।
অভাব হলে ভিক্ষা খোঁজে
মসজিদ বা মন্দিরে
ফানাহ'র লোভে
ুুকোরআন, গীতা, বাইবেল পড়ে
ধর্মগ্রন্থ যার আছে যত।
কই? আমি তো মানুষ নয়
তবে কেন মানুষগুলো দেখতে হুবহু আমার মত?
আচ্ছা! মানুষ বলে কাকে? সংজ্ঞাটাই বা কে জানে?
মানুষ সংজ্ঞাটা কি আমার মধ্যে পড়ে?
এ যেমন আমি বিশ্বজিৎ হত্যার ঘাতক।
রিফাতের নির্মম মৃত্যু'র দৃশ্য
নিরবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাওয়া এক দর্শক।
আমার গুলিতে মৃত্যু'র সুধা পান করেছে
সদ্য জন্ম নেওয়া, এক নব জাতক।
আমার দেওয়া কেরোসিনেরর আগুনে পুড়ে মরেছে
আমার ভাই ফুলন।
আমার জন্যই স্বাধীন দেশে পরাধীন জনগন।
আমিই অভিজিত, নাদিয়া, রাজন
নাম না জানা, আরো কতজনের মৃত্যু'র কারণ।
আমি ছেলের সামনে এক মায়ের ধর্ষক,
ভাইয়ের সমনে বোনের।
আমার ইশারায় ওরা গুজব কে পুঁজি করে
জীবন নিয়েছে রেণ্’ুর।
আমি সিরাজ উদ্দৌলাহ, আমি ন্যায়ের প্রতীক
আমিই ধর্ষক, ধর্ষিতা নুসারাত, তন্’ুর।
মায়ের পেটে থাকা এক শিশু পুড়ে মরেছে
আমার লাগানো আগুনে।
এখনো বলতে অনেক কিছু বাকি
যা কিছু করেছি যত
বলুন! আমার মধ্যে কি মানুষ সংজ্ঞাটা পড়ে?
না পড়লে, তবে কেন মানুষগুলো দেখতে
আমার মত?
আচ্ছা দেখুন, মানুষ সংজ্ঞাটা কি আমার মধ্যে পড়ে?
আমি বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া মীম-সাদিকের লাশের কফিন দেখে
মুখের উপর অট্ট হাসির মিছিল ডাকা শাহজান।
আমি তরুণী’র বুক তাক করে
কনুই দিয়ে অনৈতিক স্পর্শ দিয়ে যাওয়া এক পুরুষ।
মানুষ সংজ্ঞাটা দেখে বলুন!
আমি কি মানুষ? আমি কি মানুষ? আমি কি মানুষ?
মানুষ না হলে, তবে কেন মানুষগুলো দেখতে আমার মত?
তাহলে কি আমি অ-মানুষ!
ভুল বানানে মানুষ
এই! তুমি না পুরুষ?
তো?
একটা মানুষকে কয়েকজন মিলে মারছে!
মারুক।
একটা চোখ গলে রুক্ষ মাটির বুক ভিজিয়ে দিয়েছে!
দ্যাক।
আর লাঠির আঘাতে মাথাটা থ্যেৎলে গেছে!
যাক।
বাধা দিবে না?
নাহ।
কেন; তুমি না পুরুষ?
নাহ! ভুল বানানে মানুষ।
তাহলে ছবি তোলো, ভিডিও কর। আর তা ইউটিউব, টুইটার, ফেইজবুক, হোয়াটস্এ্যাপে ছাড়লে বাহ্ বা আর হাজার হাজার লাইক কমেন্ট পাবে!
ঐটা আমার কাজ না।
তো কার?
যারা কা-পুরুষ। ভয়ে বাধাও দিতে পারে না, আবার অ-মানুষ হয়ে যাবে ভেবে মারতেও পারে না।
তাহলে কি তনু, নুসরাত
মীম সাদিক, রিফাত
আর তসলিমা রেণ্’ুর মত
আরেক টা মানুষটা মরবে?
হ্যাঁ! মরবে তো।
কেন মরতে হবে?
অ-মানুষের পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্মেছে বলে।
আর কা-পুরুষরা?
ওরাও মরবে।
কিভাবে?
তুমি বোধহয় খবর শুনো না, বা পত্রিকার পাতায় একদিনও চোখ রাখোনি। শিরোনামে লেখা থাকবে ‘কালসাপের সংগমকালীন সময়ে ছবি বা ভিডিও করতে যেয়ে কালসাপের দংশনে এক তরুণ বা যুবকের
মৃত্য।
তাহলে পৃথিবী?
হুমায়ূন আজাদের লেখা কবিটা পড়োনি। সবকিছু নষ্টাদের অধিকারে যাবে’।
তাহলে তুমি কি, মানুষ নাকি পুরুষ?
বলছি নাহ! ভুল বানানে মানুষ। ভুলের কারণে আজো মানুষ হতে পারিনি। সুবোধের ঘুম ভাঙলে আমিও মানুষ হবো।
সুবোধ কোথায় ঘুমায়?
আমার ভেতর।
তুলে নাও!
নাহ! ও নিজেই উঠবে।
মানুষটা মরে যাচ্ছো তো!
মরুক।
তোর আর তোর সুবোধের উপর আল্লাহ’র গজব পড়ুক ।