অযাচিত উইল !

 



অযাচিত উইল

ইয়াকুব শাহরিয়ার


এখানে এসেও কুসুমকে পাবো সেটা ভাবিনি। খেলার মাঠে কোনোদিন দেখবো তো দূরে থাক্, কোনোদিন খেলার কথাও ওর মুখে শুনিনি। যাও শুনেছি দুএকবার, তাও ফুটবলের কথা। ফুটবল আমার প্রিয় খেলা নয়। আমার প্রিয় ক্রিকেট। ক্রিকেট কেনো প্রিয় তার শত কারণ বলতে পাবরো কিন্তু ফুটবল কেনো প্রিয় নয় সেটা বলতে পারবো না। তবে ফুটবলও দেখি। খেলি না। আমার দিকে এগিয়ে এসেই নিজের  দেহের মতো নাদুস নুদুস প্রশ্ন। তুমি এখানে খেলা দেখছো? কবে এলে? কোন দলের সমর্থন করো? শেষ প্রশ্নের উত্তর দিলাম। বললাম বাংলাদেশ। তার বান্ধবি তানজিনা বললো- আমরা সবাই ইংল্যান্ডের সমর্থক।

ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ এ দলের খেলা চলছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আমাকে বললো- চলো কিছু খেয়ে আসি।

যাও, আমি যাবো না।

কেনো?

জানি না। খেলা দেখবো। খেলা দেখলে খাই না। একসাথে দুই কাজ করি না।

আমাদের সাথে বসবে?

হ্যাঁ, বসতে পারি। তবে মাত্রাতিরিক্ত কথা বলা যাবে না।

ওকে।

খেলা চলছে। কুসুম আমার কাছের চেয়ারে বসে খেলা দেখছে। তানজিনা আর রোজি গপাগপ পপকর্ন গিলছে। খেলায় বাংলাদেশের হয়ে ইমরুল কায়েছ সেঞ্চুরি করেছে। বাংলাদেশ খুব ভাল খেলেছে। আমার মন খুব ভাল। কুসুম আমার হাতে হাত রেখে খেলা দেখছে। আমি বার বার হাত সরিয়ে দিচ্ছি। আমার এলার্জি আছে। কুসুমকে ভালবাসি। কিন্তু এতো ঘেঁষাঘেঁষি পছন্দ করি না। বেকুব ছেলেরা এমন করে। মেয়েরাও বেকুব ছেলেদের তেমন পছন্দ করে না। কুসুম আমাকে চালাক করার চেষ্টা করে কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়। খেলা শেষে বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় তৃপ্তি  সবার মুখে। কুসুম, তানজিনা আর রোজির মনেও আনন্দ। জানি না কেনো। একসাথে সিএনজি করে আসার প্রস্তাব নাখোশ করায় আমার প্রতি রাগ নিয়ে বাসায় চলে যায়।



আজ দুপুর তেমন দুপুরের মতো না। বৃদ্ধ দুপুর। সন্ধ্যার মতো সাজ সেজেছে। রিকশার হুড তোলে চৌহাট্টায় এসেই সেন্ট্রাল ফার্মেসীর সামনে আমাকে ডাক দিলো।

আমু। এদিকে আসো।

কুসুম আমাকে আমু বলেই ডাকে। আহমেদ মুনসুর আমার নাম। দুই নামের প্রথম দুই বর্ণ নিয়ে তৈরি করেছে শর্ট নেম। আমু। এগিয়ে গেলাম।

এখানে কি করো?

রিকশা গুনি।

অ।

আমার আজব কথায় কুসুম অবাক হয় না। কারণ পাঁচ বছর থেকেই সে আমাকে চেনে। এসব কথাবার্তায় সে অব্যস্ত হয়ে গেছে।

রিকশা থেকে নামতে নামতে বললো- কয়টা গুনলে?

হিসাব রাখি নি। ড্রাইভারদের কষ্ট দেখি। মুখের দিকে তাকিয়ে কষ্ট দেখা অনেক কষ্টের। তাছাড়া এক সাথে দুই কাজ করা যায় না। তাই হিসাব বাদ দিয়েছি। মনমরা দিনেও তাদের ঘাম ঝড়ছে। তবু তারা কত শান্ত। বিনয়ী।

রিকশা ভাড়া দিচ্ছিল। নবাবরোড থেকে চৌহাট্টায় বিশ টাকা ভাড়া। বললাম আরো দশ টাকা দাও। দিয়ে দিলো। ও জানে রেস্টুরেন্টের ওয়েটারদের যে টাকা টিপ্স দেওয়ার কথা সেটা রিকশার ড্রাইভারকে দেওয়াই হচ্ছে আমার একটা শখ।

আমু, চলো কলেজে যাই।

না। আজকে শহিদ মিনারে যাবো।

কেনো?

শহিদ মিনারের সামনে এক পাগলী এক নতুন বাচ্ছার জন্ম দিয়েছে। তার বাবার নাম জানার চেষ্টা করছি। পত্রিকায় লিখবো।

কুসুম কিছুই বললো না। সামনে হাটতে হাটতে মালঞ্চের কাছে স্টেশনারীর দোকান থেকে একটি সবুজ রঙের কলম কিনে দিলো। বললো

লেখাটি এই কলম দিয়েই লিখো। আই এম প্রাউড অব ইউ।

আরেকটা রিকশা ডেকে চলে গেলো। হুড তুললো কি না খেয়াল করি নি। আমি শহিদ মিনারের দিকে হাটা শুরু করলাম।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট