বিষাদ
মহাজিস মন্ডল
বিস্তর বিষাদ মেখেছি দুই হাতে
এক একটা রাতের ওপারে রাত
দিনের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে দিন
অশ্বক্ষুরের শব্দেরা জমে যায় পাথরের মতো
আজকাল ছায়া দেখলেই পালাই
পায়ের ভারসাম্য রাখে না কোনও মাটি
শিকড়সহ উপড়ে আসে শুধুই
ডানাহীন মৃত্যুর যবনিকা
আশ্বিনে জলের টান
হাসান মাহমুদ
শরতের মাঝে ডুবে থাকে আশ্বিন। হঠাৎ করে দেখা যায় নদ-নদীতে জল থইথই
পানি নেই। জলপ্লাবনের রেশ নেই।
ভাটার টানে কমে যায় পানি। প্রকৃতির মাঝে শুকনো একটা রেশ কাজ করে।
আশ্বিনে দৃষ্টিজুড়ে পানিতে ভাসে
লাল শাদা শাপলা। হৃদয়ের প্রতিবিম্বেও ভেসে ওঠে যেন আশ্বিনের জল ফুরিয়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই
মেঘ ভিড় করে আকাশে। ঝমঝমিয়ে
বৃষ্টি পড়ে আশ্বিনে হঠাৎ করেই।
আশ্বিনের মুগ্ধতার রেশ ধরে পড়ন্ত বেলায় বেরুলে চোখে পড়ে শিউলি আর শাদা শাদা কাশফুল। শাদাটে আকাশ
আর শাদা কাশফুল যেন প্রণয়ের মেলবন্ধন নিয়ে খেলা করে। ভাদ্র আর আশ্বিনের মাঝেই শরতের লুকিয়ে থাকা।
ঋাদ্র শরতের পূর্ণতা আরম্ভ করে আর আশ্বিন এসে তাতে পূর্ণতা মেলে দেয়।
পরিপূর্ণ করে তুলে আশ্বিন শরতরানিকে।
আশ্বিন অপূর্ণা শরতকেও পূর্ণতার রূপ পরিয়ে দেয় সজ্জিত রূপে। ভাদ্রের সাথে
শরতের মেলবন্ধন হওয়ার আগেই
আশ্বিনের আগমন বিচ্ছিন্ন করে দিতে
তৎপর হয়ে ওঠে—আর ভাদ্রের স্বপ্নকে
নিজের করেই গড়ে তুলে আশ্বিন।
তবে আশ্বিনের সে মধুপূর্ণতা বেশিক্ষণ থাকে না। ক্ষণিকের আগমন। ক্ষণিক পরেই আশ্বিনের প্রস্থান। আশ্বিনের
প্রস্থান দ্রুত হলেও আশ্বিন শরতের সুরভিতে জড়িয়ে নেয় আপন মনে—
শিউলির শিশির ফোঁটা, শাদা শাদা মেঘ,
শান্ত শীতল সরোবর, নদী, কাশফুল,
আর ভাদ্রের তালপাকা উষ্ণতা সব মিলিয়ে শরতের অপরূপ শোভা আর প্রকৃতির রূপ সৌন্দর্য মনে সত্যি
অপার মুগ্ধতা আনে। গরমের তীব্রতা
আশ্বিনে কমে আসে। মাঝে মাঝে
প্রকৃতি আশ্বিনে বিপর্যস্তও হয়।
ভাদ্রমাসে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেই
সাথে আর্দ্রতাও বাড়ে। যার ফলে
সহনীয় হয়ে যায় তাপমাত্রা। তীব্র গরমের ভাব আশ্বিনে অনেকটা কমে আসে।
নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
মাটির সিক্ততাও কমে যায়। বর্ষার নিরন্তর বর্ষণের ধারা শরতে এসে আর তেমন
দেখা যায় না। চারদিক ক্রমেই শুকোতে থাকে। একদিকে নদ-নদীর পানি কমতে থাকে, বৃষ্টির পরিমাণও কমতে থাকে।
আকাশের শাদা শাদা মেঘ আর শরতের ডাক প্রকৃতিকে আনন্দের হিল্লোল
বইয়ে দেয়। আশ্বিনের এই অপূর্ব রূপকে
সবাই যার যার মতো করে উপভোগ করতে পারে। গোলাপ, বকুল, শিউলি, কামিনী, মল্লিকা, মাধবী ফুলের সৌরভে
মুখরিত থাকে প্রকৃতি। বাতাসে শীতের
স্পর্শ লাগে আশ্বিনের প্রভাতে।
বিষাদপক্ষ
বঙ্কিমকুমার বর্মন
এই যে তুমি বিষাদ রেখে গেলে যেন গাঢ় মেধাবী বন। হাঁ-হুতাশ সূর্যের দহন চিত্রত মনে । কিছুতেই হাসিনা যেন, খুঁজে খুঁজে মরি কোথায় পড়ে আছে ঘাসে তোমার নাকফুল । ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি উডড়ে চলে যায় কোন বনে তোমার অভাবে । শুনি একা একা শুকনো পাতার অক্ষম উড়ান । বসন্ত নেই গাছে , কিছু বুনোলতা মুছে দেয় বৃষ্টির ক্ষত । বিনিদ্র রাত্রির শেষে আলো পারাবার এই আশ্চর্য হৃদয় খোঁজে স্পর্শের কায়া। এখনো লেগে আছে আমার ঠোঁটে তোমার প্রতিভা ।
প্রত্যাবর্তনের গন্ধ
আহরাফ রবিন
যে দস্যি ছেলেটি লাটাই হাতে উড়ে গিয়েছিল আকাশে
আজ তার ফেরার পালা- আজ সে ফিরবে।
দিগন্তবিস্তৃত হলুদ সর্ষের মাঠ; মধুকরের অবাধ গুঞ্জন
যে সমস্ত মৌমাছিরা একদিন ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছিল
আজ তার ফিরছে গুন্ গুন্ শব্দে।
নদীর ধারে চালতা তলায় যে নৌকোটি বাঁধা ছিল,
আজ সেই নৌকোটি আর বাঁধা নেই; নদীতে ভাসছে।
সময়ের পরিমাপ
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
সময়ের হিসেব যোগ বিয়োগ গুণের অঙ্ক কষে পরিমাপ করাটা.. জ্ঞানীর
জ্ঞানের মানদন্ডে পড়ে না বরং বোকামী।
সময়ের কাজ সময়ে করে যাওয়া
ফাঁকির আশ্রয় অজুহাত দূরে ছুঁড়ে..
মনোবল সাহস একান্ত মন মননে..
সময়ের চুড়ান্ত ফলাফল। বৈ কিছু নয়।
শুদ্ধ ধ্যান-ধারণায় সামনে এগিয়ে যাওয়া
প্রকৃত জ্ঞানীর সোনালী অধ্যায়।
সময় বদল
সোহেল রানা
আমি যেদিন পৃথিবীর আলোয় চোখ খুললাম,
মায়ের জঠুর-ছিঁড়ে কান্না করছিলাম!
তার পরক্ষণেই ‘তাঁর, তাঁহাদের’ দৃষ্টির সিক্ততায়
আমি মুষ্টিবদ্ধ হাতে দৃঢ়প্রত্যয় আর সুখের হাসি হেসে
চোখ মুদে- সুখের বাগান রচনা করেছি!
যে সুখ আমার মায়ের শীতের শরীরে
ছড়িয়েছিল খুশির ফোয়ারা!
বাবার চোখেমুখে লেপ্টে এক-আকাশ উচ্ছ্বাস্!
এবং পরিবার-পরিজন সবাই সুখানুভূত ও সুখ আরোহীও;
তাঁদের দৃষ্টির উপশম আর হৃদয়স্থলে সমাদৃত আমি...
তারপর দিন গড়ালো, মাস, বছরও...
বছর থেকে বছরান্তে- আমি ছুটে বেড়িয়েছি
সেই সুখের উদ্যানে- পাখিডানা আকাশের পারে...
এবং আমার বাগানের আমি কলি হয়ে ফুটেছি!
কিন্তু মাস, বছর, দিনান্তে- কালের মহাপরিক্রমায়
সময়ের মেজাজে আসে বদল কিম্বা
অদৃষ্টের বিধানের ঘটন :
বাগানের সৌন্দর্যের পরিবর্তন!
এমনকি বাগান থেকেই ছিটকে পড়লো
বাগানের কলি!
মাটির জরায়ু-ছিঁড়া শীত!