পদাবলি : ০২





আম্মার মৃত্যুতে
কাজী রুপাই 

সেই দিন পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার চারিদিকটা এতোটায় বিদগ্ধময় ছিলো যে, মনে হয়েছিলো বিশ্বযুদ্ধময় একটা পরিত্যক্ত জলাশয়ের উপর ভাসছি আর আমি গোটা যুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি আহত মুক্তিযোদ্ধার মতো।

আমার পৃথিবী বাতাসহীন। ঢেউগুলি-ঢেউহীন কান্না আর ধুসর পায়রাগুলি অপার্থিব অগ্নির অগ্নি¯্রােতে অসহায় অথবা মৃত খরগোশের ছানা।

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মহাকাল আর পৃথিবীর শেষ নিশ্বাসের উপর। আমার হৃদপিন্ডটা মুহূর্তের জন্য
আটকে গিয়েছিল। আমার সমস্ত অবলোকনের শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল আমি যেনো পরকালের কোনো এক বারান্দায় ঝুঁলছি।

কুঁড়ি বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে। মা তুমি নেই আমার
পৃথিবীতে। অন্ধকার সরাতে সরাতে কতো হেঁটেছি
আলোর পালংকে শুয়ে থেকে মনে হয়েছে; আমি যেনো অন্ধকারের ভিতরে অন্ধকারকেই তারাচ্ছি।

আমার সব আলো নিভে গিয়েছিল সেইদিন। সমগ্র
পৃথিবীটাকে মনে হয়েছিল একটা বধ্যভূমি। মহা
বিশ্বজুড়ে আজ কতো আলোর পেখম। নিদারুন
ভাবে উড়ছে। তবুও তুমিহীন সব আলোই আজ আমার কাছে এক একেকটা মৃত কোকিলের গান।

আমি জানি একদিন পৃথিবীর সব আলো নিভে যাবে। গলে যাবে মৃত্তিকার সমস্ত অহংকার। ম্লান হয়ে যাবে মানুষের তরতাজা হাসির ইতিহাস ।

তবুও বলবো সেই মুহুর্তে তোমার এক চিলতে হাসিতে হয়তো এই পৃথিবী আবার জেগে উঠবে। আমার নবীজির আহবানে। এ আমার আত্মবিশ্বাস


হৃদয় পোড়ার গন্ধ
রেজাউল রেজা

রুমি! রুমি! কি হলো তোর ঘরে?
আগুনের গন্ধ কেন?
কোথায় আগুন লাগল?
চিল্লাতে চিল্লাতে বাড়ির সবাই ছুটে এলো আমার ঘরে,
বড় ভাইয়া ইতোমধ্যেই ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে ফেলেছে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই সাইরেন বাজাতে বাজাতে ফায়ার সার্ভিসের গোটা ছয়েক গাড়ি এসে হাজির!
কোথায় আগুন? কোথায় আগুন বলে চিল্লাতে লাগল তারা।
ভাইয়া ওদেরকে কি বলবে বুঝতেই পারছে না
অবশেষে কি যেন বলে বিদায় করল।
যে যার রুমে চলে গেল।
অতীতের তিক্ত স্মৃতি ভুলে যাব বলেই তার দেওয়া প্রথম প্রেমপত্রটিতে আগুন লাগিয়েছিলাম।
মৃত শিশু বুকে রেখে লাভ কি?
পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চেয়েছিলাম পরিত্যক্ত ভালোবাসার স্মৃতি নামক যন্ত্রণাগুলোকে।
পৃথিবীটা কত অদ্ভুত তাই না!
সামান্য এক টুকরো কাগজ পোড়ানোর গন্ধ সবাই বুঝতে পারে,
অথচ মসজিদসম হৃদয় পোড়ানোর গন্ধ কারো নাকে যায় না!
পুড়ে পুড়ে ছাই হলেও কারো কিছু আসে যায় না!!



এক ব্যথাতুর মাঝরাত
রায়হান কিবরিয়া রাজু

এক ব্যাথাতুর মাঝরাত
স্মৃতিরা ফুরোবার খুব আগেই সিগেরেট শেষ হয়ে যায়।
ঠোঁটে আচমকা ছেকা দিয়ে আবারও মনে করায়
সেই প্রথম যৌবনের দ্বিতীয় উর্বশীর কথা।
পরপর মনে পড়ে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত, মাঝরাতগুলো।
আবারও শেষ হয়ে যায় আগুন।
আবারও পুড়ে যায় ঠোঁট।
তারপর আবারও মনে পড়তে থাকে।

এভাবে মনে পড়তে পড়তে চোখে মুখে আসে ব্যথার লাবন্য
প্রেম আর অপ্রেমে বেড়ে যায় বুকের ভিতরের ব্যর্থ নোংরামি
আর কাউকে পেয়ে হারানোর মতো উদত্য অশালীনতা
এবং পরপর ছেড়ে যাওয়া কিশোরীর রেখে যাওয়া ঘৃণায়
থেকে থেকে নষ্ট হতে থাকে মাঝরাত।
ফুরোতে থাকে আগুন
পুড়তে থাকে ঠোঁট
পঁচতে থাকে ভিতরটা।

তখনও নির্লজ্জ্ বেহায়া মন কারো না কারোর স্মৃতিকে
লালন করে যায় স্বগর্বে
যৌবন পুড়িয়ে আলো দেয় অন্য কারোর অন্ধকার উঠোনে
অথচ তাদের অন্দরমহলে আলোর অভাব নেই
উঠোনে আসতেও তাদের দরকার পরে না
অন্যকারোর আলোয় তারা দিব্যি আলোকিত।



শূন্যফল
খোরশেদ পলাশ

কি করে পারো তুমি
এতটা সহজে,
“ভালোবাসি” লিখেছো
শুধুই কি কাগজে?

মন থেকে বলনি
একবারো তুমি
বুঝেছি এই কথা
এতপরে আমি।

মেসেজ আর চেটিংএ
মিথ্যে নোনা জল
ভালোবাসার রেটিংএ
শূণ্য ফলাফল।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট