তোমায় পড়ে মনে বাবা তোমায় পড়ে মনে
জাকির হোসেন কামাল
বাবা তুমি খুঁজতে যাকে অফিস থেকে ফিরেই,
দিনে রাতে ছিল তোমার স্বপন যাকে ঘিরেই,
তার কথা কি এখন তুমি ভাবো?
তার কথা কি তোমার এখন একটু মনে পড়ে,
তাকে ছাড়া দিব্যি তুমি থাকো কেমন করে?
একদিনও না দেখলে যাকে পাগল হয়ে যেতে,
যার জন্যে থাকতে তুমি সুখের দোলায় মেতে,
তার কথা কি এখন তুমি ভাবো?
তার কথা কি এখন তোমার মনে পড়ে বাবা,
এখন তোমার বুকের ভেতর আর জ্বলেনা লাভা?
জানো বাবা, মেঘরা যখন আকাশ কালো করে,
একলা আমার তোমায় তখন ভীষণ মনে পড়ে।
এমন দিনে খুব শোনাতে দৈত্য দানোর কথা,
তোমার মুখে পড়তো ঝরে অপার সরলতা।
এখন ভয়ে কাঁপি আমি মেঘেরও গর্জনে,
তোমায় পড়ে মনে বাবা তোমায় পড়ে মনে।
একটা শাড়ি প্রথম তুমি কিনে দিয়েছিলে,
পড়িয়ে দিলে সেই শাড়িটা মা ও তুমি মিলে।
জানো বাবা, সেই শাড়িটা যায় না পড়া মোটেই,
স্মৃতির বিষাদ লেগে থাকে আমার বুকে ঠোঁটেই।
তোমায় ছাড়া এই পৃথিবীর সবই লাগে ফাঁকা,
কেবল মনে হচ্ছে আমার, বৃথাই বেঁচে থাকা।
জানো বাবা, ঝিঁ ঝিঁর ডাকে সন্ধ্যা যখন নামে,
তোমার স্মৃতি কড়া নাড়ে আমার বুকের খামে।
মনে পড়ে গুজে দিতে খোঁপায় গোলাপ দু’টি,
কেমন করে ভুলবো তোমার আদর ও খুনসুটি।
এসব ভেবে ইচ্ছে করে ঘর ছেড়ে যাই বনে,
তোমায় পড়ে মনে বাবা তোমায় পড়ে মনে।
ছেঁড়া ভালোবাসা
মাহতাব উদ্দিন
গহীন আঁধারে ঢেকে গেছে স্বপ্নের ধরণী
শান্ত পিলসুজে মিটমিট করে জ্বলে জ্ঞানের লণ্ঠন
ঘোর ঠেলে আলোকচ্ছটার ব্যর্থ আগোয়ান
মানব-পশুর হিংস্র ঝড়ে পরিশেষে নিভে যায়।
দানবীয় ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে উবে যায় হাড্ডিসার মনুষ্যত্ব
সব হারিয়ে ভাগ্যেরা হালে দুর্গত অঞ্চলের বাসিন্দা
মুমূর্ষু প্রাণ বাঁচাতে দুর্লভ ত্রাণের খুঁজে কায়ক্লেশে মানবতা
চরণে শিকল-পরা রোদ পঙ্কিল দুঃখকে শুকাতে আসে না।
বাঘের কবল থেকে বেঁচে গিয়ে অসহায় হরিণীরা-
নামধারী কুলীনের পাশবিক অভিলাষে বন্দি
উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে সহসা পতিত যেন
ছেঁড়া ভালোবাসা শুধু হাতছানি দেয় অবলারে।
ক্ষরণ
মজনু মিয়া
তুমি কি জান, কতটা ক্ষত হলে হৃদয়ে রক্ত ঝরে?
সবুজ পাতা ঝরে পড়ে যায়, দুঃখ বেদনায়?
আকাশের তারা জ্বলসে যায় এক পলকের মধ্যে?
থরথর করে কাঁপতে থাকে, পায়ের তলার মাটি
দাঁড়াবার শক্তি হারা হয় দেহ?
মন হয় নিরানন্দ, চুপচাপ বসে বসে কান্না হয় সঙ্গী?
দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে, আর থামতেই চায় না?
এসো কাছে দেখো, হৃদয়ে কান পেতে শোনো,
কেমন ক্ষরণ হচ্ছে সেখানে!
পুরোটাই তোমার কারণে, তুমি আমার থেকে যেই
হারালে, তারপর থেকে আর ক্ষরণ বন্ধ হয় নাই!
ফিরে যেতে চাই
জাহিদ আজিম
এই শহরটা জুড়ে শুধু’ই পোড়া মাটির ঘ্রাণ
কঠিন চিত্তে কোথায়ও এক রতি নেই প্রাণ।
রঙে ছাওয়া দেখতে ভীষণ, সবই যেন মেকি
কাগজ-ফুলের বাগানটাতেই মধুর স্বপ্ন আঁকি।
বড্ড নেশায় শূন্যে ওড়াই সুখের আতসবাজি
ঝাপসা চোখে তবুও নীল জোনাকিই খুঁজি।
প্রাচীর ঘেরা জীবন এখন সুখ শিকলে বাঁধা
ক্ষণে ক্ষণেই মনটায় ভাসে দুর্বোধ্য সব ধাঁধা।
কোন পথেতে আবার যাব সবুজ শ্যামল গায়
প্রাণ ভরপুর প্রকৃতি হেথা রয়েছে অপেক্ষায়।
অকৃত্রিম রুপ, স্নিগ্ধ মায়া আপন করে পাবো
সব জড়িয়ে বুকে আবার মাটির মানুষ হবো।
এর নাম ভালোবাসা
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
গভীর রাত কেউ জেগে নেই-
ডাহুক কালিম বন্দিখাঁচায় পায়চারী করছে।
জেগে আছি আমি..
সুচিন্তিত বন্দনা, শ্বাস প্রশ্বাসে
ঘনঘন উঠানামা করে।
নাভিশ্বাস ওঠে শিরা উপশিরায়।
এর নাম ভালোবাসা। রাত জেগে তাঁর
একান্ত প্রিয়ভাজন হওয়া যায়।
পৌঁছা যায় কাছাকাছি।
এবং তুমি
রাসেদুল হাসান রাসেল
কোথায় এখন-
আষাঢ়ের কদম,
কৃষ্ণচূড়ার ফুল,
স্বর্ণলতার মালা আর
শ্রাবণের জলে মাতামাতি,
সন্ধ্যাকালের কুপিবাতির নিভু নিভু আলো।
কোথায় আছো তুমি?
তোমার লাল, নীল আর সরষে হলুদ মাখা স্বপ্ন।
খুনসুটির প্রণয়,
এবং তুমি।
শোকের হাসি
রাশেদ বিন শফিক
দিনলিপির পৃষ্ঠায় সুখস্মৃতি নেই
বেদনার সমবেত মজলিশ!
কষ্টের নদীতে সাঁতারকাটা নিত্যকার রুটিন।
আমার আর গোপনীয় কিছু নেই
বেদনার বৈঠকে সব আলোচ্য বিষয়,
আমাকে নিয়ে নগ্ন সংলাপ সর্বত্র!
এ আমি যেন খেলবার পুতুল।
ধর্ষকের স্রষ্টারাই আমাকে ধর্ষিতা ডাকে,
ধর্ষকের শাস্তির আওয়াজ কণ্ঠ তুলে।
আমার আর কান্না আসে না একটুও,
বরঞ্চ অট্টহাসিতে মেতে উঠি!
জানি না সুখে না পরম শোকে।