বৃষ্টির পদাবলি - ০১


 


আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু

সাজেদুর আবেদীন শান্ত 


একদিন কোথাও যাবো না,

একদিন সারাদিন তোর কথা ভাববো।

একদিন কোথাও যাবো না,

একদিন তোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।


একদিন খুব ভোরে তোর সাথে হাটবো,

একদিন মরে যাওয়ার সময় ঈশ্বরকে বলবো

হে ঈশ্বর! আরো কিছুদিন সঙ্গ পেতে চাই তার,

সেদিন হয়তো ঈশ্বর হাসবে,

দিবে না সময়, আকুতি যাবে বিফলে

একদিন মৃত্যু চলে আসবে এমন বৃষ্টিমুখর আষাঢ়ে

একদিন মৃত্যুকে সাথে নিয়ে ছেড়ে যাবো তোকে

কারণ আষাঢ়, তুই এবং মৃত্যু ভীষণ প্রিয় আমার।



নেই কোন দোটান

লাভলী ইসলাম 


নয়ন স্বপ্ন কাজল গলেছিল 

আষাঢ় ঝর ঝর ঝরেছিল

শ্রাবণ সন্ধ্যায় কিছু বলার ছিল 

রোদ্দুরে দুপুরে রুক্ষতা জ্বলেছিল 

বুকের খরতাপে তপ্ত জল ফুটেছিল 

কান্নার গোপন কক্ষে বরষা এসেছিল 

মেঘলা বিকেল কত অপেক্ষায় ছিল 

গাঙ্গচিল জলের বুকে উড়ছিলো 

অপেক্ষায় সমস্ত প্রহর কেটে গেল

এখন শূণ্য মন করেনা আনচান

লিখাহীন পাতা, নেই কোন দোটান ।



আমার কবিতারা

রাজীব হাসান


আমার কবিতারা আমাকে বড্ড বেশি জ্বালায় 

কখনো স্বপ্নের মাঝে নিজেকে ভাসায় ভেলায়

আবার কখনো বানায় উদাসীন

কখনো বা করে মনটা মলিন।

আমার কবিতারা আমাকে বড্ড বেশি ভাবায়

কখনো নিজেকে কখনো বা অন্যকে চায়

কখনো এককী থেকে নিজেকে

একাকীত্বের গহীনে হারায়।



আমাদের বটবৃক্ষ

মাসুদ পারভেজ


কখনো কখনো মনে হতো বাবার পরিচয়-

একজন পুরুষ, একজন শাসক।

তার কন্ঠনালী থেকে নির্গত শব্দধ্বনি যেন বজ্রপাত 

চোখের আক্ষিগোলকে খেলা করত জ্বলন্ত সূর্য 

তার পদধ্বনিতে বেজে উঠত যুদ্ধের দামামা।


ঘরের চৌকাঠ পেরোনোর বয়স হলো- 

পথে পথে দেখি বাবার পদচিহ্ন, আমরা নির্বিঘেœ হেঁটে যেতাম ।

পুকুর ভরা পানির জলতরঙ্গে বাবার রক্ত খেলা করত-

আমরা হাঁসের মতো এপার থেকে ওপারে সাঁতার কাটতাম।

তীব্র গরমে যখন একটু ছায়া খুঁজতাম- 

বাবা হাত প্রশস্ত করে বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত,

কনকনে শীতে উষ্ণতার চাদর হয়ে যেত।

গাঢ় অন্ধকারে বাবা ঝলঝলে চাঁদ হয়ে ঝুলে থাকত মাথার উপর ।

ফসলের মাঠে সবুজের গায়ে শিশিরবিন্দুর মতো বাবার ঘাম লেগে থাকত।

জীবনের প্রচ- খরায় বাবা মেঘ হয়ে যেত, আমরা আনন্দে ভিজতাম;

ক্লান্তির শরীরে ঝিরিঝিরি বাতাস হয়ে গায়ে লেগে থাকত।

আমাদের গায়ে কাদা লাগতো বলেই বাবা সাবান হয়ে যেত, 

পানি দিয়ে ঘষলেই সুগন্ধি ফেনা হয়ে ঝরে ঝরে পড়ত।

আমরা মসজিদভিটায় যেতাম না বলেই বাবা কবরস্থানে শুয়ে গেল

দিয়ে গেল দুরন্ত ঘোড়ার মতো চলার শক্তি।


আমরা ঘরের বাইরে এসেই জেনেছি বাবা একটি বটবৃক্ষ, 

আরেকটু দূরে গিয়ে দেখেছি বাবা একটি নীল আকাশ ।

আমি যদি এই মহাবিশ্বের বাইরে গিয়ে দেখতে পারতাম বাবা আরো কত্ত বিশাল হতে পারে!

সমস্ত বিশালতার বাইরে গিয়ে যদি দেখতে পারতাম তবে বুঝতাম- 

বাবার পরিচয় আর কত কী থাকতে পারে!




বৃষ্টির কোন দাগ নেই 

রাকিবুল হাসান রাকিব 


বৃষ্টির কোন দাগ নেই; এ-ই শহরে 

ধূসর রঙের আকাশে নীলাভ-সাদা। 

মেঘের কোন আনাগোনা নেই;

এখানে বৃষ্টির কোন দাগ নেই;

হাহাকার বনভূমি রৌদ্রময় দিনে-

রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি খেলা।। 

কোথাও ছায়া নেই, কোন চিহ্ন নেই;

কোথাও বৃষ্টির কোন দেখা নেই! 

চোখের জল শুকিয়ে সেই কবে- 

বৃষ্টির কোন দাগ নেই; এ-ই শহরে... 

কোন বৃষ্টির দাগ নেই;

শতজন্মা বয়সী বটবৃক্ষে

নেই কোন বৃষ্টির দাগ সে-ই পুরনো

দুই শতাব্দীর সেই কুটে ঘরে।




ভাদর মাসের পদাবলি

দ্বীপ সরকার


এই ভাদ্র মাসÑ এই রুপোলী বর্ষা ও গৃহস্থালী রোদ্দুর 

ধানের ঠোঁটে আটকে থাকা রৌদ্রের কিচিরমিচির 

এই সমস্ত ভ্রুকুটি ছেড়ে আমরা সবুজ হই চলো 

এই গাঢ় বৃষ্টির দুপুর এবং কাদামাটির রং থেকে 

আমাদের এই প্রতারক মন সবুজ হোক 

আমরা খাঁটি শ্যাওলা হই 

সরের মতো সবুজে সবুজে ভাসি,চলো


এই ভাদরের একটা ইতিহাস আছে 

হিজল তমালের অরণ্যেরা ভিন্ন ইশারায় ডাকে 

‘শ্রাবণের মতো করে না কেঁদে বরং কাশফুল হয়  

ব্যঙের মতো না ঘেঁঙ ঘেঁঙ করে বরং পিঠাপুলি হয়’


এই বিরুক্তিকর বর্ষা বরং কেটে যাক 

লেবাসে ফুটুক কলমি কদমের রোদ 

আমরাও পরিবর্তিত হইÑ 

মৃত্যুর চে একটু ভালো বরং অপমানিত হওয়া

বদলে নেই জৈবিক কালাকানুন

চোখের আরেক নাম দেই হরিৎ বনভূমি 

ভাদরের পদ্য আজ মিশে থাক মাস মাসান্তর 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট