পদাবলি

 





তোমার নাম চন্দ্রবিন্দু

মাসুদ পারভেজ


তোমার নাম চন্দ্রবিন্দু

শুধু এতটুকুই আমি জানি,

আর কোন নাম আছে কিনা, তুমি কি কর, কি তোমার পরিচয় কিছুই জানি না;

কবে থেকে আমার ফেসবুক বন্ধু হয়ে আছো তাও জানি না ।

একদিন তুমি মেসেঞ্জারে লিখে পাঠালে- আট নাম্বার রোডে কি করেন, টং দোকানের চা ভালো লাগে?

সেই থেকে শুরু- আট নাম্বার রোড আর টং দোকান।

দিন, সপ্তাহ মাস এভাবে এক বছর।

কখনোই তোমাকে আমি দেখিনি, অথচ প্রতিদিন তুমি আমাকে দেখেছ।

তোমার চোখের গভীরে কেমন স্বপ্ন লুকোচুরি খেলে

চুলের সাথে গভীর আঁধারের সখ্যতা কেমন

রক্তকমলের মত তোমার ঠোঁটে কেমন রং ছড়ায়

কিংবা তোমার চলার পথে বাতাস কত উতলা থাকে আমি কিছু দেখেনি,

শুধু তুমি জানিয়েছিলে-

তুমি নাকি থ্রি-পিছ তার উপর হিজাব আর রোদ চশমা লাগাও।

তোমাকে একবার চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম

তুমি বলেছিলে কফিই তোমার পছন্দ,

তোমাদের অভিজাত কফি হাউসগুলো আমাকে দেখে মিটমিটিয়ে হাসে।

তবুও অনেক সাহস নিয়ে তোমাকে বলেই ফেললাম চলো কফি খাবে।

তুমি জানালে আমার চাকরি-বাকরি না হলে কফি খাবে না।

তারপর আর কখনোই তোমাকে আমি পাইনি।


দু’বছর হল আমার চাকরির বয়স।

অনেক কিছুই বদলে গেছে এরই মাঝে

আট নাম্বার রোডে নতুন অনেক বিল্ডিং পাশে আরো নতুন দোকান,

শুধু বদলায়নি আমার আট নাম্বার রোডে আসা যাওয়া আর টং দোকানটা।

দোকানি করিম চাচা মারা গেছে ছ’মাস হল এখন তার ছেলে বসে, মানিক তার নাম, খুব মিশুক ছেলেটা; আমি নাকি তার বাপের আমলের কাস্টমার।

আট নাম্বার রোডে হিজাব পরে রোদ চশমা চোখে অনেকেই হেঁটে যায়, আমি জানি না এখানে কোনটা তুমি চন্দ্রবিন্দু ?

আমি জানি না, এখনো তুমি আমাকে দেখো কিনা আমার অগোচরে,

এখনো আমার পিংক রংয়ের শার্ট তোমার বিরক্ত লাগে কিনা।

এখনো তোমার জানালা ছুঁয়ে রোদ আমার বোকামি হাসি ছড়ায় কিনা।

এখনো তুমি আমার নিরর্থক অপেক্ষার কারণ খোঁজ কিনা,

আমি জানি না তুমি কেমন আছো!


আর মাত্র বছর কয়েক পরে এখানে একটা কফি শপ দেবো-

তার নাম হবে ‘শুধু চন্দ্রবিন্দু’।




মধ্যবিত্ত-২

সাগর আহমেদ 


সুখের সন্ধ্যানে একজোড়া চোখের 

সংষ্কার চলছে অপারেশন থিয়েটারে,

হাতের মুঠোয় পোরে কাগজের জীবন 

প্রতিনিয়ত ছোটে চলি বিস্তীর্ণ শহরে।


নতুন ভোরের আশায় রাত জেগে জেগে 

গল্প সাঁজাই নিভন্ত জোনাকির আলোয়,

ক্ষুধার ক্রোধে অন্তহীন হাঁটছি তপ্ত রোদে

অবিরাম চিত্তে নিত্য করে সহস্র কল্পনা।


দারিদ্র্যের রঙিন ক্যালেন্ডারে মধ্যবিত্তরা

সুখের ক্ষণ গুনে মগজের হিসেবমেশিনে,

কংক্রিটের তপ্ত পিচে রক্তগুলো ঘামের

ফোটা হয়ে মিশ্রিত হয় নগরের ধুলিকণায়।


তবুও চলে স্বপ্নবোনা থেমে নেই প্রহর 

রিফু করা বুক পকেটে জমা চকচকে নোট

প্যাডেলের জোড়ে ছেলে বিদ্যাসাগর হবে

বাবার স্বপ্ন ধুলিজমে ক্রমশ হয় নিশ্চিহ্ন।



নদীরা এমন কেন?

রাকিবুল হাসান রাকিব 


নদীরা এমন কেন? 

যেথায় যায়; মিশে যায়। 

কোথাও কাঁদামাটি; 

কোথাও বেলেমাটি;

কোথাও এটেল মাটি; 

সবখানে মিশে যায়। 

সাগরে গেলে সাগরের সাথে 

গঙ্গায় গেলে গঙ্গার সাথে 

যেখানে নদীর সঙ্গে; 

কালো, সাদা, নীল পানি আছে; 

সেখানে তাদের সনে মিশে।

কোথাও উঁচু আর ঢালু-

তবুও নদী চলে যায়।

কভু প্রবাহমান গতি হারালে; 

শেওলা জন্মায় তার বুকে-

তবুও নদী চলে। 

কখনো জলপ্রপাত হয়ে;

পাহাড়ের সাথে মিশে-

উপর থেকে ঝরে পড়ে।

কেউ নদী কিনারে এলে;

যে বর্ণ হোক সে,

নদী তার রূপ ধারণ করে।

নদীরা এমন কেন? 

যেথায় বিরাজ করে;

সেথায় যায়, মিশে।



অভিনয়ের হাসি

জোবায়ের জুবেল 


আমার ভেতরে বহমান এক মহাসমুদ্র; অবারিত ¯্রােতধারা প্রবাহিত আঁখিযুগলে। 

দু ইঞ্চি বুকের ভেতর গর্জে উঠে অগ্ন্যাশয়-

পুড়তে থাকি; কেউ দেখে না।


কষ্ট পাহাড়ের চূড়াটা ব্যাকরণে অনুপস্থিত; শুধু যোগ হয় বিয়োগ নেই।

পাঁচ ফুট শরীরে সবকিছু লালিত, ক্ষয় ধরেছে যন্ত্রাংশে; বাহিরের পৃথিবী দেখে অভিনয়ের হাসি।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট