শান্তি দিবসে শান্ত কথা...

 



 শান্তি দিবসে শান্ত কথা

ওবায়দুল মুন্সী


২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ৫৫/২৮২ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব শান্তি দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শান্তি সবার অধিকার’ ( জরমযঃ ঃড় চবধপব) শান্তির জন্যেই বিধাতা এই মহাবিশ্ব আর মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। ‘ইসলাম’ মানে ‘শান্তি’, সনাতনে ‘ওঁম শান্তি, বৌদ্ধের ‘অহিংসা নীতি, ইত্যাদি সব ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে শান্তি। ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই! সংঘাত শুধু ধর্মজীবী ও মানুষের মধ্যে। কিছু মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে আর কিছু মানুষ অশান্তি সৃষ্টি করে শান্তিময় পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলেন। তাই সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য মানসিক ‘শান্তি’ মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে সব মৌলিক বিষয়গুলো থাকে তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘শান্তি’। আমরা কতদিনই বা বাঁচি অথচ একটু সুখ বা শান্তির আশায় কতো চেনা অচেনা পথ পেরোতে সম্মুখিন হতে হয় নানান পরিস্থিতির। বিশ্ব তথ্যমতে  শান্তিপ্রিয় দেশগুলো হলো- পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, কানাডা, অষ্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, কানাডা, জাপান। আসলেই কী উল্লেখিত দেশসমূহে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের আক্রমণে  সারাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন। চিনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য এই ভাইরাস বিশ্বের অনেক উন্নত  দেশকে ল-ভ- করে দিয়ে গেছে। অনেকে নিজের দেশ ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে, অন্য মহাদেশে জীবিকার সন্ধানে ঘুরছে। এগুলো আমাদের পীড়িত করে। ৭৩ বছর পূর্বে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই  জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ৭৩ তম শান্তি দিবস পালিত হবে। । ১৯৪৫ সালে যে লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ! আন্তর্জাতিক সংকটকালে সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান যারা চায়, জাতিসংঘকে  তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের দ্বারা জাতিসংঘ ব্যবহার করে কুটনৈতিক নিবারক। জাতিসংঘ সহযোগিতা করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রায়ণে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘ যুদ্ধের নেপথ্য কারণ বা উৎসসমূহ নির্মূল করে এবং শান্তিকে সংরক্ষণ করার কৌশল বাস্তবায়ন করে। পাশাপাশি মানবিক সাহায্য, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন, জাতীয় অবকাঠামো মেরামত এবং পূর্ণগঠনে জাতিসংঘ সহযোগিতা করে এবং নির্মাণ করে শান্তির ছবি। 

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব শান্তি রক্ষার প্রয়াস জোরদার করে তোলা, বিরোধ সমুহের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তি এবং আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে বহু সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা। এইসব সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা কখনো ছিলো কার্যকর আবার কখনো বা অকার্যকর! বর্তমান জাতিসংঘকেক তাদের কাজের মাধ্যমে স্বীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। 

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের এক ঘোষণায় বলা হয়, স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত নীতিমালার প্রতি অশ্রদ্ধাই আর্ন্তজাতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে নিন্দা করা হয়েছে শ্রদ্ধাবোধ। 

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জাতিসংঘের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে ১৯৮০ সালে ‘সান জোম্বে কোষ্টারিকায়’ শান্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সেই সঙ্গে বার্ষিক উদ্বোধনের দিনকে আর্ন্তজাতিক শান্তি দিবস ঘোষণা। নিরন্ত্রীকরণ তৎপরতা, স্থল আইন নির্মূল অভিযান, বিভিন্ন দেশের সৈনিক, বেসামরিক পুলিশ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, মাইন পরিস্কারক, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক, বেসামরিক প্রশাসন, ও যোগাযোগ বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সমন্বিত শান্তি রক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপসহ শান্তি প্রসারে একটি নিরাপদ পৃথিবীর জন্য জাতিসংঘের কার্যক্রম বিশাল ও ব্যপক। সফলতা ও ব্যর্থতার স্বাক্ষী হচ্ছে দীর্ঘ ইতিহাস। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি দূষণ মুক্ত শান্তির পৃথিবী উপহার দিতে পারলে তবেই বিশ্ব শান্তি দিবস সার্থক হয়ে ওঠবে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সারা পৃথিবী হোক শান্তিময় ও সুখের আবাসস্থল, বিশ্ব শান্তি দিবসে এটাই কামনা রইলো।

হাছননগর, সুনামগঞ্জ।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট