দূরত্ববিষাদ-২
আরিফুর রহমান
দু’টো ছায়ার মাঝে দূরত্ব বাড়তেই
অন্ধ হয়ে গেল আগুন পোহানোর দিনটি!
অথচ সে-ই থেকে
চোখে চোখে লেখা হচ্ছিল পঙ্ক্তিমালাÑ
‘এই বিকেলটা এমনই আলোয় থাক
মনের উঠোনজুড়ে’
‘সন্ধ্যে নামুক অন্য কোনো গ্রহে,
অন্যখানে যাক উড়ে
চোখ গেলÑপাপিয়ার দল’
‘ওম ছড়াই চলো হিমে; প্রেমে ও দ্রোহে!’
নিয়রে ভিজতে ভিজতে
পা দুটোয় জমে গেছে না চলবার ছল।
এখন, তোমার দেওয়া
অনাকাক্সিক্ষত এই ‘দূরত্ব-বিষাদ-রঙ’
কীভাবে মুছে ফেলব, বলতে পারো?
প্রভাত ফেরিতে যাব
মাহতাব উদ্দিন
প্রভাত ফেরিতে যাব আমি,
আমাকে ডেকো না, মাগো।
গগনবিদারী ধ্বনি আজ উচ্চকিত হবে!
প্রতিবাদ-প্রতিরোধে মনের অগ্নিকে-
প্রজ্বলিত করে আকাশে ছড়াব।
সালাম জব্বার, বরকতের রক্ত, শকুনেরা
যেখানে ঝড়িয়েছিল, সেখানে মিছিল হবে,
দিতে হবে তাদের ফিরিয়ে। ঘুমাতে পারি না
আমি, বারবার ডাকে অসহায় আত্মাগুলো।
মনের অস্ফুট বেদনারে কী করে বোঝাই?
সবুজপাতায় মোড়ানো একগুচ্ছ লাল গোলাপ,
তোমাদের দেবো বলে কতকাল হলো!
মনের গহীনে যতনে রেখেছি।
হে বিধাতা, পাশে থেকো, ওসব জীবন্মৃতদের।
শিরোনামহীন
নুরুল ইসলাম বাবুল
দিশেহারা হয়ে গত বিকেলের শোকে
ঝিঁঝিরা ছেড়েছে তাদের মুখের গান
আমাদের ঘুম দিয়েছি ঝিঁঝির চোখে
আঁধার এনেছে নীরবতা শুনসান-
এমন মাতাল মধ্য রাতের ডাকে
আমরা ভুলেছি বিগত সকল রাত
একটা দোয়েল ঘুলঘুলিটার ফাঁকে
ছড়িয়ে পালক জানায় সুসংবাদ।
তখন শীতের শিশিরেরা থরে থরে
গলে গলে যায় ফাগুন দিনের ছলে
বুকের পকেট উষ্ণতা দিয়ে ভরে
আরাম আরাম হৃদয় আকাশ বলে।
একুশ
বনশ্রী বডুয়া
একুশ এলেই মিছিল আসে
আসে রক্তধারা,
একুশ এলেই বর্ণরা সব
হয় যে পাগলপারা।
একুশ এলেই কান্না আসে
আসে মাতৃভাষা।
একুশ এলেই কবিতারা সব
পায় যে ফিরে আশা।
একুশ এলেই সূর্যোদয় আসে,
আসে পুষ্পমাল্য হাতে,
একুশ এলেই আসাদ আসে
রাজপথ ভাসে রক্তে।
স্বাধীনতা তোমাকে জানাই ধিক্কার
জোবায়ের সরকার
স্বাধীনতা তবে কি তুমি ভুলে গেছো?
ভুলে গেছো মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য,
ভুলে গেছো আমার ধর্ষিতা মা-বোনের আর্তনাদ,
মনে কি নেই সেই রক্তাক্ত সময়, গণহাত্যার রাত?
চেয়ে দ্যাখো-
পুরনো শকুনেরা আজো হাড্ডি চাবায় অসহায়দের,
স্বাধীনতা তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে-
আমার মায়ের শরীর থেকে ঝরেছে রক্তের সাগর, কান্নার সাগর।
অথচ আজও সে শকুনদের নির্মম হাতে সপিত-
আমার মায়ের বুকের উপকূল।
স্বাধীনতা তোমাকে জানাই ধিক্কার
স্বাধীনতা তুমি খাঁচায় বন্দি,
মোহগ্রস্ত তুমি বিত্তবানের অর্থে,
ক্ষমতাবানদের ননীর পুতুল তুমি,
তোমাকে জানাই ধিক্কার।
স্বাধীনতা তুমি মুজিবদের মরণফাঁদ,
পা-চাটাদের বাঁচবার কৌশল,
তোমাকে জানাই ধিক্কার।
নিজভূমে নির্বাসিত
মিশির হাবিব
খুন করে পার পেয়ে যায় খুনি,
প্রকাশ্য রৌদ্রালোকে জখম করে ছাড় পেয়ে যায় ঘাতক;
আর কত রক্ত বইলে বলা হবে রক্তবন্যা!
আর কত ধর্ষিতার কবর খোড়া হলে বলা হবে ধর্ষিত হচ্ছে প্রাণের বাংলা!
একদিন সোনার বাংলা শ্মশাণ হবে।
আবার একটি যুদ্ধ চাই
এ যুদ্ধ ধর্ষক বনাম ধর্ষিতা
ঘাতক বনাম ঘৃত।
বাঘিনীরা জেগে ওঠ,
কবর ফুঁড়ে বেরিয়ে আয়
শকুনের ঠোঁটে খুবলে ছিঁড়ে খাই চল পিশাচের হৃদপি-।
মহামান্য প্রেসিডেন্ট, হে রাষ্ট্র!
এ আমার রক্তার্জিত কীসের স্বাধীনতা
যেখানে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকাই মহাশঙ্কা!