মনের মুকুরে

 


মনের মুকুরে

শহিদুল ইসলাম লিটন


চৌধুরী সাহেবের একমাত্র আদরের নাতি তার নাম হৃদয়। বয়স ষোল, দশম শ্রেণিতে পড়ে। হৃদয় সবসময় নতুন কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে তার দিন কাটে। আজ সে দাদাকে খুব বেশি চেপে ধরেছে যে, দাদা তাকে এমন একজন কীর্তিমান মানুষের গল্প শোনাতে যার জীবন কাহিনী শুনে সে খুব অনুপ্রাণিত হয়। দাদা নাতীকে প্রশ্ন করেন কি দাদা ভাই দেশের না বিদেশের লোকের গল্প শুনতে চাও? নাতী দাদাকে বললো আগে আমার দেশের মানুষের গল্প শুনি। দাদা বললেন, তুমি যদি ধৈর্য্য সহকারে মনযোগ দিয়ে আমার গল্প শোনো তাহলে আমি তোমাকে এমন একজন মহান দেশপ্রেমিক নেতার গল্প শোনাবো, যিনি আমাদের দেশের লোক হয়েও দেশে বিদেশে ছিল তাঁর প্রচুর সুনাম। তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মধুমতি নদীর জলস্নাত অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের এক সবুজ শ্যামল গ্রাম যার নাম টুঙ্গিপাড়া। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল খোকা। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নানা তাঁর নাম রাখলেন শেখ মুজিবুর রহমান। একজন নীতিনিষ্ট দেশ প্রেমিক নেতা হিসাবে ক্রমান্বয়ে তিনি সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে তিনি আমাদের দেশে জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত হোন। তিনি যখন ব্রজ্রকণ্ঠে ভাষণ দিতেন সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর ভাষণ শুনতো। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি যে ভাষণ দেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলো, তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্র“র মোকাবিলা করতে হবে। তাঁর এই কালজয়ী ভাষণ শুনে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা ফিরে পেয়েছিলাম আমাদের কাংখিত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক জেল-জুলুম আর নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে। সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত হয়ে একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিক নেতা হিসেবে সকলের কাছে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই। তিনি আরও বলেছিলেন সাত কোটি বাঙ্গালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারবো, কিন্তু বাংলার মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারবো না। তাঁকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবেনা। যিনি ছিলেন আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, বাংলার রাখাল রাজা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, তাঁর জন্ম না হলে আমরা পেতাম না স্বাধীন দেশ এবং ঘন সবুজের মধ্যে লাল বৃত্ত সম্বলিত সবুজ পতাকা। এই মহান নেতাকে ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট ধানমন্ডির তাঁর বাসায় স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তাঁর মতো একজন মহান নেতার আদর্শ আমাদের মনের মুকুরে যদি চিরকাল ধরে রাখতে পারি তবেই স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা যথাযথভাবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দিতে পারবো। দাদার মুখ থেকে একজন মহান নেতার জীবন কাহিনী শুনে নাতি মনে মনে চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন যেদিন দেশে কায়েম হবে আমরা যেদিন ভুখা নাঙ্গা মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারবো, দুর্নীতি যেদিন দেশ থেকে চিরতরে দূর হবে, স্বাধীন পতাকার মান বজায় রেখে আমরা যখন বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষুধা ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবো তবেই সেদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। দাদার নিকট থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের জানা-অজানা অনেক মূল্যবান কথা শুনে নাতী দাদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রশান্ত চিত্তে বিদায় নেয়। এই গল্প সারা জীবন তার মনের মুকুরে চির অ¤¬ান হয়ে থাকবে। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট