পদাবলি : ০২

 



একটি জলের ছবি 

লুনা রাহনুমা


সারাদিন বাড়িতেই থাকছে স্যাম

কোরোনার কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া  

কেউ বাড়ির বাইরে যায় না আজকাল।  


এখন শীতকাল বলে 

ঘরের ভেতর হিটিং চলছে। 

বাইরে শীতের বিলেতি বৃষ্টি 

শুরু হয়েছে সকাল থেকে। 

 

রেডিওটরের গরম আর বাইরের ঠান্ডায় 

বেডরুমে বড় জানালার কাঁচে

কুয়াশার মতন মেঘ জমে ঘন হয়ে আছে।


স্যাম ওর ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে 

জানালায় ছবি আঁকছে খুব মন দিয়ে। 

 

ছবিতে একটি সাত আট বছরের ছেলে 

একটি নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে,  

নদীতে একটি নৌকা ভাসছে, 

নৌকার ছৈয়ের ভেতর থেকে 

মুখ বাড়িয়ে আছে একজন মহিলা- 

ছবির পাশে স্যাম লিখলো, মাই মম।

ছবির আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ 

ঠিক যেমন স্যামদের এলাকাতে বৃষ্টি পড়ছে এখন।


জানালার ঠান্ডা কাঁচে নাক লাগিয়ে 

স্যাম বাইরের রাস্তার দিকে তাকায়

একটি ছেলে বাবার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে 

সবুজ রেইনকোট পড়ে। 

ছেলেটিকে খুব আনন্দিত লাগে স্যামের চোখে।


ছবিতে স্যাম নৌকার উপর মায়ের পাশে 

আরেকটি মুখ আঁকলো এবার।  

মুখটির পাশে লিখলো, মাই ড্যাড। 

মনে মনে বললো, আই মিস ইউ ড্যাড।


এমন সময় পেছন থেকে ডাক আসে: 

- স্যাম, খেতে আসো। 

- আসছি মম। 


যাবার আগে স্যাম এতক্ষন ধরে আঁকা 

বাষ্পের ছবিটির দিকে তাকায়।  

তারপর ছবির দ্বিতীয় মুখটিকে মুছে ফেললো 

কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলে। 


স্যাম জানে, 

বাবা এখন ওদের থেকে আলাদা থাকে। 

স্যামের মতোই বাবার এখন আরেকটি 

ছেলে আছে রাস্তার ঐ ছেলেটির মতো 

সেই ছেলেটি এখন স্যামের বাবার হাত ধরে হাঁটে। 



রান্নাঘরে মায়ের সাথে স্যামের টুকুর টাকুর 

গল্পের আওয়াজ, হাসি আনন্দে ভরে গিয়েছে ঘরটা।  


বেডরুমে জানালার কাঁচে কুয়াশার মতো ছবিটিতে 

স্যামের বাবা বৃষ্টির জল হয়ে গড়িয়ে পড়ছে।

ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে স্যামের মনে 

শৈশবের ভুলে যাওয়া স্মৃতির বিস্মৃতিতে।




আমাদের একজন হারকিউলিসের প্রয়োজন 

রাতিক হাসান রাজীব 


একজন হারকিউলিসের খুব প্রয়োজন এ দেশে-

ঘুম থেকে উঠে পত্রিকায় চোখ বুলাতে গেলে ধর্ষণের খবর!

এখানে ধর্ষণ, ওখানে ধর্ষণ! 

এ যেন প্রতিযোগিতার মাঠ,

বিচার- সে তো সোনার হরিণ,

জজ সাহেবের কলমে ধরেছে জং,

আমাদের একজন হারকিউলিসের খুব প্রয়োজন।


শিশু বলো আর যুবতী বলো 

ধর্ষিতা হচ্ছে বৃদ্ধাও!

কখনো দল বেঁধে, কখনো একা 

ধর্ষণ করছে রোজ শুয়োরেরদল,

অথচ রাষ্ট্র আমাদের নিরব দর্শক,

আমাদের একজন হারকিউলিসের খুব প্রয়োজন।


বাতাসে ভাসছে শত শত আর্তনাদ,

নিরাপত্তাহীনতায় আমার বোন, তোমার বোন

রাস্তায় বের হলে শিয়ালের ভয়,

আমাদের কেবল মোমবাতি হাতে দাঁড়ানো দায়,

আমাদের একজন হারকিউলিসের খুব প্রয়োজন।


জ্যোৎস্না ভরা রাতে তুমি আসমানী

মিসির হাছনাইন 


কেন? জানি না! আমি তোমার কতটুকু চেনা?

হেমন্তের শিশির ভেজা জলে ভোরের রোদ্দূর 

নকশিকাঁথায় মুড়ানো পায়ে নূপুরের কেমন তাল..!

আমি তোমার কতটুকু জানি?


কেমন করে হয়ে গেছে রাতটা এখন দিন

পানির তলায় রাজতুমারী জিনিয়াস মীন

কোন শ্মশানের ঘাটে ভীড়ে ভীনদেশী নাও,

ভুলতে গেলে কেমন লাগে? কেমনে ভুলে যাও ?

জ্যোৎস্না ভরা রাতে তুমি আসমানী...


যদি ফিরে আসে বার বার ফেলা আসা দিনগুলো

তোমার চোখে পৃথিবীর রোদ্দুর, তুমি কত সুন্দর..! 

মাঘের খড় পোড়া আগুনে কুকুরের ওম

তুমি ঘুমিয়ে গেলে আমি দেখি তোমার পায়ের তাল..!!

রাত জাগা ভোরের রোদ্দুর, তোমার ছায়া...

আমি তোমার কতটুকু জানি?




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট