অপেক্ষায় থাকি
স্বপন শর্মা
তোর থাকা, না-থাকা দিনগুলো নিয়ে বসে আছি,
ছেঁড়া সম্পকের প্রতিটি খাঁজে নোনা গন্ধ
সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট নদীতে ভেলা ভাসিয়ে,
স্বেচ্ছায় চলে গেলি যেদিন।
সেই প্রাচীন ঢেউয়ের স্রোত আটকে তোকে জানানো হলো না
আকাশ কোনদিনই আমাদের ছিল না,
তবু দ্যাখ প্রথম পুরুষের মতো ক্যামন দিগন্ত শুয়ে আছে ...
তোর চলে যাওয়ার পর
একা সেই চার দেয়ালের মস্ত এজলাস, সেই নুন হলুদের বেহাগ যাপন;
নিজের চোখ বেঁধে নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।
স্মৃতি গুলোকে নিয়ে
শহরের চারদিকে ডোরাকাটা হরিণ ছানার মতো ছুটি
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে খুব গোপনে তাদের শুইয়ে আসি জংধরা বেঞ্চে।
শব্দহীন কিছু কথার টুকরো তুলে রাখি;
যদি কখনো ফিরে আসো দাবী নিয়ে...
কিছু কথা একান্তই গোলাপের
রতন রায়
ভাঙা পদ্ধতি,
ঝরে গেল অসংখ্য তাজা প্রাণ।
রাষ্ট্রের শোকসভা,
কারো কারো প্রতিবাদ ।
ব্যস,
দ্বায় ঢাকে নতুন ইস্যুতে।
রূপকথার গল্প শুনে আমরা ঘুমাতে যাই,
খেলনা পিস্তুলে হয় বিমান ছিনতাই।
তবু, চেপে যান, সুখী হোন সূত্র মেনে,
চিঠির যুগে ফিরে প্রেমের কবিতা লিখুন অজান্তে।
নতুবা সিম কোম্পানির ডাকাতির মধ্যেও
ফোনালাপ চালান,
যা কিছু একান্তই গোলাপের!
নিরুত্তাপ
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা
অযাচিত কোলাহল দেখে নিরুত্তাপ হয়ে চেয়ে থাকি,
খুঁজে পাই নানা সূত্রে গাথা জীবনের উপপাদ্য!
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ছন্দের দ্বন্দে মিলেছে উৎপাদক,
অভিমান আর অনুযোগে থাকা সময়গুলোকে একত্র করে,
ফুলে ফেঁপে ঘটেছে অনাহুত এই বিস্ফারণ!
পলকে পলকে সময়ের তাসের গ্রাসে,
হারিয়ে যায় সকল বিরহের বিচলিত উত্তাপ।
সত্য মিথ্যের প্রভেদ স্পষ্ট হয়ে,
জানান দেয় নতুন প্রভাতী সূর্য।
সোনালী আভায় যখন সূর্য দেয় ধরা,
লব্ধি বলের প্রভাবে হঠাৎ
ভুল ভাঁঙে সশব্দে!
কল্পিত অধরাকে ছোঁয়ার স্বপ্নে হয় অসাড়,
ভাঁঙনের শব্দে সবাই এখন মৌন!
অজ্ঞাত এক উপমা
নাসিমা হক মুক্তা
শব্দের সাথে খেলি ঢেউ জাগা নদীর কল্লোলে
তার অতলে খুঁজে রোমকূপ
শিল্পের মত সাজায় প্রণয়।’
দেহের গহ্বরের আদ্যোপান্তে
অন্তমিল ঘটায়
সুুউচ্চ পর্বত থেকে গড়িয়ে পড়া জল
বেয়ে বেয়ে খায় ঝর্ণাফল।
ছলছল ছন্দে বিদ্যাচর্চা
জলপ্রপাতের হুহু বেজে ওঠে
অজ্ঞাত এক উপমা
রোমাঞ্চিত তৃষ্ণায় শুধুই ওষ্ঠের চুম্বন খুঁজে।
দীর্ঘ পথ হেঁটে-যখন মরুর প্রান্তে এসে
ফুল, পাখি ও গাছের কথা লিখি
ঠিক তখনই
ঘুঙ্গুর তুলে এক বিষপিপঁড়ে বিদ্যা;
পাড়া জুড়ানোর কথায়
ফুল চন্দন ছিঁটায়-শুধুই খাতার পৃষ্ঠায়।
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছো জীবন
তারিক ফিজার
আমার জীবন গতরাতে ফুঁ দিয়ে উঁড়িয়ে দিয়েছো, নারী!
পেঁজা তুলোর মতো আমি এখন ভাসছি ফারুকপুরের উদ্ধত পদ্মপুকুরে;
একটু আগেই আমি - ছাদে নেড়ে দেওয়া
তোমার প্রথম পরা লাল রেশমি শাড়ি ছুঁয়ে এলাম;
গমস্ত শাড়ী জুড়ে বেদনার নীল পাড়, ঠিক আমার মায়েরই মতো।
আমার মায়ের মতো এখন তুমিও একজন রমণী!
তোমার শাড়ির গোছায় ঝন্ ঝন্ চাবির শব্দ,
তুমি স্পষ্ট শুনতে পাও অনাগত সনÍানের হাতে
বেজে ওঠা সাইকেলের টুংটাং ধ্বনি। কি ব্যস্ত তোমার জীবন!
আমি কম্পিউটারের ব্যাকবাটনের মতো
টিপ দিয়ে ফিরে যাই – স্মৃতিতে স্মৃতিতে।
দিয়াবাড়ি, রমনা পার্ক, উত্তরার রেস্টুরেন্ট...
নেইল কার্টার কেটে নেয় আমার চোখ,
দু'চোখে স্বপ্ন নেই, শুধু ঘুম নিঝ্ঝুম সমস্ত রাত।
বেকার
সোমা মুৎসুদ্দী
আর কত পায়ের স্যান্ডেল ছিড়লে
বলতে পারেন একটা ভালো
চাকরি পাবো
আর কত পাউরুটি, কলা খেলে
একটা ভালো চাকরি জুটবে কপালে
আর কত যোগ্যতার পরিচয় দিলে
একটা ভালো চাকরি পাওয়া
যেতে পারে
এই ঢাকা শহরে
আমার কেউ নেই
না আত্মীয় না প্রিয়জন
কেউ নেই
শুধু জানি, কোন এক গাঁয়ে
আমার, ভালো একটি
চাকরি পাবার অপেক্ষা
বসে আছে আমার মা, বাবা
ছোট ভাই, বোন
সামনে অন্ধকার জানি
এই অন্ধকারেও কেউ
হাত বাড়াবেনা আমার দিকে
আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে
এই শহরে, টাকা ছাড়া কিছু হয়না
মামা ছাড়াও না
অভিজ্ঞতা ছাড়াও কিছু হয়না
কিন্তু এই মুহূর্তে দারিদ্র্যতার মতো
বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া
আমার ঝুলিতে আর কিছুই নেই
আমি যে ভবিষ্যৎ হীন হতাশাগ্রস্থ’
এক বেকার