বৃষ্টির পদাবলি - ০২


 


বৃষ্টির রেণু

মহাজিস মণ্ডল


বৃষ্টির অঝোর রেণু মেখে নিচ্ছি

প্রশস্ত দুই ডানার মধ্যে অবিরত

আজ কোথাও একটুও অন্ধকার লেগে নেই।


হৃদয়ের গহীনে তিরতিরে নৌকা

ভালবাসার প্রহরগুলো স্বপ্নময়

দিগন্তবিসারী ভাবনাসমূহ-

অ-আ-ক-খ-অক্ষরের বুকে ঝরে...



বর্ষা বন্দনা

শেখ একেএম জাকারিয়া


মেঘ দেখলেই মন আনন্দে নেচে আসে

আকাশ হয়ে যায় পুরোটাই বর্ষার কবিতা

এমন দিনে চোখের ওপরে সিকি সাইজ টিপ

দপ করে জ্বলে আর নেভে

গলায় পাতার মালা-হাতের বৃষ্টির চুড়ি

দাগ-দাগিয়ে যায় মনের মানচিত্রে

বাড়ির পাশেই কদমের আলতো শরীর বেয়ে

সতেজ ঘ্রাণের হাসি টুপটাপ নেমে আসে

ঐতিহ্যদের পুরোনো টিনের চালে

সবুজের এমন হাসিতে

প্রাণীকূল সুখে মাতোয়ারা

শাখায়-শাখায় পাখনা মেলে

নাচে গানে মাতাল দেখি প্রজাপতি রঙের পরীরা

জগতের এমন চোখধাঁধানো ঐশ্বর্য

কাগজে আর কতটা ওঠে আসে

ঝিলিমিলি মন  বর্ষা এলে

এভাবেই হারায় বর্ষা বন্দনায়



হোয়াইটবোর্ডে লিখে রাখি এক্স ইকুয়ালটু অর্পিতা

গাফফার মাহমুদ


ফিজিক্সের অর্পিতা তড়িৎ প্রত্যয়ে অনর্গল বলে যান বিনয়-গায়ত্রীর বাঙময় কথা সব

যাবতীয় সূত্রতথ্য মনে থাকে খুউব, সবে বলে প্রজ্ঞাবান ফিল্যসফার অর্পিতা গাইন

কলেজে সেইতো হাসে ওই ; বসে রোজ লাস্ট বেঞ্চে পড়াটা খুব তার দখলে!

তারাপদ মহাশয় সদাশয় প্রশ্ন করে যান ওকে রোজ ক্লাসের পড়াতে


আমরাও ভাবি বসে অনায়সে কী করে কবিতাটা দখলে যায় মেয়েটার...


কথা বলে খুব কম চাহনী তারায় খচিত; পড়াটাই সবচেয়ে বেশী প্রিয় তার

এখনও কথা-সূরে অদূরে বসে ভাবি বিপ্লবী মেয়েটা গায় গান সুরেলা গিটারে!


রঙতুলি ছোপছাপ বিমূর্ত ক্যানভাস আঁকে ওই মূর্তলা অনিন্দ্য ছেলেটা

সাদা কাগজ রেখাটান নিমিষেই ছবি হয় সহসা মনে ভাবে ওই চোখ

হাফটাইম ক্লাসে কথা হয় কতো যে থিয়োরেটিক্যাল ইনভার্টেট কমাময়


কতো কিছু হিসফিস তারাপদ বাবু সেঁজে হোয়াইটবোর্ডে লিখে রোজ ছেলেটা!




চলচ্চিত্র

গৌরব ঘোষ


আমাকে অক্সিজেন দেয় একটা ফার্ন,

আমার চোখের অন্ধকার 

মুছে দেয় অসংখ্য অট্টালিকা ।

ছুটন্ত পৃথিবী যেন এখানে নীরব ।

পশ্চাদ্ সঙ্গীত হীন

একবিংশ শতাব্দীর

নির্বাক চলচ্চিত্র যেন আমার দর্শণীয় ।



বাদলের ধারাপাত

অনন্ত পৃথ্বীরাজ 


বিরামহীন বৃষ্টির ক্যানভাস রচনা করতে 

কচুপাতার কাছে জলধার চাও?

পাবে না তুমি সেখানে জ্ঞাতিস্বর। জলের তলে

পড়ে আছে কত শত রং পেস্টাল, এ্যাক্রেলিক আরও নাম না জানা কত ডিজাইন!

তোমার জমিনে মেঘ নেই, বাদলের ধারাপাতের জন্য লিউনার্দোদা ভিঞ্চি, ভ্যানগগের সাথে 

মিলিয়ে নিও জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান।

তোমার কাছে আষাঢ় নেই, ধার করা শৈশব দিয়ে বৃষ্টি রচনা করতে চাও!

অথচ এই বর্ষায় অঝরে ঝরছে কান্নার সিনড্রোম।

দেখে যেও রাতপরীর দেশে চাঁদের আলো নিভে গেলে

ঘুমের বদলে কান্না নেমে আসে!




অন্য আষাঢ়

দিপংকর ইমন


আষাঢ় এসেছে আষাঢ়

বাদলের অঝোর ধারা,

পোয়াতি কদমের আগমনী,

কামার্ত পা-ুলিপি, 

চাতকের তৃষ্ণার্ত চোখের আল্লাদ। 


আষাঢ় এসেছে আষাঢ়

ফসলের ক্ষেত জলে ভরে আছে। 

দেনার দায়ে নিঃস্ব হয়েছে যে কৃষাণী 

কেউ কি দেখেছি,

একাকিত্ব হয়ে পরা তার চোখের ধারাপাত?



আষাঢ়

সোহেল রানা 


স্ফুট পুষ্পপাপড়ি-বৃষ্টিভেজা-সদ্য কদম।


রংবদল। 

সফেদ আকাশ। প্রতিবিম্ব-


কী দারুণ, স্নিগ্ধ-শান্ত-কোমল বাতাস! 

ফুল-পাখি-তৃণলতা- চুপচাপ 

দাঁড়িয়ে। 


নদী উথলে আকুল

যেন খই খেলছে!

 

জাহাজযাত্রীরা পারাপার-

দূরের কুয়াশারাও চুপচাপ!


যেখানে 

জনজীবন বিপর্যস্ত- পুড়ে-ধসে তামাটে!

জীবনে প্রাণ বিভীষিকাময়- 

এক অদ্ভুত আশ্চর্য ‘নিরুপায়’ 

প্রায়!

সেখানে এক মূহুর্তেই

সূর্যেকে হনুমানের মতো বগলদাবা করে 

সারা আকাশ আজ মেঘাচ্ছন্ন


স্বমহিমায় ভাস্বর : 

পুলকশয্যায়- আষাঢ়।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট