পদাবলি

 




বসন্ত কাহিনী

নূর এ সিকতা 


লোকে বলে-

বসন্ত এলে ফুল ফোটে, 

সুবাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় আশে-পাশে;

পাখিরা গায়, ভ্রমর আসে, ফুলে ফুলে সাজে উদ্যান।


লোকে বলে তাতে কি?

মূর্খ পথিক তো জানে

বসন্ত কাহিনী।


বসন্ত এলে-

ঘর ছাড়া পথিকের ভাবনা বাড়ে

রোদে পুড়ে শ্যামল দেহ

পুকুর শুকিয়ে যায় 

বক পক্ষীর চিন্তা ধরে

কাঠ ফাঁটা রোদে শুকনো খাল-বিল। 


জল নেই-

তৃষ্ণার্ত কাকের কা কা ধ্বনির অস্থিরতা

বাড়ে, হাপিত্যেশ করে জন-মানব।

নৌকা উজান বেয়ে চলে না আর

মাঝিদের ঘাম ছুটে দর দর।


বসন্ত এলে-

শুকিয়ে যায় বুক

বৈশাখের আগমন মনে তুলে ভয়

চালা ঘর জরাজীর্ণ 

উড়ে যায় কোন সময়।

 

বসন্ত এলে- 

কোকিলের আনাগোনায়

কাকের ছেলে হারানোর ভয়।

ঘরে ঘরে জল বসন্ত 

ছেলে, বুড়ো যন্ত্রণায় অস্থির। 


বসন্ত এলে- 

ব্যথায় ককিয়ে ওঠে মন

ছেলে হারা মায়ের স্বকরুণ চিৎকারে।



সম্পর্কের কথা

মহাজিস মণ্ডল


সে এক সবুজপাতার ভিড় পেরিয়ে

হেঁটে চলেছি ধানশালিকের দেশে

নদী তার বুকের শব্দে গেঁথেছে গান

চারপাশে ছড়ানো নীল নির্জতার অক্ষর 

আর আমি আকাশের রোদ্দুরের আলোকে  

লিখে রাখছি যাবতীয় সম্পর্কের কথা

হৃদয়ের অনন্ত নক্ষত্রমালার গভীরে...



যান্ত্রিকতা

রুশো আরভি নয়ন


আমার কথার কম্পন হাওয়াতে ভেসে ভেসে এখানে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছে বহুকাল। ছুঁয়ে এসেছে নীল আকাশ, ছুঁয়ে এসেছে পৃথিবীর সীমান্ত, তবু তোমার তুলতুলে কান স্পর্শ করতে পারেনি কখনো।

তোমার কান স্পর্শ করছে ফেসবুক, টুইটারের নোটিফিকেশন আর তুমুল যান্ত্রিকতা। 

এই যে রোদপোড়া দুটো হাত দেখছো, এই হাত দুটো তোমার কোমল হাত ছুঁতে চেয়েছিলো বহুবার। নানান অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করেছে তোমার পাষাণ হৃদয়। আমার হাত ছুঁয়ে এসেছে সবুজ ঘাস আর ভেজা মৃত্তিকা, তিনশো পাতার বইটাও ছুঁয়ে এসেছে কয়েকশবার, তবু তোমার কোমল হাত স্পর্শ করতে পারেনি কখনো।

তোমার হাত স্পর্শ করেছে ল্যাপটপ, মোবাইলের আবরণ আর কঠোর যান্ত্রিকতা।  

তোমার বাম পাশের স্তনের ঠিক নিচে, মন নামক জায়গাটিও ছুঁতে চেয়েছে বেয়ারা মন। কোনভাবেই একবিন্দু ঠাঁই দাওনি তুমি, ছুঁড়ে ফেলেছো চিলেকোঠার বাইরে। আমার মন ছুঁয়ে এসেছে গরীব কাঙাল, রাস্তার টোকাইকেও ছুঁয়ে এসেছে বারংবার, তবু তোমার কংক্রিট মন স্পর্শ করতে পারেনি কখনো। তোমার মন স্পর্শ করছে অবাধ্য বিলাসিতার আস্তরণ আর অসহ্য যান্ত্রিকতা।




নিয়তিবাদ

মো. জাহিদ মিয়া


সমুদ্র ডাকে না । আমি ডাকি অহর্নিশ।  সহজ ধাঁধায় পায়ে আঁকি ঝর্ণার প্রতিচ্ছবি। নদী গড়াবে নারীর যোনিগৃহে; স্বাভাবিক। পুরুষ দেবতাদের আধিপত্যেই ভিজে উঠবে ক্লেদার্ক্ত নজিরার কালো চোখ।

পৃথিবীর পাখিরা ঠোঁটের নৈপুণ্যে খোঁজবে খড়; এটা অনিয়তিবাদী কাঠামো। জীবনের স্বার্থে পিঁপড়ের সমরনীতি আর বৃষ্টির গতানুগতিক পয়ারেই প্রতিষ্ঠা পায় কৃষকের স্বপ্ন ও গতিপথ।

নিয়তির কপোলে জুতা সেলাই- ব্যর্থতারই চক্রান্ত। সময়কে ডেকোনা- সে আপন গতিতেই বহমান। চাঁদের কলংক খোঁজা মানে নিজেকেই শিকোয় ঝুলিয়ে রাখা; আঘাট ঘাট হয়ে উঠার গল্পই বিরল।

নিয়তি কখনো ঝরে না। আমরা ঝরায় বলেই সে প্রাসঙ্গিক। ধৃষ্টতার যেমন নিজস্ব আড়ৎ নেই

তেমনি মাছবাজারে পান বিক্রির ছুতা এক গাছের বাঁকল অন্য গাছে লাগানোর মতোই পেরেশানি।


আমরা নিয়তির ঈশ্বরকে ডেকে কাইল। গাঙ্গের মরা কোডাদা ট্যাইনা আনি মহাসড়কের পৈঠায়।




নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে

ইসলাম সাইফুল


তোমার আকাশ কতটুকু সুউচ্চ

দেখিতে আমি সিঁড়ি হতে চাই

আকাশের শরীরে যতো রং

মন চায় মায়াবী চোখে রংয়ের ধরণের গণিত শিখি

রং কেলিতে ছোপচুপে নিজেকে ভিজাই

ডায়েরির পাতায় পাতায় শুধুই তোমার ইতিহাস লিখি

তোমার চোখের পাতায় সৌন্দর্য অপলক দেখি

তোমার লিপস্টিক ঠোঁটের বাহার ছবি আঁকি

তোমার মধুময় কন্ঠধ্বনি শুনি বারবার

জ্ঞানের গভীরতায় ডুব দিয়ে ভিজি বার বার কিছু শিখি

সুবাস নিই নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে হাতে জুঁই।




নক্ষত্রের গোপন অভিমানপত্র 

অনিন্দিতা মিত্র    

                                                    

রাতের আকাশ থেকে ঝাঁক ঝাঁক নক্ষত্রের অভিমান ফিরে আসে মাটিদেশে, কালপুরুষের সুডৌল গ্রীবায় স্মৃতির আদিম ক্ষত। তোমার চোখের তারার মাঝে বিষাদের নির্মল অশ্রুবিন্দু। তুমি ঠিক জলভেজা সাঁঝবাতির মতো ! ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছড়িয়ে দাও কামরঙা রঙের মৃদু আলো। বনভূমির নির্জন প্রান্তরে ভিজতে থাকে স্মৃতির অভিমানপত্র।                     

২ 

শ্রাবণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ খেলা চলে তোমার শরীর জুড়ে, জল নূপুরের শব্দ বাজিয়ে এগিয়ে আসে শরতের মেঘ, তোমার দুচোখে শিশির ধোয়া আকুতি, ভালোবাসা আড়াল খোঁজে। মৃত জোনাকি মরে গিয়েও আলো দেয়, একার ভেতর একা হতে হতে পুড়তে থাকি আমি।  




আলোক বর্ষ দূরত্ব

জাহিদ আজিম


হৃদয়-বাঁধনটা ছিড়ে যেথায় আজ তোমার অবস্থান

সেটা তোমার জন্য স্বপ্নে স্বপ্নে ছাওয়া এক সুখ-নীড়,

ভালোবাসার সুবাস মেলে কতো ফুল’ই হেথায় ফোটে

সকাল-সাঝে মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির গানের ভীড়।


আজ তুমি যে অন্য কারো জীবন জুড়ে নব-নক্ষত্র

যেমন চেয়েছিলে ঠিক তেমনি সে প্রতিদিন সাজায়,

তুমি তো আলোড়িত হও নিশিদিন আনন্দ-হিল্লোলে

ঝর্ণার ঝিরিঝিরি গান, দক্ষিণা বাতাস শিস বাজায়।


আজ আমি তোমার হতে এক আলোক বর্ষ দুরত্বে

ছায়া পথে চলতে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বরেই ডুবি বার বার,

সুখ তারাটা এখান থেকে বড় ঝাপসাই যেনো লাগে

কল্প-জোনাকটার সাধ্য কি আছে তোমাকে ছোবার?



ঘুমের ঘোরে 

আতিক এ রহিম 


আশ্বিনের শেষ বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছিল 

তন্দ্রা আসে আমার চোখে 

শরতের উচ্ছলতা প্রাণের স্পন্দন লাগে আমার নাকে মুখে 

আমি বিভোর ঘুম কাতুরে হয়ে ডুবে আছি আকণ্ঠ পর্যন্ত

তুমি এলে আমার কাছে  শিউলি ফুলের কাছ ধরে আমার শিয়রে।

আমিতো অপেক্ষায় আছি বহুদিন ধরে তোমার জন্য 

প্রথম দেখা হয়ছিল যেমন আকুতি ভরা বোবা কান্নায়

কাউকে বুঝতে দেইনি না আমি, না তুমি 

ভালোবাসার রূপ কী এমনই সুখ, দুঃখ সংমিশ্রণে দলিতমথিত! 

দেখ আশ্বিনের মধু পূর্ণিমা রাত অথচ; জৌলুস হিন পৃথিবীর মানুষেররা গভীর ঘুমে নিমগ্ন 

তুমিবিনে আমার আজও রাতের চাঁদ, জোসনা, ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনে শুনে অশ্রু পতিত হচ্ছে 

এর নাম কী তুমি বলতে পার? 

আমি বলি এর নাম প্রেম, ভালবাসা, বিচ্ছেদ, বির্সজন না ঘুমের ঘোরে বসবাস।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট