নারীর অবদান
সাজিয়া ইসলাম দিবা
পৃথিবী আজ যত সৃষ্টিতে হয়েছে মুখোরিতো,
তার সবটাতে নারীর অবদানে রেখেছে,
করেছে আলোড়িতো,
ডাক্তার, নার্স, কুটির শিল্পে রাখে সমান অবদান,
তবুও সব পায়না সর্বদা যোগ্য সন্মান,
পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক সমান অবদান রাখে,
বৈদেশিক মুদ্রা উপার্যন করে রপ্তানি খাতে,
তবুও নারীর প্রতি চলে সহিংসতা,
কোথায় নেই তাদের আজ নিরাপত্তা,
শিশু হোক বা বৃদ্ধা,
পুরুষের লালসার শিকার হয় সহসা,
বাসে ট্রেনে বা মেলায়,
সর্বদা লাঞ্চিত হতে হয়,
মেয়ে হয়ে জন্মনিলে ফোটে না হাসি মুখে,
আবার মাতৃ গর্ভেই হত্যা করা হয় কন্যা শিশু কে,
তখন পুরুষ এ কথাটি যায় ভুলে,
জন্মনিয়েছিলো সেও এক মায়ের কোলে,
মা কত কষ্টে আদর যতেœ মানুষ করে শিশুকে,
তবু শিশু পরিচয় পায় বাবার পদবীতে,
সেই নারী কে আবার দেবী রূপে পুজো করে,
মানুষ রূপী অসুরদের না দোষ ধরে,
তাই শুধু নারী দিবসেই তাদের গুনগান না করি,
যোগ্য সন্মান দিয়ে সবাই বৈষম্য মুক্ত স্বদেশ গড়ি,
এগিয়ে যাবে নারী ভেঙে সব বাঁধা,
নারীর হাসিতে পূর্ণতা পাবে এই বসুন্ধরা...।
দুঃখের উপাখ্যান
হাসান মাসুদ
দুঃখগুলো ছড়ায় না চারদিকে?
পাখির ঠোঁটে! চিঠির খামে!
নামে - বেনামে! দুর্দান্ত গতিতে!
চলো দুঃখগুলো উড়িয়ে দিই;
বইয়ের পাতায়! খাতায় খাতায়!
পাতায় পল্লবে!
দুঃখগুলো ঘুরে বেড়াক
মালিবাগ! শাহবাগ!
মাঠেময়দানে ! রাস্তায় রাস্তায়!
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে!
চলো দুঃখগুলো ছাপিয়ে দেই;
সকালের প্রতিটা কাগজের
পাতায় ছাপা হোক দুঃখ!
মিডিয়াজুড়ে চলুক কেবল
দুঃখের সংবাদ!
দুঃখে দুঃখে মুখরিত হোক চারিদিক
গড়ে উঠুক দুঃখ নগর!
চলো জীবনটা দুঃখময় করে তুলি।
চলে যাবে বলেই
রফিকুল ইসলাম
চলে যাবে বলেই
নিপুণ হাতে রঙ ঢেলে সাজালে
পাথরের বুকে বয়ে চলে রংধনু নদী,
চলে যাবে বলেই
পাথরের গায়ে জন্ম নেয় গুল্মলতা
কেন এত আয়োজন চলে যাবেই যদি।
চলে যাবে বলেই
নীরব দেয়ালে অনুভূতির ছবি আঁকে
অনুভবের দগ্ধ দহনে মধ্যাহ্নের রৌদ্দুরে
চলে যাবে বলেই
সন্ধ্যার মায়া আলো-আঁধারের ছায়া
ভোরের আলো ছড়ায় উপলব্ধির দুয়ারে।
চলে যাবে বলেই
সকালের ফুটা ফুল ঝরে পড়ে সন্ধ্যায়
পূর্ণিমা চাঁদ ডুবে যায় রাতের শেষ প্রহরে
চলে যাবে বলেই
স্মৃতিরা দু’হাতে পথ আগলে দাঁড়ায়
মনে হয় বসত করি সেই পুরাতন কুঠিরে।
সুইসাইড মেটিং
মোজাম্মেল সুমন
শীতের রাতে ফিসফিস কথা রোমাঞ্চিত চাদর,
নিশ্বাস শব্দে জেগে ওঠে ভালোবাসার আদর।
জ্যোৎস্নার রূপে রয় পানযোগ্য অনুভূতির সুধা,
আর ‘সুইসাইড মেটিং’ ভালোবাসার অসীম ক্ষুধা!
তোমাকে যে ভালোবাসি জীবনেরও চেয়ে,
আমি ধন্য হয়েছিলাম তোমায় কাছে পেয়ে ।
তুমি আমার রানি কিংবা ভালোবাসার সাবা,
আমি ভীষণ মুগ্ধ দেখে তোমার রূপের আভা ।
জোনাকির রূপ প্রেমেতে ঝিলিমিলি জ¦লতো,
আকাশের বুকে আমাদেরই ভালোবাসা বলতো ।
তেঁতুলকফি খেয়েছিলাম দুজনে এক রাতে,
এখন তোমার ছোঁয়া ভাবতে শূন্যতা পাই হাতে ।
রাত্রিজেগে কাঁদি! বালিশ রাখে দুঃখ পুষে।
ভোরের শিশির আমার কান্নাগুলোকে নেয় চুষে!
সকালবেলা তুমি হাঁটো কারোর হাতটি ধরে।
আমার চোখের চার দেয়ালের অশ্রুবিন্দু ঝরে
কাচের শরীর বেয়ে! তুমি খুশি শিশির ভেবে!
আমি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরি! বলি আরও নেবে?
অথচ পাও না যে শুনতে- আমার কথা কোনো!
দেখি তুমি কারোর আঙুল ছুঁয়ে স্বপ্ন বোনো।
তারপর আমার উপস্থিতি বাকী থাকে যদ্দুর,
একেবারে বিনাশ করে দেয় সোনালি রোদ্দুর।
এমনকরে প্রতিদিন ঘটে আমার মরণ,
জীবন মানে ভালোবাসার বিসর্জনের ধরন।
একই ছাদের নিচে বাস না করলেও একই গগন
এর নিচে যে আমাদের বাস! একইভাবে গমন!
গগনপানে তাকালে পাই তোমার মুখের ছবি,
দীর্ঘশ্বাস ফেললেও আমি যে ভালোবাসার কবি।
স্বরলিপি
শারমিন সুলতানা রীনা
পৃথিবী বদল হয়
মানুষের মন আর কতটা বদলায়?
এই নগরীকে যদি আঁধারে ঢেকে দিতে চাও
তুমি কি পারবে সোনালি প্রভাতের আগমণ করে দিতে নাশ?
পাখির গান, নদীর ¯্রােত
ঝর্নার বয়ে যাওয়া
বৃষ্টির পা থেকে খুলে নিতে নুপুর
বুকের পাজরে থাকুক ব্যার্থতার স্বর লিপি
তবু চোখ ভরে তুলে নেবো
দিগন্তের সবুজ স্বপ্ন
কতটা কষ্ট পেলে বাড়বে
তোমার পরমায়ু?
পথ থেকে পথে
হেমন্ত হাসান
এভাবে পথ হারাতে হারাতে একদিন
আমি হারিয়ে ফেলব নিজেকে
আর নিজের সবটুকু।
পথের ভেতর হারিয়ে ফেলা পথ
কিংবা নিজের ভেতর হারিয়ে ফেলা
নিজেকে,
কতটুকুই আর ফিরে পাওয়া যায়?
কোন একদিন, মেঘেদের পথে হেঁটে
কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,
তোমার ঠিকানার চিরকুট।
আপ্রান পথ হাতড়েছি আমি,
অথচ তুমি বৃষ্টি হয়ে ঝরে গেছ
তোমার চৌকাঠে চুমুর আলপনা
আঁকার আগেই!
বৃষ্টি আমাদের বুকে শীতল ছোয়ায় বটে,
কিন্তু মাথার উপর মিলিয়ে যায় মেঘের ছায়াটুকু!
আমি জল চেয়েছি নাকি ছায়া
বৃষ্টি নাকি মেঘ
একবারও সেই ভাবনার পথে
এক পা এসে হাঁটোনি আমার পায়ে পায়ে!
তাইতো আমি পথে থেকেই পথ হারালাম,
আর নিজেকে হারালাম নিজের ভেতর,
যেভাবে হারালে আর ফিরে পাওয়া হয়না
ফুল ফোটাবার পথ!
বিষাদের রোদ মাখানো পথে পথে হাঁটা
আমার ফেরারী মন জানে,
একদিন তুমি বুকের আঁচল
দ্বিধাহীন বিছিয়ে বলবে,
এই পথে পাগল,
এই পথে হেঁটে আসো আমার বুকের উষ্ণ ছায়ায়!
কে জানে!
আমি হয়তো মাথা নিচু করে কিংবা
তোমার চোখের মনিতে
এক পলক তাকিয়ে থেকে বলব,
লাবণ্য,
আমি আর পথ হাঁটি না যে!