একটি ট্রেন
লাভলী ইসলাম
চলন্ত ট্রেনের বগী গুলো ছুটে চলে
হুইসেল দিয়ে আপন মনে ধাবমান গন্তব্যের পথে
চলতে পথে কোথাও থেমে যায় ক্ষনিক স্টেশনের উঠোনে
কাউকে বিদায় দিয়ে নতুন কাউকে হৃদয়ের ঘরে বসতি দিয়ে ফের ছুটে চলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ।
রেললাইনের লোহার সংঘর্ষে এ পথ সেপথ এ শহর সে শহর করে করে দিনের কর্মক্লান্ত দেহটাকে পরিত্যক্ত করে ফেলে রাখে স্টেশনের অচল কোন জং ধরা লাইনের পরিত্যক্ত লৌহদানবের উপর ।
হয়ত নতুন ভোরে নতুন কোন রেললাইনের পথ ধরে চলবে ট্রেনটি নিজের দেহটাকে টেনে হেঁছড়ে ।
আবার রাত আসবে আবার হইত হবে ভোর
এত এত প্রয়োজন তার করতে পারাপার
হায় ট্রেনটা অচল হলে কখন কোনদিন ও কেউ নেয় না আর তার খবর !!
একুশে ফেব্রুয়ারি
সোহেল রানা
‘ভাইয়ের বুকে লেগেছে বুলেট’......
তাজা রক্ত! তাজা রক্তে-ভেজা-বুক...!
শত-সহ¯্র প্রাণের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত, রক্ত-ভেজা-মুখ!
যেন গোধূলির লালিমামাখা সূর্যের নির্মলতর রূপ।
প্রিয়সীর সজলচক্ষু আর বোনের চোখে অগ্নিশিখা --!
শান্ত সাগরের বুকে রক্ত¯্রােতে দাঁড়িয়ে মা!
পাহাড়ের বুকে শূন্যতায় খাঁ-খাঁ হৃদয়ে বাবা!
সাগরের বুক থেকে আর পাহাড়ের হৃদয়
ঝাঁঝরা করে কেঁড়ে নিয়েছে যে দানবে...
আকাশ গহীন অন্ধকারের অতলে,
নক্ষত্র শোকে বিবর্ণ আলোকে -- সেই আলোকে
মোমবাতির ঝড়োকান্না এলোমেলো-এবড়োথেবড়ো শিখায় জ্বলছে --
শত-সহস্র জনতা হয়েছে জড়, ধরণী পরিব্যাপ্ত;
যতোরকমের বাগানের ফুল হাতে নিয়ে, অপেক্ষার প্রহরে --
‘বক্ষপিঞ্জর’ যেন চন্দনকাঠের চিতায় দাউ দাউ জ¦লছে...!
সেই আগুন ঢেলে দেবে! কখন রাত্রির মধ্যপ্রহর অতিক্রম করবে
সেই আগুন ঢেলে দেবে!
ভোর;
আকাশে রক্তের গন্ধ!
ধূসর ডানার চিল এলোমেলো, মাতালের মতো!
বাতাসে করুণ স্পন্দন ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত --
মা আর বাবা হারিয়েছে বুকের ধন!
ডপ্রয়সী ভালবাসার জন!
ভ্রাতৃ, ভ্রাতা! ভ্রাতা, সহোদর!
স্বজন হারিয়েছে আপনজন!
ভাষার জন্য যাঁরা দিয়েছেন জীবন!
প্রেয়সী, শীতে-ভেজা কানাকোয়ার চোখে-
যেমন শীতের রাতে বেতঝোপের শীষে ডুবায়
আটকা-পড়া কানাকোয়া রাতভর ছোটাছুটি
করতে-করতে-করতে সকালে নির্জীব, শক্তিহীন;
জীবন আছে তবু প্রাণ নেই!
শুধু ‘সজলচক্ষু’ স্থিরচিত্তে দাঁড়িয়ে- পলক পড়ছেনা সেই চোখে;
ভ্রাতৃ দাঁড়িয়ে আছে এবড়োথেবড়ো চুলে; তার
চোখের লেলিহান অগ্নিশিখায় ধুলো বাষ্পের ন্যায় উড়ছে...
ভাইয়ের বুকে লেগেছে বুলেট!
ঢেলেছে তাজা রক্ত! কেঁড়ে নিয়েছে প্রাণ!
ভাইয়ের বুকের বিদ্ধ বুলেটে, সহোদরের হৃদয় খান খান...!
কপালে কাফনের কাপড় বাঁধা- রক্তভা!
বুকে শোকের চিহৃ!
বাঙালি নদী
জহির খান
তোর মায়ায় জড়িয়ে জাতি-বর্ণ চিহ্নিত প্রেম
আমার আজন্মকাল
মায়াময় তোর দেহে উঠে আসে
পশ্চিমাঞ্চলের ¯্রােত ও সময়...
আহ্ কি মায়ায় এই শহরের অসংখ্য জীবন
উঁকি মারে ঢেউ খেলে জরায়ুর খুব গহিনে
তবু এমন সব জলের কথোপকথন
নামমাত্র মুল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার অতীত...
আর
ভুলবাল ঠকঠক করে কাটাই সময় সরকার
এখন বাঙালি নদী আমায় নিয়ে চলো
তোমার জলে কিংবা ডাঙায় বর্তমানে
যেখানে মৃত কোন গল্পের নায়ক নেই
আছে জেলে আর তাঁতিদের গভীর প্রেম
আর বুননকৌশল আবিষ্কার ইতিহাস...
হেলায় কাটাও দিন
জামান আহম্মেদ ইমন
কেমন করে যেতে চাইছো
কাগজের নৌকায় বাড়ি,
মাঝি বিনাই, বৈঠা বিনাই
পারবে কি দিতে পাড়ি।
আকাশে পানি মধ্যে মাটি
তার নিচে পানি,
ভাসমান এই পৃথিবীর মাঝে
পড়ছো না বাণী।
রূপের জালে বন্ধি হইয়া
চলছো ভুলের পাড়ায়,
আসিলে আজরাইল কারো জন্য
এক মূহুর্ত কি দাড়ায়।
জীবনের গন্ডি যাচ্ছো পেরিয়ে
হেলায় কাটাও দিন,
অসময়ে পাখি উড়াল দিলে
শোধ হবে নাকো ঋণ।
ঝরছে পাতা মন থেকে
মজনু মিয়া
শীতের ঝির্ণতা মনকে বেদনাবিধুর করে দেয়
ক্লান্ত অবসন্ন শরীর তীব্র ক্ষোভে ভারাক্রান্ত!
নিরলসভাবে গাছের পাতারা হলুদ হয়ে
ঝরে পড়ছে, কান্নার আকুতি লুকাতে ব্যার্থ মন।
একাকী পিরিতের চুলায় অনল জ¦লে উঠে
ধোঁয়া কুন্ডলী পাকাইয়া বিতৃষ্ণ করে দেয় মন;
যাপিত জীবনে পরিযায়ী পাখির মতো দৌড়
তবুও দুদ- সময় নেই, কাউকে বুঝিয়ে বলবার।
অবুঝ মন থেকে কত ক্ষণ কত দিন মাস বছর
ঝরে যায়, কেউ খবর রাখে না। শীতের করচা করি।