হাওর সুন্দরীর টানে ভ্রমণবিলাসী মন
গোলাপ আমিন
হাওরবিলাসে মিটে যায় আমাদের সমুদ্র দর্শনের অপূর্ণ সাধ,
কোনো এক ছলে যেন আমাদের উঠতি তরুণের মনের কোণে,
পিরিতের আগুন ঢেলে দিয়ে উস্কে দেয় দারুণ উচ্ছ্বাস।
মনের অজান্তে ভাটিয়ালি মাঝির মতো সুরে সুরে গেয়ে ওঠে গান,
তাপিত হৃদয় শীতল হয়ে ওঠে হাওরবিলাসী নান্দনিক দর্শনে।
তার বুকে ভালোবাসার টইটম্বুর রাশি রাশি জল-যন্ত্রণা,
উছলে পড়া রূপ-যৌবনের আকর্ষণে ছুটে যায় মানব-মন,
বাড়বাড়ন্ত জলে বড়’ই সৌন্দর্য উপভোগ করে প্রাণ ভরে সকলে,
কোনো বাসনার মায়াবী হাতছানিতে ডেকে নিয়ে যায় গোপন অভিসারে,
সাগরিকার নির্ভেজাল নিপুণ ও নিখুঁত সহোদরা হাওরসুন্দরী।
ছলাৎ ছলাৎ ছলকায় ছিটকে পড়া শান দেওয়া জলের ঝিলিক,
পানির তোড়ে ভেসে আসা ছোট ছোট ঢেউ যেন নাবালিকার বক্ষোজ,
মাঝে মাঝে আমরাও কম্পিত হাতে ছুঁয়ে দেখি তার ভাঁজে ভাঁজে,
বেনোজলে বেহুলার ভেসে চলা, লখিন্দর যেন এক স¦ার্থক প্রেমিক।
অষ্টাদশী যুবতীর মতো এলোকেশ খুলে স্নানরত হাওরসুন্দরী,
বাউরি বাতাসে তার কখন যেন উড়ে গেছে শাড়ির আঁচল,
চিত হয়ে শুয়ে থাকা নগ্ন নারীর মতো সুবিশাল এক জল-ভাস্কর্য,
ভ্রমণবিলাসী মনে আনন্দ আনয়নে হাওরসুন্দরী যেন চতুর ছিনাল।
রোদ ছুঁয়ে যায়
শাহীন রায়হান
রোদ ছুঁয়ে যায়
দামাল বাতাস কিচিরমিচির পাখি
আলতো করে ফুল পরী গাঁও খুকুর দু’টি আঁখি।
শান্ত দিঘির ফড়িং ছানা
শরৎ মেঘের নরম ডানা
শিশির মাখা ঘাসের ডগা
কনকচাঁপা ফুল।
বিলে ঝিলে বউ টুবানি
কলমিলতার গুনগুনানি
রঙিন ঘুড়ির কাটাকুটি
দুষ্ট খোকার চুল।
আকুল করা চোখের দু’কোণ
মন ছোঁয়া গান লাল টেলিফোন
ফড়িং ছানার সুখ।
রিনিকঝিনিক পাতার নূপুর
উদাস করা গাঁয়ের দুপুর
বাংলা মায়ের মুখ।
চম্পাবতী বেদে যায়
মফিদুল ইসলাম
চম্পাবতী বেদে যায় মাঠের পথে দূরের গাঁয়,
ঝুম ঝুম ঝুম ঝুমকা নূপুর বাজছে যে তার রঙিন পায়।
হলুদধোঁয়া হাত দু’খানি কলমি ফুলের গয়না পরে,
গাঁয়ের পথে চলছে হেঁটে সাপের ঝাঁপি মাথায় ধরে।
নূপুর পায়ে ঝুমুর তালে মাঠ কাঁপিয়ে, বন কাঁপিয়ে,
ক্ষনেক থেমে, ক্ষনেক হেসে, পিছন ফিরে ঘাড় বাঁকিয়ে ।
মেঘ কুচ কুচ কেশের বাহার, ঠিক যে গাঢ় বনের ছায়া,
কালো মেঘের আড়াল দিয়ে, মুখখানি তার মিষ্টি মায়া।
ভ্রমর-কালো চোখ দু’টিতে ভাসছে যেন মেঘের মেলা,
তারি মাঝে থেকে থেকে বিজলি মেয়ে করছে খেলা।
মায়ার পরশ দেয় বুলিয়ে সেই না চোখের আড়াল দিয়ে,
পথের মাঝে তারই রেখা আঁকছে ছবি ছন্দ নিয়ে ।
দীঘল বাঁকা পথটি ধরে চম্পাবতী যায় যে হেঁটে,
মাথার উপর শঙ্খচূড় আর দিগরাজেরা পড়ছে ফেটে।
ছন্দ তালে তাল মিলিয়ে ঝাঁপির মাঝে তুলছে ফণা,
ছন্দে তালে উড়ছে সাথে ধূসর পথের বালুকণা।
চম্পাবতী বেদেনী গো মাথায় নিয়ে সাপের ঝাঁপি,
বাড়ি বাড়ি ফিরছো ঘুরে গাঁয়ের বাঁকা পথটি মাপি ।
বেদের মেয়ের শাড়ির আঁচল বাউরি বায়ে নাচছে উড়ি,
নদীর বুকে পাল তোলা নাও ঠিক যেন এক আকাশ-ঘুড়ি ।
তাঁর সে চলার পথটি চেয়ে রাখাল ছেলের থামছে বাঁশি,
দূর থেকে সে দেখছে তাঁরে আপন মনে উঠছে হাসি।
বেদের মেয়ে তুমি ওগো আসো যদি আমার বাড়ি,
মেপে দেব পাঁচ ঘটি চাল, মাটির ঘড়া, রঙিন হাড়ি।
এই ভাবেতে চলতে গিয়ে পড়লে খসে উত্তরীয়,
সাপের ঝাঁপি নামিয়ে রেখে ক্ষনেক তুমি জিড়িয়ে নিও।
যে শোধ জীবনের
সাদ্দাম মোহাম্মদ
গড়তে গেলে ভেঙে যায়
লড়তে গেলে যাই হেরে,
একটা মানুষ একজীবনে
কতটা উঠতে পারি পেরে!
সবার থাকে অনেক চাওয়া
আমার খুবই কম ছিলো,
কম থাকাতেই হয়তো জীবন
এমন করে শোধ নিলো...